গুজব ও অপতথ্য মোকাবিলায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে আপন দাসের লেখা বই ‘ফ্যাক্ট চেকিংয়ের প্রথম পাঠ’। ২০২২ সালে প্রকাশিত এই বইটি ২০২৫ সালের অমর একুশে বইমেলায় নতুন সংস্করণে প্রকাশ হয়েছে।
সময় প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ‘ফ্যাক্ট চেকিংয়ের প্রথম পাঠ’ বইটি পাওয়া যাচ্ছে মেলার ২১ নম্বর স্টলে। বইটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২ টাকা।
গুজব নিয়ে ‘ফ্যাক্ট ওয়াচে’কাজ করা লেখক সম্প্রতি তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে লিখেছেন, বইটির নতুন সংস্করণে ফ্যাক্ট চেকিংয়ের সাম্প্রতিকতম পদ্ধতি ও প্রযুক্তি সংযোজন করা হয়েছে। বিশেষ করে ক্রোনোলোকেশন, এআই ও ডিজিটাল ফরেনসিকের জন্য প্রয়োজনীয় টুল ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত চতুর্থ অধ্যায়ে যুক্ত করা হয়েছে।
আপন তার বইটি পাঁচটি অধ্যায়ে বিভক্ত করেছেন। বইয়ের ভূমিকা পড়লে বোঝা যায়, তিনি তার ফ্যাক্টচেকিং পেশার সম্পূর্ণ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েছেন।
গুজব প্রতিরোধে বইটির ভূমিকা
বর্তমান সময়ে গুজব ছড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যেই একটি ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে এবং কখনো কখনো সহিংস পরিস্থিতির জন্ম দেয়। এই বইটি পাঠকদের গুজব শনাক্ত, বিশ্লেষণ ও প্রতিরোধের কার্যকর পদ্ধতি শেখাবে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কিছু আলোচিত গুজব যেমন রামু, নাসিরনগর, রংপুরের ঠাকুরপাড়া, ভোলার বোরহানউদ্দিনে সহিংসতা, ছেলেধরা গুজব, নকল ডিম কেলেঙ্কারি ইত্যাদি প্রতিরোধে তথ্য যাচাইয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। বইটিতে এসব ঘটনার বিশ্লেষণসহ গুজব প্রতিরোধে ফ্যাক্ট চেকিংয়ের ভূমিকা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের গুরুত্ব
সাংবাদিকতা পেশায় ফ্যাক্ট চেকিং নতুন কিছু নয়, বরং এটি সংবাদ যাচাইয়ের একটি পুরোনো চর্চা। তবে সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তথ্যপ্রবাহ বৃদ্ধির ফলে ফ্যাক্ট চেকিং এখন শুধু সাংবাদিকদের জন্য নয়, বরং সকল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর জন্যই প্রয়োজনীয়।
বইটির বৈশিষ্ট্য
‘ফ্যাক্ট চেকিংয়ের প্রথম পাঠ’বইয়ে তথ্য যাচাইয়ের বিভিন্ন পদ্ধতি ও কলাকৌশল স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। বইটি পড়লে পাঠক ভুল তথ্য, অপতথ্য, ক্ষতিকর তথ্য, ফেক নিউজ, বিকৃত তথ্য, বিভ্রান্তিকর তথ্য, ব্যঙ্গধর্মী তথ্য এবং অপ্রমাণিত তথ্য চিহ্নিত করার উপায় জানতে পারবেন। বিশেষ করে ব্রেকিং নিউজ, চাকরির বিজ্ঞাপন, ধর্মীয় অনুভূতিসংক্রান্ত তথ্য, রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব যাচাইয়ের জন্য বইটি গুরুত্বপূর্ণ।
সাংবাদিকদের জন্য অপরিহার্য বই
সংবাদকর্মীদের জন্য ফ্যাক্ট চেকিং দক্ষতা অত্যন্ত জরুরি। ভুল তথ্যভিত্তিক সংবাদ পরিবেশন এড়াতে এবং নির্ভরযোগ্য সাংবাদিকতা চর্চার জন্য এই বইটি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
‘ফ্যাক্ট চেকিংয়ের প্রথম পাঠ’বইয়ের শেষ অধ্যায়ে ফ্যাক্ট চেকিং করতে মৌলিক দুটি প্রশ্নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এক তথ্যটি কি গুরুত্বপূর্ণ? দুই তথ্যটি কি যাচাইযোগ্য? এছাড়াও রিভার্স ইমেজ সার্চ, সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং, তথ্যের ক্রস-চেকিং পদ্ধতি ইত্যাদির ব্যবহার নিয়েও বইটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ফ্যাক্ট চেকিংয়ের অর্থনীতি ও প্রভাব
‘ফ্যাক্ট চেকিংয়ের প্রথম পাঠ’বইটিতে ‘গুজবের অর্থনীতি’ বিষয়ক একটি চমৎকার অধ্যায় রয়েছে, যেখানে অ্যাটেনশন ইকোনমি, ক্লিকবেইট সাংবাদিকতা, ইউটিউব-ফেসবুকের ভুয়া তথ্য প্রচারের কৌশল ইত্যাদি সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
ফ্যাক্টচেক যেহেতু তথ্য যাচাইয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই এই বইয়ে দেওয়া তথ্যও যাচাই করে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে তথ্যসূত্র যুক্ত থাকাই তার প্রমাণ। নন-ফিকশন বইয়ের ক্ষেত্রে এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদাহরণ।
সাধারণ পাঠকের জন্যও বইটি অত্যন্ত সহায়ক। সোশ্যাল মিডিয়ায় তথ্য যাচাইয়ের পদ্ধতি জানার মাধ্যমে নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষা করা, গুজব থেকে মুক্ত থাকা এবং দায়িত্বশীল ডিজিটাল নাগরিক হওয়ার পথ দেখাবে এই বই।
‘ফ্যাক্ট চেকিংয়ের প্রথম পাঠ’ বইটি সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, গবেষক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীসহ সকলের জন্য উপকারী। ভুল তথ্যের জাল ছিন্ন করতে এবং সমাজে সঠিক তথ্য প্রচার নিশ্চিত করতে এই বইটি একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন।