দেখতে দেখতে চলে গেল ১২টি রোজা। ইফতারের জন্য প্রতিটি পরিবারের নিজস্ব কিছু খাবারের অভ্যাস আছে, তবে সারাদিনের তৃষ্ণা আর পানির অভাব মেটাতে শরবতের চাহিদা থাকে সবার। অথচ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য গতানুগতিক চিনির শরবত খেতে মানা অনেক রোজদারের। এছাড়াও অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয় কারো স্বাস্থের জন্যই ভালো না। তাই ইফতারে ঘরে থাকা সারাধণ উপকরণ দিয়ে স্বাস্থ্যকর পানীয় রাখার ব্যবস্থা করা উচিত। জেনে নিন এমন কিছু পানীয়র কথা, যা চিনি ছাড়াই বাসায় দিব্যি তৈরি করে নিতে পারবেন-
১. গুড়ের শরবত: গুড়ের শরবত বানানো খুব সহজ। পানিতে শুধু গুড় ও লেবুর রস দিয়ে পরিবেশন করা যায়। অনেকে এতে অল্প আদার রসও দিয়ে থাকে। ভিন্ন স্বাদের জন্য কাঁচা মরিচ বা সামান্য লবণ যোগ করতে পারেন। গুড়ের শরবত স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি রক্ত পরিষ্কার করে, হজমশক্তি বাড়ায়, এবং শরীরে শক্তি জোগায়। গুড়ে থাকা আয়রন রক্তশূন্যতা দূর করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। গরমে এই শরবত শরীর ঠান্ডা রাখে এবং পানিশূন্যতা রোধ করে।
২. তরমুজের শরবত: তরমুজের শরবত বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো তরমুজ, মধু বা লবণ, পানি, এবং স্বাদ অনুযায়ী লেবুর রস বা পুদিনা পাতা। প্রথমে তরমুজের টুকরো বীজ ছাড়িয়ে ব্লেন্ডারে নিন, তারপর মধু ও সামান্য পানি মিশিয়ে ব্লেন্ড করুন। অনেকে মিষ্টির বদলে নোনতা খেতে পছন্দ করেন, তারা সামান্য লবণ দিতে পারেন মধুর বদলে। স্বাদ বাড়াতে লেবুর রস বা পুদিনা পাতা যোগ করতে পারেন। তরমুজের শরবত এটি শরীর ঠান্ডা রাখে এবং পানিশূন্যতা দূর করে। তরমুজে থাকা ভিটামিন এ, সি, এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক ও চোখের জন্য ভালো। এছাড়া এটি হজমশক্তি বাড়ায় এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৩. আদা-লেবু পানি: আদা-লেবু পানি বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো আদা, লেবু, পানি, এবং স্বাদ অনুযায়ী মধু বা সামান্য লবণ। প্রথমে আদা কুচি করে পানিতে সিদ্ধ করুন। আদার রসসহ পানিটি ঠান্ডা হলে লেবুর রস ও মধু বা লবণ মিশিয়ে নিন। আদা-লেবু পানি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি হজমশক্তি বাড়ায়, মেটাবলিজম উন্নত করে, এবং ওজন কমাতে সাহায্য করে। আদায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরের প্রদাহ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। লেবু ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, যা ত্বক ও ইমিউন সিস্টেমের জন্য ভালো। এই পানীয় শরীর ডিটক্সিফাই করে এবং শক্তি জোগায়।
৪. জিরা পানি: জিরা পানি আমাদের দেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে একটি স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে পান করে আসছে। এটি শরীরের ক্ষতিকর চর্বি ও অস্বাস্থ্যকর কোলস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ওজন কমাতে সহায়তা করে। জিরা পানি হজমশক্তি বাড়ায়, গ্যাস ও অ্যাসিডিটি কমায়, এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এছাড়া এটি শরীর ডিটক্সিফাই করে, ত্বক পরিষ্কার রাখে, এবং বিপাকক্রিয়া উন্নত করে। নিয়মিত পান করলে শরীর সুস্থ ও সতেজ থাকে।
৫. পুদিনাপাতার শরবত: পুদিনাপাতার শরবত বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো পুদিনাপাতা, পানি, মধু, লেবুর রস, এবং স্বাদ অনুযায়ী কাঁচা মরিচ বা লবণ। স্বাদ বাড়াতে কাঁচা মরিচ বা লবণ যোগ করতে পারেন। পুদিনাপাতার শরবত স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি হজমশক্তি বাড়ায়, গ্যাস ও বদহজম দূর করে, এবং শরীর ঠান্ডা রাখে। পুদিনায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরের প্রদাহ কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া এটি মুখের দুর্গন্ধ দূর করে এবং ত্বক পরিষ্কার রাখে।
অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয়র বদলে এই স্বাস্থকর পানীয়গুলো রমজানে আপনার পানির অভাব যেমন পূরণ করবে, তেমনই অপনার শরীরকে সুস্থ রাখবে দীর্ঘসময়।
এএমপি/জিকেএস