গাজার ‘সন্তানরা ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে’

3 months ago 41
গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়ায় বসবাসরত মাহমুদ আল-হাও। চার সন্তানের এই বাবা প্রতিদিন ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে খাবারের খোঁজে বের হন। তিনি জানান, কখনও এক প্লেট স্যুপ পান, আবার কখনও খালি হাতে ফিরতে হয়।  তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে অসুস্থ। তার জন্য কিছুই করতে পারছি না। এখানে রুটি নেই, কিছুই নেই।’ মাহমুদ আরও বলেন, ‘গতকাল তো কিছুই ছিল না। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, আজ অন্তত কিছু আছে।’ মাহমুদ বলেন ‘আমাদের সন্তানরা ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে। আমি চাই, সবাই আমাদের পাশে দাঁড়াক।’ গাজার বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজার ৯০% শিশু খাদ্য সংকটে ভুগছে। শিশুরা ঠিকমতো খাবার পাচ্ছে না, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে এবং চিকিৎসা সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। আমাদের সন্তানরা ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে। আমি চাই, সবাই আমাদের পাশে দাঁড়াক। গাজার এই মানবিক সংকটের মধ্যে মাহমুদ আল-হাও-এর মতো অসংখ্য পরিবার আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে প্রতিদিন বেঁচে থাকার সংগ্রাম করছে।  এদিকে ইসরায়েলি অবরোধের মধ্যে গাজায় প্রবেশ করা সামান্য কিছু ত্রাণের ট্রাককে ‘সমুদ্রের এক ফোঁটা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, বর্তমানে যে সহায়তা ঢুকছে তা মোটেও যথেষ্ট নয়। গাজার জন্য নির্ধারিত হাজার হাজার ত্রাণবাহী ট্রাক এখনো মিশরের সীমান্তে আটকে আছে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, লম্বা সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকগুলো গাজার দিকে প্রবেশের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে, কিন্তু ইসরায়েল এখনো অধিকাংশ ত্রাণ সামগ্রীকে ঢুকতে দিচ্ছে না। ইসরায়েল ১১ সপ্তাহের অবরোধ কিছুটা শিথিল করলেও, বাস্তবে এই ত্রাণ প্রবেশে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে অত্যন্ত ধীরগতিতে। ফলে গাজায় থাকা লাখ লাখ মানুষের জন্য অত্যন্ত জরুরি খাদ্য, পানি, ওষুধ এবং জ্বালানি পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, অবরুদ্ধ এই উপত্যকায় বর্তমানে যা ত্রাণ ঢুকছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় ‘সমুদ্রে এক ফোঁটা পানির মতো। এভাবে চলতে থাকলে গাজায় একটি পূর্ণমাত্রার মানবিক বিপর্যয় অনিবার্য। আল জাজিরার সাংবাদিক গ্যাব্রিয়েল এলিজন্ডোর মতে, বর্তমানে দিনে মাত্র ৯০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করছে। অথচ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের আগে ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ৫০০-৬০০টি ট্রাক ঢুকত এই উপত্যকায়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, অক্টোবর ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৫৩ হাজার ৬৫৫ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ২১ হাজার ৯৫০ জন আহত হয়েছেন। তবে গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলছে, ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকা হাজারো মানুষ এখনো নিখোঁজ এবং মৃত হিসেবে ধরা হলে মোট মৃতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে।
Read Entire Article