সম্প্রতি সুচিকিৎসার দাবিতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পঙ্গু হাসপাতাল এবং জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সামনের রাস্তায় নেমে এসে আহত মানুষদের বিক্ষোভ করার যে ঘটনাটি ঘটলো, তাতে কয়েকটি প্রশ্ন সামনে আসছে:
১. বাংলাদেশের সংবিধানে চিকিৎসা কি নাগরিকের মৌলিক অধিকার?
২. যদি মৌলিক অধিকার হয়ে থাকে তাহলে সেটি পাওয়ার জন্য একজন অসুস্থ মানুষকে কেন রাস্তায় নামতে হবে?
৩. রাষ্ট্র কি নাগরিকের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বাধ্য?
৪. যদি কোনো নাগরিক সুচিকিৎসা পেতে ব্যর্থ হয় বা চিকিৎসার অভাবে তার জীবন বিপন্ন হয়, তাহলে সে কার কাছে এর প্রতিকার চাইবে, উচ্চ আদালতে?
৫. যেহেতু বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি হচ্ছে ‘সমাজতন্ত্র’ এবং একটি সাম্য ও সামাজিক সুবিচারভিত্তিক সমাজ গঠনই যার লক্ষ্য—সেই দেশে কি স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও এমন একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা গেছে, যেখানে সমাজের একজন প্রান্তিক মানুষও আহত হয়ে কিংবা অসুখে আক্রান্ত হয়ে অন্তত সরকারি হাসপাতালে গিয়ে বিনা হয়রানিতে উপযুক্ত চিকিৎসা পাবে? রাষ্ট্রের একজন বেকার মানুষও হাসপাতালে গিয়ে তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিনামূল্যে অথবা ন্যূনতম মূল্যে করাতে পারবেন? হাসপাতালে একটি বিছানা পাবেন? তার ন্যূনতম ওষুধগুলো পাবেন?
একটি কল্যাণরাষ্ট্রের ধারণায় এই প্রশ্নগুলো যৌক্তিক এবং সত্যিই সেখানে নাগরিকের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো অধিকারগুলো সেসব দেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবেই স্বীকৃত। কিন্তু ‘মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা’ শিরোনামে বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদে অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করাকে ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব’ হিসেবে স্বীকার করা হলেও এগুলোকে ‘মৌলিক অধিকার’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি।
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও কেন সুচিকিৎসার দাবিতে একজন আহত মানুষকে, একজন মুমূর্ষু রোগীকে শরীরে ব্যান্ডেজ নিয়ে কিংবা হুইল চেয়ারে বসে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে হবে? তাহলে ৫৩ বছরে রাষ্ট্রের কী অর্জন? শুধু উঁচু উঁচু ভবন, ফোর লেন সড়ক, এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, প্রমত্তা পদ্মার ওপরে সেতু—এগুলোই উন্নয়ন? অভ্যুত্থানে আহত হয়ে কিংবা রোগশোকে জর্জরিত একজন মানুষ যে রাস্তায় নেমে সুচিকিৎসার দাবিতে স্লোগান দিচ্ছে—তা কি উন্নয়নের ওই প্রতীকগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে না?
বরং সংবিধানের তৃতীয় ভাগে নাগরিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে যেসব অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে আইনের দৃষ্টিতে সমতা, ধর্ম পালনের অধিকার, নারীপুরুষের সমান অধিকার, সরকারি নিয়োগ-লাভে সুযোগের সমতা, আইনের আশ্রয়-লাভের অধিকার, চলাফেরার স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক্-স্বাধীনতা, পেশা বা বৃত্তির স্বাধীনতা ইত্যাদি।
যেহেতু সংবিধান এই অধিকারগুলোকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকার করেছে, ফলে কোনো নাগরিক যদি মনে করেন যে এর কোনো একটি বা একাধিক অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে কিংবা রাষ্ট্রের একজন নাগরিক যদি আরেকজনের কথা বলায়, চলাচলে, ধর্ম পালনে কিংবা আইনের আশ্রয় লাভের ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি করেন, তাহলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি উচ্চ আদালতে এর প্রতিকার চাইতে পারেন। মানে নালিশ করতে পারেন।
এমনকি খোদ রাষ্ট্র নিজেও যদি যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ ছাড়া কোনো নাগরিককে তার এইসব মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তাহলে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করা যায়। ব্যতিক্রম হলো, রাষ্ট্রে জরুরি অবস্থা জারি হলে ওই সময়ে মৌলিক অধিকারগুলো স্থগিত হয়ে যায়। অর্থাৎ এই সময়কালে রাষ্ট্র যদি কোনো নাগরিকের চলাচলে, সমাবেশে, তার সংগঠন তথা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে এমনকি তার বাকস্বাধীনতাও নিয়ন্ত্রণ করে, তার বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়া যায় না।
বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধান যেহেতু অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করাকে রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে ঘোষণা করলেও এগুলোকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি, ফলে কোনো নাগরিক যদি চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, আইনত তার পক্ষে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া কঠিন।
মৌলিক অধিকার কী?
এবার আসা যাক মৌলিক অধিকার বলতে কী বুঝায় এবং মানবাধিকারের সঙ্গে তার পার্থক্য কী?
মৌলিক অধিকার প্রধানত একটি দেশের নাগরিকের জন্যই প্রযোজ্য। কিছু মৌলিক অধিকার যেমন শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য, তেমনি ওই দেশে অবস্থানরত বিদেশিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হতে পারে।
মৌলিক অধিকার প্রকৃতিগতভাবে বাধ্যতামূলক (Mandatory) যা আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য এবং এগুলোর লংঘনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র প্রতিকার দিতে বাধ্য।
সাধারণভাবে বলা যায়, যে সমস্ত অধিকার মানুষের প্রকৃতিতে সহজাত ও অহস্তান্তরযোগ্য, যেগুলো পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য জাতি-ধর্ম-বর্ণ- গোত্র-নারী-পুরুষ, রাজনৈতিক বা অন্যান্য অভিমত ইত্যাদি নির্বিশেষে সমভাবে প্রযোজ্য ও উপভোগ্য (equally applicable to and enjoyable by), যেগুলো মানুষের ব্যক্তিত্ব ও মনুষত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য এবং যেগুলো ছাড়া মানুষ ‘মানুষ’ হিসেবে বেচে থাকতে পারে না, সেগুলো হচ্ছে মানবাধিকার। অতএব বাংলাদেশে যেটি মানবাধিকার, যুক্তরাষ্ট্র ও আফ্রিকায়ও সেটি মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু সব মানবাধিকারই মৌলিক অধিকার নয়। আবার সব দেশের সংবিধান সব অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করেনি। অনেক মানবাধিকারই সংবিধানপ্রদত্ত মৌলিক অধিকার নাও হতে পারে। যেমন বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদে চলাচলের স্বাধীনতা এবং ৩৭ অনুচ্ছেদে সমাবেশের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কিউবা বা চীনের মতো সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এগুলো মৌলিক অধিকার হিসেবে চিহ্নিত নাও হতে পারে। অর্থাৎ কোন দেশের সংবিধানে কোন কোন অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করা হবে সেটি নির্ভর করে ওই দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতাও ওপর।
যেমন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা—এগুলো সর্বজনীন মানবাধিকার। কিন্তু পৃথিবীর সব দেশের সংবিধানে এগুলো মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত নয়। অর্থাৎ নাগরিকরা যদি এই অধিকারগুলোর কোনো একটি বা একাধিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে সে আদালতে নালিশ জানাতে পারবে না।
অর্থাৎ মৌলিক অধিকার হচ্ছে এমন কিছু মানবাধিকার যা সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয় এবং সাংবিধানিক নিশ্চয়তা দ্বারা সংরক্ষণ করা হয়। মৌলিক অধিকারগুলো দেশের সর্বোচ্চ আইন। মৌলিক অধিকার সংবিধানে লিখিতরূপে সংরক্ষণ করা হয় এই কারণে যাতে করে সহজে এগুলো কেড়ে নেয়া না যায়, জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ করা যায়।
সংবিধানে মৌলিক অধিকারগুলো লিপিবদ্ধ করার ফলে এগুলোকে অন্য যেকোনো অধিকারের চেয়ে বেশি মর্যাদা দেয়া হয় এবং শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের নাগালের বাইরে রাখা হয়। সংবিধানে এমন বিধানও রাখা হয় যাতে সংসদ চাইলেই মৌলিক বিধানের পরিপন্থি কোনো আইন করতে না পারে।
বাংলাদেশের সংবিধানে নাগরিকের চলাচলের স্বাধীনতাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। অতএব রাষ্ট্র আইন করে এমন কোনো বিধান করতে পারবে না, যাতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অখণ্ডতার প্রশ্ন না থাকলে কোনো নাগরিকে রাষ্ট্রের কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে যেতে বাধা দেবে।
যেমন রাষ্ট্র আইন করে এ কথা বলতে পারবে না যে কুড়িগ্রামের মানুষ ঢাকায় আসতে পারবে না বা গ্রামের মানুষকে রাজধানীতে আসতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে এবং নিবন্ধন করে আসতে হবে। অর্থাৎ সংবিধান যেসব অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে, সেগুলোর নিশ্চয়তা বিধান রাষ্ট্রের দায়িত্ব এবং রাষ্ট্র চাইলেই এইসব অধিকারের পরিপন্থি কোনো আইন করতে পারে না।
মানবাধিকারের সঙ্গে মৌলিক অধিকারের পার্থক্য
১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ ৩০টি ধারায় মানবাধিকারের যে সর্বজনীন ঘোষণা দিয়েছে, সেই অধিকারগুলো সারা পৃথিবীর জন্যই প্রযোজ্য। এই ঘোষণার মুখবন্ধে বলা হয়েছে: এ ঘোষণা সকল জাতি এবং রাষ্ট্রের সাফল্যের সাধারণ মানদণ্ড হিসেবে সেই লক্ষ্যে নিবেদিত হবে, যেখানে প্রতিটি ব্যক্তি এবং সমাজের প্রতিটি অঙ্গ এ ঘোষণাকে সব সময় মনে রেখে পাঠদান ও শিক্ষার মাধ্যমে এই স্বাধীনতা ও অধিকারসমূহের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করতে সচেষ্ট হবে এবং সকল সদস্য রাষ্ট্র ও তাদের অধীনস্থ ভূখণ্ডের জাতিসমূহ উত্তরোত্তর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রয়াসের মাধ্যমে এই অধিকার এবং স্বাধীনতাসমূহের সর্বজনীন ও কার্যকর স্বীকৃতি আদায় এবং যথাযথ পালন নিশ্চিত করবে।
এই ঘোষণার ২৫ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সমাজকল্যাণমূলক কার্যাদির সুযোগ এবং এ সঙ্গে পীড়া, অক্ষমতা, বৈধব্য, বার্ধক্য অথবা জীবনযাপনে অনিবার্যকারণে সংঘটিত অন্যান্য অপারগতার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা এবং বেকার হলে নিরাপত্তার অধিকারসহ নিজের এবং নিজ পরিবারের স্বাস্থ্য এবং কল্যাণের জন্য পর্যাপ্ত জীবনমানের অধিকার প্রত্যেকেরই রয়েছে।
এই ঘোষণাপত্রে সারা বিশ্বের মানুষের জন্য যেসব অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে আইনের চোখে সবাই সমান এবং ব্যক্তিনির্বিশেষে সকলেই আইনের আশ্রয় সমানভাবে ভোগ করবে; কাউকেই খেয়ালখুশিমত গ্রেপ্তার বা অন্তরীণ করা কিংবা নির্বাসন দেওয়া যাবে না; ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করতে হবে; নিজ দেশে সরকারি চাকরিতে সমান সুযোগ লাভের অধিকার থাকবে; নিজ রাষ্ট্রের চৌহদ্দির মধ্যে স্বাধীনভাবে চলাফেরা এবং বসবাস করার অধিকার থাকবে এমনকি নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভিন্নদেশে আশ্রয় প্রার্থনা করার মতো অধিকারও থাকবে। কিন্তু ৩০টি ধারায় উল্লিখিত সবগুলো অধিকারকে সব রাষ্ট্র তার সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা নাও করতে পারে।
আবার কোনো দেশ যদি মনে করে যে এই ৩০টি মানবাধিকারকেই সে তার নাগরিকের জন্য মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করে সংবিধানে লিপিবদ্ধ করবে, তাতেও বাধা নেই। কিন্তু মনে রাখতে হবে, যখনই কোনো রাষ্ট্র কোনো একটি অধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে উল্লেখ করবে তখনই সেটি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তারওপর বাধ্যবাধতা চলে আসবে।
বস্তুত এ কারণেই ১৯৭২ সালে যখন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করা হয়, তখন সর্বজনীন মানবাধিকার হলেও অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার মতো অধিকারগুলোকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। কেননা, একটি নতুন রাষ্ট্র তথা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতির যে ভঙ্গুর দশা ছিল, সেখানে সাড়ে সাত কোটি মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা নিশ্চিত করার সক্ষমতা রাষ্ট্রের ছিল না। কিন্তু মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া না হলেও এই মৌলিক প্রয়োজনগুলো মেটাতে রাষ্ট্র যাতে ভূমিকা রাখে, সে কথা বলা হয়েছে।
এখনও কি সময় হয়নি?
প্রশ্ন হলো, স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পরেও কি অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণার সময় হয়নি? রাষ্ট্রের কি সেই সক্ষমতা হয়নি?
স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও কেন সুচিকিৎসার দাবিতে একজন আহত মানুষকে, একজন মুমূর্ষু রোগীকে শরীরে ব্যান্ডেজ নিয়ে কিংবা হুইল চেয়ারে বসে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে হবে? তাহলে ৫৩ বছরে রাষ্ট্রের কী অর্জন? শুধু উঁচু উঁচু ভবন, ফোর লেন সড়ক, এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল, প্রমত্তা পদ্মার ওপরে সেতু—এগুলোই উন্নয়ন? অভ্যুত্থানে আহত হয়ে কিংবা রোগশোকে জর্জরিত একজন মানুষ যে রাস্তায় নেমে সুচিকিৎসার দাবিতে স্লোগান দিচ্ছে—তা কি উন্নয়নের ওই প্রতীকগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে না?
সংবিধান সংস্কারে যে কমিশন হয়েছে, তারা বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারেন। অর্থাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার যেহেতু বড় হয়েছে, দৃশ্যতই নানা ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে এবং হচ্ছে—অতএব এখন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যে ন্যূনতম জিনিসগুলো প্রয়োজন, সেগুলো সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা করা হোক। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের যে অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল, ২০২৪ সালে নিশ্চয়ই সেখানে নেই।
লেখক: সাংবাদিক ও লেখক।
এইচআর/এএসএম