বিশ্ববিখ্যাত স্প্যানিশ অভিনেতা হাভিয়ের বারদেম ইসরায়েলি চলচ্চিত্র সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চলমান বয়কট আন্দোলনের পক্ষে সরব হয়েছেন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, এই বয়কট কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। বরং বিশ্বের বিভিন্ন কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানকে তাদের ভূমিকার জন্য জবাবদিহির আওতায় আনাার জন্যই প্রতিবাদ। এটি মানুষ হিসেবে আমাদের কর্তব্য।
এক বিবৃতিতে বারদেম বলেন, ‘আমরা কখনোই কোনো ব্যক্তিকে তার জাতীয়তা, বর্ণ, ধর্ম বা লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য করি না। বৈষম্য অন্যায়, এ বিশ্বাসে আমরা অটল। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। আমরা ব্যক্তি নয়, বরং সেইসব কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করতে চাই যারা গাজায় ফিলিস্তিনি গণহত্যা এবং পশ্চিম তীরে অবৈধ দখলদারির সঙ্গে জড়িত।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো বিশ্বজুড়ে জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো, কোনো গোষ্ঠী বা ধর্মের বিরুদ্ধে নয়।’
চলতি সেপ্টেম্বরের শুরুতে ‘ফিল্ম ওয়ার্কার্স ফর প্যালেস্টাইন’ নামের এক অঙ্গীকারপত্রে প্রায় ৩,৯০০ জন চলচ্চিত্রকর্মী স্বাক্ষর করেন। তারা ঘোষণা দেন, গণহত্যা ও বর্ণবৈষম্যে জড়িত এমন ইসরায়েলি চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানিগুলোর সঙ্গে কোনো কাজ করবেন না।
এই তালিকায় রয়েছেন অসংখ্য আন্তর্জাতিক তারকা। যেমন- ইয়র্গোস লানথিমোস, আভা ডুভারনে, অ্যাডাম ম্যাককে, এমা স্টোন, অলিভিয়া কোলম্যান, মার্ক রাফালো, রিজ আহমেদ, জোয়াকিন ফিনিক্স, অ্যান্ড্রু গারফিল্ড, নোইকোলা কফলান, গায় পিয়ার্স, জোনাথন গ্লেজার, এলিয়ট পেজসহ আরও অনেকে।
বয়কট ঘোষণার পর যুক্তরাজ্যের ‘ল’ইয়ার্স ফর ইসরায়েল’ সংগঠন নেটফ্লিক্স, ডিজনি, অ্যামাজন স্টুডিও, অ্যাপল ও ওয়ার্নার ব্রাদার্সসহ কয়েকটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠিয়ে সতর্ক করেছে। তাদের দাবি, এই বয়কট যুক্তরাজ্যের সমতা আইন ২০১০-এর পরিপন্থী এবং এতে অর্থায়ন ও বিমা জটিলতা দেখা দিতে পারে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘যদি ব্রিটিশ চলচ্চিত্র শিল্প এই বয়কটে যুক্ত হয় তবে তা বর্ণ বা ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্যের শামিল হবে। এটি বিপজ্জনক নজির তৈরি করবে।’
এ বিষয়ে বিখ্যাত প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্নার ব্রাদার্স জানায়, তারা বয়কটের বিরোধী। তাদের ভাষ্য, ‘আমরা এমন কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নেব না যা বৈষম্য হিসেবে গণ্য হয়। আমাদের নীতি অনুযায়ী, জাতি, ধর্ম বা জন্মভূমির ভিত্তিতে বৈষম্য করা নিষিদ্ধ। আমরা সবাইকে সম্মান করি, কিন্তু আমাদের ব্যবসা অবশ্যই আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।’
তবে এসব বক্তব্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে এমি অ্যাওয়ার্ডের লাল গালিচায় বারদেম বলেন, ‘আমি আজ এখানে দাঁড়িয়ে গাজার গণহত্যার বিরুদ্ধে কথা বলছি। আন্তর্জাতিক গণহত্যা গবেষক সংঘ (IAGS) ইতিমধ্যে একে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই আমরা বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিকভাবে ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দাবি করছি। মুক্ত হোক ফিলিস্তিন।’
বারদেম এর আগেও গাজায় হামলার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এমন এক পৃথিবী চাই যেখানে শিল্প, ন্যায়বিচার ও মানবতা একসঙ্গে বেঁচে থাকতে পারে। নীরব থাকা মানে অপরাধে অংশ নেওয়া।’
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হলো চলচ্চিত্র জগতের বড় অংশ ফিলিস্তিনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ক্রমেই আরও সরব হচ্ছে। সত্যি কথা বলতে, এই আন্দোলন থেমে নেই কোনো সীমান্তেই।
এলআইএ/জিকেএস