বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন তার অনুসারীরা। সোমবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রাম নগরীর জামালখানে তার অনুসারীরা জড়ো হতে থাকেন। পরে তাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন সনাতনী ধর্মাবলম্বীরা।
পরে সন্ধ্যা গড়াতেই চট্টগ্রাম নগরের চেরাগী মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোট। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়ে তার মুক্তির দাবি জানান তারা।
এদিকে বিক্ষোভ সমাবেশ ঘিরে ঘটনাস্থলে সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে জন্যই এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। অন্যদিকে এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। এ ছাড়া চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে আটকের প্রতিবাদে সারা দেশে জেলা-উপজেলায় বিক্ষোভ সমাবেশের আহ্বান জানিয়েছে সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোট।
এর আগে আজ বিকেলে ঢাকা থেকে বিমানে চট্টগ্রামে যাওয়ার কথা ছিল চিন্ময়ের। সে সময় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক। তিনি বলেন, ‘পুলিশের একটি অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে ডিবি গ্রেপ্তার করেছে। যারা আবেদন করেছে, তাদের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হবে।’
এক পর্যায়ে চিন্ময়কে গ্রেপ্তারের বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। এরপর থেকেই ক্ষোভ দেখাতে থাকেন সনাতনী ধর্মালম্বীরা। তাৎক্ষণিক ক্ষোভ প্রকাশ করে এক বিবৃতি দেয় বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
বিবৃতিতে বলা হয়, এ গ্রেপ্তারের ফলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার প্রশ্নে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি বিশ্বে ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। একই সঙ্গে চিন্ময়কে জাতীয় স্বার্থে আশু মুক্তির দাবি জানানো হয়।
এদিকে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের সমন্বয়ক কাঞ্চন আচার্য্য কালবেলাকে বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাধা প্রদান করার জন্য আমাদের মুখপাত্রকে কোনো প্রকার অপরাধ ছাড়াই হয়রানিমূলক ষড়যন্ত্র করে মামলাটি দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি তাকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি সোমবার তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি চাই। আর নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া না হলে আমরা এভাবেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলমান রাখব।’
এদিকে চেরাগী মোড় এলাকায় বিক্ষোভকে ঘিরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, ‘চেরাগীতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন। ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, গত ৩০ অক্টোবর চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। মো. ফিরোজ খান নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন। জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনে এ মামলা দায়ের হয়। মামলার পরই দুজনকে গ্রেপ্তার করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা হলেন- রাজেশ চৌধুরী ও হৃদয় দাশ।
মামলার আসামিরা হলেন- পুণ্ডরীক ধাম মন্দিরের অধ্যক্ষ চন্দন কুমার ধর প্রকাশ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, চট্টগ্রামের হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক অজয় দত্ত (৩৪), নগরীর প্রবর্তক ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলা রাজ দাশ ব্রহ্মচারী (৪৮), গোপাল দাশ টিপু (৩৮), ডা. কথক দাশ (৪০), প্রকৌশলী অমিত ধর (৩৮), রনি দাশ (৩৮), রাজীব দাশ (৩২), কৃষ্ণ কুমার দত্ত (৫২), জিকু চৌধুরী (৪০), নিউটন দে ববি (৩৮), তুষার চক্রবর্তী রাজীব (২৮), মিথুন দে (৩৫), রুপন ধর (৩৫), রিমন দত্ত (২৮), সুকান্ত দাশ (২৮), বিশ্বজিৎ গুপ্ত (৪২), রাজেশ চৌধুরী (২৮) এবং হৃদয় দাস (২৫)। একই মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
জানা যায়, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে তিনি চিন্ময় প্রভু নামে পরিচিত। এ ছাড়া তিনি পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ। সম্প্রতি বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট নামে দুটি সংগঠন ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের’ ব্যানারে কর্মসূচি পালন শুরু করে। নতুন এই জোটের মুখপাত্র করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। কয়েক দিন এই জোট আট দফা দাবিতে রংপুরে সমাবেশ করেছে।