দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আরামিট পিএলসির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে আটক করেছে। আটক ব্যক্তির নাম জাহাঙ্গীর আলম। তিনি প্রতিষ্ঠানটির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নগরের চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকায় আরামিট গ্রুপের অফিস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসেন কালবেলাকে বলেন, সাইফুজ্জামানের স্বাক্ষরিত চেকগুলোর মূল কপিসহ জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান মালিকের অনুপস্থিতিতে অনুমতি ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে ইসলামী ব্যাংকের একাধিক শাখা থেকে ১ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক থেকে ৩০ লাখ, সোনালী ব্যাংক থেকে ৩৬ লাখ এবং মেঘনা ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়।
জাহাঙ্গীর আলম দাবি করেছেন, এই অর্থ ব্যবহার করা হয়েছে একই প্রতিষ্ঠানের আরেক দল কর্মকর্তা— মো. আবদুল আজিজ ও উৎপল পালের আইনি লড়াইয়ের খরচ বহনের জন্য। তবে দুদক সংশয় প্রকাশ করেছে যে, এই উত্তোলনের সঙ্গে অর্থ আত্মসাৎ বা পাচারের কোনো যোগসূত্র থাকতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জুলাই দুদক সাইফুজ্জামান চৌধুরী, তার পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের ৩১ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ২৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলমসহ আবদুল আজিজ ও উৎপল পাল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর দুদক তাদের গ্রেপ্তার করে এবং তারা স্বীকার করেন যে, সাইফুজ্জামানের নির্দেশে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে কোটি কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়েছে।
তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইউসিবিএল ব্যাংক থেকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর হওয়ার পর তা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন হিসাব নম্বরে স্থানান্তরিত হয় এবং পরে বিদেশে পাঠানো হয়। এ জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাৎ ২০১৯-২০ সালে ঘটে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর আদালত জাহাঙ্গীর আলমের বস, সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদ ও তার স্ত্রীকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। এরপরও তারা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।
দুদকের তথ্য অনুযায়ী, জাবেদের বিদেশে ব্যাপক সম্পদ রয়েছে। যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, দুবাইতে ২২৮টি এবং আমেরিকায় ১০টি বাড়িসহ বিভিন্ন দেশে তাদের সম্পত্তি রয়েছে।
দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের ভেতর থেকে ব্যাংকের অর্থ উত্তোলন করে বিদেশে পাঠিয়ে জাবেদ ও তার পরিবার বহু দেশে প্রচুর সম্পদের মালিক হয়েছেন।