গরুর হাটে শ্বশুরকে কুপিয়ে হত্যা করল জামাতা 

3 months ago 46

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় গরুর হাটে শ্বশুরকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে জামাতা। এই ঘটনায় পালানোর সময় ঘাতককে ধরে ফেলে স্থানীয় জনতা। 

শুক্রবার (৬ জুন) বিকাল ৫টার দিকে উপজেলার গোডাউন গরুর বাজারে কাপ্তাই সড়কের উপর এই ঘটনা ঘটে। 

খুনের শিকার ওসমান গণি (৫২) উপজেলার শিলক ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড রাজাপাড়া এলাকার লাল মিয়ার ছেলে। অন্যদিকে ঘাতক জামাতা মোহাম্মদ হোসেন (৪০) উপজেলার পূর্ব সরফভাটা ৮নং ওয়ার্ড আজলা বাপের বাড়ির মোহাম্মদ হাশেমের ছেলে। ঘটনার পর থেকে দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা সড়কে পড়ে ছিল নিহতের মরদেহ। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাপ্তাই সড়কের পাশেই পড়ে রয়েছে মরদেহ। স্থানীয়রা মরদেহটি ঘিরে রেখে ছবি উঠাচ্ছেন। অন্যদিকে সিএনজি অটোরিকশা অফিসে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আটক করে রেখেছে ঘাতক জামাইকে। উপস্থিত সবাই এই ঘটনায় হতবাক হয়ে গেছেন। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এলে তারা মরদেহটি উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি মরদেহ থানায় নিয়ে যায়। 

নিহতের ছোট ভাই আবদুর রহিম জানান, শিলক রাবার ড্যাম এলাকায় গরুর খামার রয়েছে নিহত ওসমান গণির। তারা শুক্রবার সকালে তিনটি গরু বিক্রির জন্য গোডাউন বাজারে আনেন। এরমধ্যে দুটি গরু বিক্রি হয়ে যায়। আরেকটা গরু বিক্রির সময় ঘাতক জামাতা এসে প্রকাশ্যে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়। বিকাল ৫টার পর থেকে ৬টা পর্যন্ত মরদেহটি সড়কেই পড়ে ছিল বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। 

ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিলাপ করে কান্না করছিলেন নিহতের মেয়ে রিনা আক্তার (২২)। তিনি জানান, ২০১৯ সালে তাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। সংসারে ৬ ও ৩ বছর বয়সী দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো। নির্যাতন সইতে না পেরে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বরের সে বাপের বাড়ি চলে যায়। এরপর জীবিকার তাগিদে সে ৯ এপ্রিল গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। কোরবানি ছুটিতে বেতন-ভাতা হাতে ঈদ করার জন্য বাড়ি আসার পথে শুনলেন তার জামাইয়ের হাতেই খুন হলো তার বাবা।

জানতে চাইলে বাজারের অন্যতম ইজারাদার মো. লিয়াকত আলীসহ উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সুন্দরভাবেই বাজারের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছিলো। এরমধ্যে হঠাৎ একজন গরু বিক্রি করতে আসা ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা করেছে জামাতা। সে পালানোর সময় ধাওয়া করে সবাই মিলে তাকে ধরে ফেলা হয়। এরপর সিএনজিচালিত অটোরিকশা অফিসে বসালে হত্যাকারী জানায়, শ্বশুরকে মারার জন্য সে সারাদিন ধরে খুঁজছিল। পরে গোডাউন বাজারে এসেছে শুনে দা নিয়ে সেখানে আসে। দেখতে পেয়ে প্রথমে এটি একটি পাকা ওয়ালের সঙ্গে শান দেন। পরে অতর্কিত শ্বশুরকে মাথায় ক্রমাগত আঘাত করে কুপিয়ে হত্যা করে পালানোর চেষ্টা চালায়। 

কেনো হত্যা করেছে জানতে চাইলে সে জানায়, সে দিনমজুরি করে। তুচ্ছ কারণে ঝগড়া করে তার স্ত্রী স্বর্ণ নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায়। যাওয়ার সময় দুই সন্তানের একজনকেও সঙ্গে নিয়ে যায়। এই নিয়ে স্থানীয় মেম্বারদের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চালায়। কিন্তু সমাধান হয়নি। গত বৃহস্পতিবার শ্বশুরবাড়িতে ছেলেকে দেখতে গেলে দেখতে না দিয়ে উল্টো তাকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়া হয়েছে বলে দাবি করে। তাই তাকে মারার আগেই সে নিজে শ্বশুরকে মেরে দিয়েছে বলে জানান। 

তবে এসব কথা সে বানিয়ে বানিয়ে বলছে বলে দাবি করে নিহতের মেয়ে রিনা আক্তার জানান, সে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে প্রকাশ্যে শ্বশুরকে মেরে হত্যা করেছে। তার একটি সন্তান তাদের ঘরে এখনো রয়েছে। তাকে ফের‍ত এনে দেয়ার জন্য আবেদন জানান এবং হত্যাকারী জামাইয়ের ফাঁসির দাবি করেন। 

এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার এসআই সুমন কবির মৃধা জানান, মরদেহটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে। হত্যাকারীকেও আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এই ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Read Entire Article