খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) গবেষণা কাজ বেগবান করতে ও শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবনী কাজে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে নীতিমালা গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এখন থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি পর্যায়ে অধ্যয়নরত গবেষক শিক্ষার্থীরা মাসিক ভাতা পাবেন। এই নতুন নীতিমালাটি ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে কার্যকর হবে বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবনী কেন্দ্রের পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কাজী দিদারুল ইসলাম এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের গবেষণায় আগ্রহ বৃদ্ধি এবং তাদের উদ্ভাবনী কাজকে অনুপ্রাণিত করতেই এই অনুদান প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি শক্তিশালী গবেষণা পরিবেশ তৈরি হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবনী কেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নীতিমালার আওতায় প্রতিটি ডিসিপ্লিন (বিভাগ) থেকে স্নাতক পর্যায়ের ৫ জন এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ৩ জন শিক্ষার্থীকে এই ভাতার আওয়াতাভুক্ত করা হবে। স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের মাসিক ৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। এমফিল এবং পিএইচডি পর্যায়ে মোট ২০ জন শিক্ষার্থী মাসিক যথাক্রমে ৮ হাজার ও ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ১২ মাস, এমফিল গবেষকরা ২৪ মাস এবং পিএইচডি গবেষকরা ৪৮ মাস পর্যন্ত এই অনুদানের আওতায় থাকবেন।
উদ্যোগটি বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিক বাজেট হিসেবে ১ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং ৯১ লক্ষ টাকার বিশেষ বাজেট ধরা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শুধু মাসিক ভাতা দিয়েই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান তুলে ধরতে আরও একটি বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উচ্চমানের ‘কিউ ওয়ান এবং কিউ টু-তে’ গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হলে প্রতিটি প্রবন্ধের জন্য এককালীন ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। এটি শুধু প্রবন্ধের প্রথম লেখক বা করসপন্ডিং লেখক প্রাপ্ত হবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন উদ্যোগে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। চতুর্থ বর্ষেরে এক শিক্ষার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। এটি আমাদের মতো তরুণ গবেষকদের জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে। আর্থিক নিশ্চয়তা পেলে আমরা গবেষণায় আরও বেশি মনোযোগ দিতে পারব।
এদিকে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদের গবেষণাকাজের পরিধি বাড়াতেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সচেষ্ট। শিক্ষকদের গবেষণা প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ আগের অর্থবছরের ৫ কোটি থেকে ৫০ লাখ টাকা বৃদ্ধি করে ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হারুনর রশীদ খান কালবেলাকে বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি গবেষণাকেন্দ্রিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা বদ্ধপরিকর। শিক্ষার্থীদের জন্য মাসিক ভাতা এবং শিক্ষকদের গবেষণা অনুদান বৃদ্ধি সে লক্ষ্যেরই একটি অংশ। উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণা প্রকল্প বেশি হওয়ায় তাদের র্যাংকিংয়ে তারা অনেক ওপরে থাকে। আশা করি, এই উদ্যোগের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে আরও এগিয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি ৮১ জন টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট (টিএ) নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ শেষে তারা নিজ নিজ ডিসিপ্লিনে শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষা ও গবেষণার কাজে যুক্ত হয়েছেন।