ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তৎকালীন কমিশনার হাবিবুর রহমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হিসেবে দেওয়া জবানবন্দিতে এমনটাই জানিয়েছেন সংস্থার ওয়ারলেস অপারেটর কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আন্দোলনকারীদের দমনে সর্বোচ্চ বল প্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাবিবুর।
আন্দোলন দমনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলায় মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১-এ জবানবন্দি দেন পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) কামরুল। তিনি ডিএমপির ক্রাইম অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের ওয়ারলেস অপারেটর হিসেবে কর্মকর্তা এবং মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের ৫০তম সাক্ষী। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ জবানবন্দি নেওয়া হয়।
মামলার অপর আসামিরা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক প্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। মামুন এরইমধ্যে রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।
কামরুল জবানবন্দিতে জানান, তিনি গত বছরের ১৭ জুলাই ৯টা থেকে ২টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে ওই দিন ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে ডিএমপির কমিশনার সর্বোচ্চ বল প্রয়োগের নির্দেশ দেন। চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার নির্দেশ দেন। তখন বার্তাবাহক হিসেবে কামরুল ও তার দল সংশ্লিষ্ট সব ইউনিটিতে তা পৌঁছে দেন।
আরও পড়ুন
নিহত সৈকতের বাবাকে একজনের ফোন, ‘দ্রুত আসেন, না হলে লাশও পাবেন না’
ছাত্র-জনতার ওপর হেলিকপ্টার থেকে বোমা নিক্ষেপের নির্দেশ দেন হাসিনা
আবু সাঈদকে বাঁচাতে গিয়ে বাম পাশের পুরো শরীরে গুলিবিদ্ধ হই
পরে ট্রাইব্যুনালে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুরের ওয়ারলেস বার্তার অডিও উপস্থাপন করা হয়। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘জানমাল রক্ষায় সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন। আমি আপনাদের স্বাধীনতা দিয়েছি। পরিস্থিতি বুঝে সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। হাঁটু গেড়ে বসে গুলি করবেন।’
জবানবন্দি শেষ হলে সাক্ষী কামরুলকে জেরা করেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। এ সময় হাবিবুরের জানমাল রক্ষায় হাঁটু গেড়ে বসে গুলি করতে বলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখেন, এটা মামলার আর্গুমেন্ট করার জায়গা। গত বছরের ১৭ জুলাই সরকারি ছুটি ছিল। আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি ছিল না। (তারপরও) কেন জনগণের ওপর গুলি করার নির্দেশ দেবেন? সেদিন এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যাতে গুলি করতে হবে। তাই কোমড়ের নিচে না ওপরে, সেটা অবান্তর।’
সাক্ষীর উল্লেখ করা চাইনিজ রাইফেলের বিষয়টি উপস্থাপিত অডিওতে না থাকা প্রসঙ্গে প্রসিকিউটর জানান, চাইনিজ রাইফেলের কথাটা উনি বলেছেন বা বলেননি, এটা যুক্তিতর্কের বিষয়। উনি বক্তব্য দিয়েছেন। তারা যখন যুক্তিতর্কে যাবেন তখন বিষয়টা মোকাবিলা করবেন।
এফএইচ/একিউএফ/এমএস