চলতি বছরের প্রথম দশ মাসে নিহত শিশু ৪৮২

2 days ago 5

চলতি বছরের  প্রথম দশ মাসে নিহত শিশুর সংখ্যা ৪৮২ জন। ২০২৩ সালের প্রথম দশ মাসে যা ছিল ৪২১ জন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে মারা গেছে ১২১ জন শিশু।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) চাইল্ড রাইটস কোয়ালিশন বাংলাদেশ কর্তৃক জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের শিশু অধিকার রক্ষায় অগ্রগতি, প্রত্যাশা ও প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক  সাংবাদিকদের সঙ্গে সংলাপে  আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

আসক- এর প্রকল্প কর্মকর্তা শান্তা ইসলাম মূল উপস্থাপনায় দেশের বহুল প্রচলিত ১০টি দৈনিক পত্রিকা ও গ্রহণযোগ্য অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এবং কিছুক্ষেত্রে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)- এর নিজস্ব সূত্র মতে প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে ২০২৪ সালের প্রথম দশ মাসের (জানুয়ারি- অক্টোবর) শিশুর প্রতি সহিংসতার তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রাপ্ত উপাত্ত বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণ করে তুলে ধরেন।

উপস্থাপনায় দেখা যায়, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব মতে, এ সময়কালে শারীরিক নির্যাতনের কারণে মৃত্যু, সহিংসতার কারণে মৃত্যু, ধর্ষণের পরে হত্যা, ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হত্যা, অপহরণ ও নিখোঁজের পর হত্যাসহ বিভিন্ন কারণে নিহত হয় মোট ৪৮২ জন শিশু। ধর্ষণের শিকার হয় ২১৭ জন শিশু, ১৫ শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়, ধর্ষণ চেষ্টার শিকার ৬১ ও যৌন হয়রানির শিকার হয় ৩৪ জন শিশু।

যার মধ্যে শিক্ষক দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৮৫ জন এবং বলাৎকারের শিকার হয়েছে ৩২ ছেলে শিশু। শিক্ষক কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৯ জন শিশু।

বক্তারা বলেন, সামাজিক রূপান্তর ও তথ্যপ্রযুক্তিগত পরিবর্তনের কারণে শিশু অধিকার পরিস্থিতিতে নানা নতুন  ও জটিল দিক যোগ হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে সমস্যাগুলো যথাযথভাবে চিহ্নিত করা এবং সমাধানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে অভিভাবক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, শিশু অধিকারভিত্তিক সংগঠন, রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষসহ সমাজের সব পর্যায়ের অংশীজনদের সচেতন হতে হবে।

বিদ্যমান নীতি-আইন-ব্যবস্থাপনা পর্যালোচনা করে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায় আধুনিক বাস্তবতায় শিশু-কিশোররা আরও বেশি ঝুঁকির সম্মুখীন হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন উদ্যোগের সমন্বয় সাধন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদানের জন্য শিশুদের জন্য একটি পৃথক অধিদপ্তর গঠন জরুরি।

এ কোয়ালিশন সচিবালয় হিসেবে  নিয়মিতভাবে শিশু অধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং এ-সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্তসমূহ সংরক্ষণ করছে। এ ছাড়া কোয়ালিশন নিয়মিতভাবে শিশু অধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ও বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করে এবং নিয়মিত প্রতিবেদন তৈরি করে। এরই ধারাবহিকতায় সাংবাদিকদের সঙ্গে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়।

ওই সংলাপে কোয়ালিশন সদস্য ও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা শিশু অধিকার পরিস্থিতি, অগ্রগতি, প্রত্যাশা ও বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা এবং সেসকল প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূরীকরণে করণীয়সমূহ নিয়ে আলোচনা করেন।

ওই সংলাপে সভাপতিত্ব করেন টেরে ডেস হোমস নেদারল্যান্ডসের কান্ট্রি ডিরেক্টর মাহমুদুল কবির। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের মো. হানিফ, শাপলা নীড়ের সমন্বয়ক মাহফুজা পারভীনসহ কোয়ালিশনের অন্যান্য সদস্য এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা এতে অংশ নেয় ।

মূল প্রতিবেদন উপস্থাপনা করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রকল্প কর্মকর্তা শান্তা ইসলাম। সংলাপে আরও বক্তব্য দেন  এডুকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন-এডুকোর চাইল্ড রাইটস অ্যান্ড প্রোটেকশনের স্পেশালিস্ট মো. শহিদুল ইসলাম এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) স্পেশালিস্ট তামান্না হক রীতি, টেরে ডেস হোমস নেদারল্যান্ডস কান্ট্রি ডিরেক্টর মাহমুদুল কবির  এই সংলাপে সভাপতিত্ব করেন।

মাহমুদুল কবির বলেন, শিশুর প্রতি সহিংসতার পরিসংখ্যান ও পর্যলোচনার প্রেক্ষিতে কোয়ালিশন সরকারের কাছে কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারশি প্রস্তাব করেছে। 
তিনি শিশুদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। এ ছাড়া শিশু কল্যাণ বোর্ডগুলোকে আরও সক্রিয় করার ওপর জোর দেন।
 
তামান্না হক রীতি বলেন, শিশুরা আমাদের সমাজে অন্যতম অবহেলিত গোষ্ঠী। তারা আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের কর্ণধার হলেও এই শিশুদের অধিকার রক্ষায় আমরা পর্যাপ্ত পদক্ষেপ দেখতে পাই না কিংবা যেসব পদক্ষেপ রয়েছে তারও বাস্তবায়ন দেখা যায় না। বর্তমানে নানা ধরণের সংস্কার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আমরা মনে করি, শিশুদের অধিকার রক্ষায়ও এইরকম পদক্ষেপ দরকার যেখানে শিশু অধিকার রক্ষায় বিদ্যমান ব্যবস্থার দুর্বলতা গুলো খতিয়ে দেখা প্রয়োজন, শিশুদের মতামত নিয়ে বিভিন্ন অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা দরকার। এর মাধ্যমে আমরা শিশুদের জন্য একটি শিশুবান্ধব সমাজ গড়ে তুলতে পারব বলে আমরা মনে করি। পাশাপাশি তিনি শিশু অধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে একটি কার্যকর কমিটি বা কমিশন গঠনের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

এ ছাড়া মো. শহিদুল ইসলাম শিশুদের জন্য পৃথক অধিদপ্তর, অনলাইনে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, গৃহকর্মীদের সুরক্ষার জন্য সুনির্দিষ্ট ডাটাবেজ তৈরি এবং শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত খেলার স্থানের গুরুত্ব তুলে ধরে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
 
সাংবাদিকদের সঙ্গে উন্মুক্ত আলোচনায় প্রকৃত শিশু অধিকার পরিস্থিতির চিত্র পেতে ইউনিয়ন পর্যায়ে ডাটা সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া আবশ্যক বলে অংশগ্রহণকারীরা মতপ্রকাশ করেন।  সীমান্তে শিশু হত্যা, কিশোর গ্যাং, পথশিশু পুনর্বাসন ইত্যাদি বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। শিশুর বয়স সুনির্দিষ্ট করতে প্রাসঙ্গিক আইনগুলো সংশোধন করা, শিশু বাজেট পুনরায় প্রচলন এবং বাজেটের যথাযথ ব্যবহারের ওপরও জোর দেওয়া হয়। এ ছাড়া কোয়ালিশনের পক্ষ থেকে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ ও পুর্নবাসন নিশ্চিতেরও দাবি তোলা হয় এ সংলাপ থেকে।

সর্বোপরি সকল অংশীজনদের সচেতনতা, পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ ও এর যথাযথ ব্যবহার, আইনের যথাযথ প্রয়োগ, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সঠিক সমন্বয়ন, নিয়মিত পরীবিক্ষন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে একটি শিশুবান্ধব বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব বলে বক্তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।

Read Entire Article