চীনের ওয়াইন-সংস্কৃতি এবং নিংসিয়ার দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার গল্প

17 hours ago 6

পাহাড় আর সমুদ্র আমার প্রিয়। পাহাড়ের কাছাকাছি গেলে নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হয়, আর সমুদ্রের বিশালতা হৃদয়কে কোমল করে। নিংসিয়া সফরে আমাদের টিমে চিয়াংসি প্রদেশ থেকে আসা একটি মেয়ে ছিল; নাম চোং লু। দেখে মনে হয় সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে কাজের জগতে ঢুকেছে। জানাল, ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করে; সফরশেষে ফিরে যাবে নিজের জন্মস্থান চিয়াংসি-তে। তো, কথাপ্রসঙ্গে চোং লু বলল, ‘পাহাড়ের কাছে এলে নিজেকে আত্মিকভাবে মুক্ত মনে হয়।’

গত ৬ আগস্ট, হ্যলান পর্বতকে ‘ঠিক যেন হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে’ দূরত্বে রেখে, উন্মুক্ত আকাশের নিচে, একটি বিলাসবহুল রিসোর্টে ডিনার করি আমরা (চায়না মিডিয়া গ্রুপ ও অন্যান্য গণমাধ্যমের একদল সাংবাদিক এবং সাধারণ বিদেশীদের মোটামুটি একটা বড় টিম)। ৭ আগস্ট ২০২৫, চীনের নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলে আমাদের সফরের তৃতীয় দিনে, সেই পর্বতকে সত্যি সত্যি ছুঁয়ে দেখার সুযোগ আমাদের হয়। সেখানেই কথা হচ্ছিল চোং লু’র সঙ্গে। তবে, সে গল্প পরে; আগে ওয়াইন প্রসঙ্গ।

চীনে চা-সংস্কৃতির পাশাপাশি, অনেকটা হাত ধরাধরি করে চলে ওয়াইন-সংস্কৃতি। যে-কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে বা আড্ডায় চায়ের পাশাপাশি ওয়াইন থাকা চাই-ই চাই। একবার তেমন এক অনুষ্ঠানে আমার এক চীনা বন্ধুর বাবা এক বোতল দামি ওয়াইন নিয়ে এলেন। খাবারের টেবিলে তিনি নিজের হাতে বোতলের ছিপি খুলে উপস্থিত অতিথিদের গ্লাসে ওয়াইন ঢেলে দিতে লাগলেন। এটা একটা প্রচলিত ভদ্রতা। একসময় তিনি আমার গ্লাসে ওয়াইন ঢালতে আসলেন হাসিমুখে। আমি গ্লাস সরিয়ে বন্ধুকে ইশারা করলাম, তার বাবাকে আমার অপারগতার কথা বুঝিয়ে বলতে। আমি হাসিমুখে ‘তোই পু চিয়ে’ (আমি দুঃখিত) বলে গ্লাস সরিয়ে নিলেও, তিনি ভীষণরকম রেগে গেলেন। প্রবীণ মানুষ। আমার বন্ধু তার বাবাকে বোঝালেন, কেন আমি ওয়াইন পান করতে পারি না; ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু ভদ্রলোকের চেহারা দেখে মনে হলো না যে, তিনি বুঝেছেন। তিনি বিরক্তি প্রকাশ করলেন; যেন তিনি বলতে চাইছেন, এমন ‘চমৎকার’ একটা পানীয় কেন নিষিদ্ধ হবে! 

চীনের ওয়াইন-সংস্কৃতি এবং নিংসিয়ার দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার গল্প
এ আঙুর থেকে তৈরি হয় ওয়াইন

এটা অবশ্য একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। সাধারণভাবে চীনারা জানে যে, মুসলিমরা ওয়াইন পান করে না, শুকরের মাংস খায় না। নিংসিয়া সফরে আমাদের টিমে মুসলিমের চেয়ে অমুসলিমের সংখ্যা বেশি হওয়া সত্ত্বেও, প্রতিদিন আমরা মুসলিম রেস্তোরাঁতেই লাঞ্চ, ডিনার করেছি। সিএমজি’র চীন আন্তর্জাতিক বেতারের ক্যান্টিনে মুসলিমদের জন্য একটা আলাদা তলা বরাদ্দ আছে। সেখানে শুধু হালাল খাবার দেওয়া হয়। চীনের অনেক ভালো দিকের মধ্যে এটা একটা। চীনারা অন্যের ভালো লাগা, মন্দ লাগাকে গুরুত্ব দেয়।

নিংসিয়া ক্রমশ উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে; ধনী থেকে আরও ধনী হচ্ছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে চীনা সরকার ও ফুচিয়ানের সাহায্য ও সহযোগিতা এবং নিংসিয়ার বাসিন্দাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে। মুসলিম-অধ্যুষিত নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অগ্রগতির এ গল্প বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল ছোট দেশগুলোর জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে।

যাই হোক, বলছিলাম ওয়াইন-সংস্কৃতির কথা। চা-সংস্কৃতির মতো ওয়াইন-সংস্কৃতিও চীনা অর্থনীতিতে একটা বড় ভূমিকা রাখছে। ৭ আগস্ট সকালে আমরা দেখতে গিয়েছিলাম একটি ওয়াইন উৎপাদনকারী কারখানা। নিংসিয়ার রাজধানী ইনছুয়ানের হাওইউয়ান গ্রামে গড়ে ওঠা এ কারখানাকে কেন্দ্র করে, বিশাল এলাকাজুড়ে, চাষ করা হয় আঙুর। ২০০৮ সালে যাত্রা শুরু করা এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২০০ হেক্টর জমিতে বপন করা হয়েছে এসব গাছ। প্রতিবছর এখানে উৎপাদিত আঙুর যায় কারখানায়। আর আঙুর চাষ, সংগ্রহ ও কারখানার অন্যান্য কাজে নিয়োগ পায় স্থানীয়রা। এর মানে, এলাকার দারিদ্র্যবিমোচনে এই প্রকল্প রেখেছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। এলাকাটিকে পরিণত করা হয়েছে একটি পর্যটনকেন্দ্রেও। তা ছাড়া, এটি পুরোপুরি পরিবেশবান্ধব। মজার ব্যাপার হচ্ছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়েছে গোবি মরুভূমির একটা অংশে! মরুভূমির প্রায় সাড়ে ১৩ শত হেক্টর জমিকে কঠোর পরিশ্রম, মেধা, আর উদ্ভাবনী ক্ষমতা দিয়ে রূপান্তরিত করা হয়েছে রীতিমতো একটি মরুদ্যানে।

আমার ধারণা ছিল, ১৪০ কোটি মানুষের দেশ চীনে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ওয়াইন উত্পন্ন হয়। কিন্তু, খোঁজ নিয়ে জানলাম, এ ক্ষেত্রে বিশ্বে শীর্ষস্থানটি ইতালির দখলে। চীন আছে অনেক পেছনে, ১৫ নম্বরে। আমার আরেকটা ধারণা ছিল, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ওয়াইন পান করে চীনারা। কিন্তু এ ধারণাটাও ভুল। যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে সবার আগে, আর চীনের অবস্থান অষ্টম। ২০২৩ সালে চীনারা ৬৮ কোটি লিটার ওয়াইন পান করে এবং ২০২৪ সালে চীনে উৎপাদিত হয় ১১.৮ কোটি লিটার ওয়াইন। এর মানে, চীনকে বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ ওয়াইন আমদানি করতে হয়। এখানে আরেকটি তথ্য আগ্রহোদ্দীপক হতে পারে, সেটি হচ্ছে: চীনে উৎপাদিত মোট ওয়াইনের অর্ধেকটাই উৎপন্ন হয় নিংসিয়ায়!

চীনের ওয়াইন-সংস্কৃতি এবং নিংসিয়ার দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার গল্প
ওয়াইন কারখানা পরিদর্শন

আলোচ্য কারখানা পরিদর্শন শেষে যথারীতি অমুসলিম অতিথিদের ওয়াইন পরিবেশন করা হয়। আমাদের, মানে দলের মুসলিম সদস্যদের, দেওয়া হয় চা। আয়োজকরা হারাম-হালাল নিয়ে সতর্ক। এমনকি, দলনেতা আমাকে হাসিমুখে বললেন, ‘তুমি ওই রুমে যেয়ো না। ওখানে সবাই ওয়াইন টেস্ট করবে।’ বলা বাহুল্য, শুরুতে তার কথা শুনলেও, কিছুক্ষণ পরে আমি সেই রুমে ঢুকি, ছবি তোলার জন্য। 

এদিন আমাদের দ্বিতীয় গন্তব্য ছিল ‘হ্যলান মাউন্টেইন রক কার্ভিং সাইট’। বাংলা করলে দাঁড়াবে ‘হ্যলান পর্বত পাথর খোদাই এলাকা’। হ্যলান পর্বত ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ। হাজার হাজার বছর আগের মানুষ এই পর্বতের গায়ে খোদাই করেছিলেন মানুষের মুখ, বিভিন্ন জীবজন্তু, হাতের ছাপ, বিভিন্ন আদিম যন্ত্রপাতি, ইত্যাদি। অনেকে এই খোদাইকৃত চিত্রকর্মগুলোকে একসঙ্গে ডাকেন ‘পাথরে লিখিত ইতিহাসের বই’। আমরা হ্যলান পর্বতের যে স্থানটি দেখতে গিয়েছিলাম, সেটির কেতাবি নাম ‘হ্যলান মাউন্টেন রক কার্ভিং প্রটেকশান এরিয়া’। এখানে প্রায় ৬ হাজার দেওয়ালচিত্র সংরক্ষিত আছে। আর গোটা হ্যলান পর্বত জুড়ে আছে প্রায় ১৮ হাজার এমন চিত্র। প্রাচীন মানুষ কর্তৃক খোদাইকৃত এসব চিত্রের কোনো কোনোটির বয়স তিন হাজার থেকে ১০ হাজার বছর পর্যন্ত বলে দাবি করা হয়!

হ্যলান পর্বতের কোলঘেঁষে গড়ে তোলা হয়েছে ‘ইনছুয়ান ওয়ার্ল্ড রক কার্ভিং মিউজিয়াম’-ও। ২০০৮ সালে এটি নির্মিত হয়। এই যাদুঘরে বিশ্বের নানান স্থানে আবিষ্কৃত দেওয়ালচিত্রের আলোকচিত্র এবং কোনো কোনোটির রেপ্লিকা প্রদর্শিত হচ্ছে। আমরা যাদুঘরটিও ঘুরে দেখলাম। এ এক অন্য জগৎ। এ যেন প্রাচীন মানুষের সাথে আধুনিক মানুষের যোগাযোগের সেতু!

হ্যলান পর্বত ও পর্বতের গায়ে খোদাই করা আমাদের পূর্বপুরুষদের চিত্রকর্ম আমাকে বিপুলভাবে আন্দোলিত করেছে। অন্যদের কথা জানি না, আমার জন্য এটা ছিল প্রথম এমন অভিজ্ঞতা। পত্রিকায় বা ভিডিওতে এমন দেওয়ালচিত্রের কথা শুনেছি ও দেখেছি। কিন্তু নিজের চোখে দেখা, এমনকি কোনো কোনোটিকে হাত দিতে স্পর্শ করার অভিজ্ঞতা এই প্রথম। একই দিনে আরেকটি অনন্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি মিননিং প্রদর্শনী কেন্দ্রে গিয়ে। মিননিং ইনছুয়ানের একটি জেলা পর্যায়ের অঞ্চল। একে মিননিং টাউন-ও বলা হয়। এখানে ৮টি গ্রাম আছে। শুধু গ্রাম বললে ভুল হবে, আসলে শহরের সকল সুযোগসুবিধাসম্বলিত গ্রাম। শুরুতে যে গ্রামটি গড়ে তোলা হয়েছিল, সেটির নাম রাখা হয় মিননিং। নামটি রেখেছিলেন চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। পরে আরও ৭টি গ্রাম গড়ে ওঠে এবং আটটি গ্রাম নিয়ে গঠিত জেলাটির নামও মিননিং-ই থেকে যায়।

চীনের ওয়াইন-সংস্কৃতি এবং নিংসিয়ার দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার গল্প
হ্যলান পর্বতে পূর্বপুরুষদের চিত্রকর্ম দেখতে পর্যটকদের ভিড়

‘মিন’ ফুচিয়ান প্রদেশের নিক নেম এবং নিংসিয়া’র নিকনেম হচ্ছে ‘নিং’। এই দুটো নাম মিলিয়ে সি চিন পিং গ্রামের নাম রেখেছিলেন মিননিং। এর পেছনে রয়েছে একটি চমৎকার ইতিহাস, চীনা সরকারের নেওয়া একটি অনন্য দারিদ্র্যবিমোচন পদ্ধতির গল্প।

চীন সরকার যখন ২০২০ সালের মধ্যে দেশকে সম্পূর্ণভাবে হতদরিদ্রমুক্ত করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে, তখন অনেক পদক্ষেপের মধ্যে একটি অভিনব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। প্রতিটি উন্নত ও ধনী প্রদেশ বা প্রদেশ পর্যায়ের অঞ্চলের সাথে ট্যাগ করে দেওয়া হয় অন্য এক বা একাধিক অনুন্নত ও পিছিয়ে থাকা প্রদেশ বা প্রদেশ পর্যায়ের অঞ্চলকে। উন্নত প্রদেশের কাজ অনুন্নত প্রদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে সম্ভাব্য সবকিছু করা। এ উদ্যোগ বিপুলভাবে সফল হয়। ২০২০ সালের আগেই যে চীন হতদরিদ্রমুক্ত হতে পেরেছে, তার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এই পদক্ষেপ।

একসময় নিংসিয়াও হতদরিদ্র ছিল। খুব বেশিকাল আগের কথা নয়। ১৯৯৬ সালে চীনের সরকার উপকূলীয় ও উন্নত ফুচিয়ান প্রদেশকে দায়িত্ব দেয় অনুন্নত ও পিছিয়ে থাকা নিংসিয়াকে টেনে ওপরে তোলার। তখন ফুচিয়ানের সিপিসি-র পার্টি উপ-সম্পাদক ছিলেন চীনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। নিংসিয়াকে সাহায্য করতে গঠিত কর্মদলের প্রধানের দায়িত্ব পান সি। তিনি ১৯৯৭ সালে নিংসিয়া পরিদর্শন করেন এবং তার নেতৃত্বে ফুচিয়ান দারিদ্র্যবিমোচনসহ নানান উন্নয়নমূলক কাজে নিংসিয়াকে সাহায্য ও সহযোগিতা করতে থাকে। ফুচিয়ানের বিভিন্ন কোম্পানি নিংসিয়ায় বিনিয়োগ করে, নিজস্ব কারখানা গড়ে তোলে, বিভিন্ন প্রজেক্ট বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে। এভাবে ধীরে ধীরে নিংসিয়া দারিদ্র্যকে জয় করে। বিগত ২৮ বছরের যৌথ প্রচেষ্টায়, নিংসিয়া আজ অনেক উন্নত। তবে, ফুচিয়ানের সাথে নিংসিয়ার সহযোগিতার সম্পর্ক আজও অটুট আছে। এখনও নিংসিয়ায় ফুচিয়ানের অনেক কোম্পানি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। নিংসিয়ায় একটি ফুচিয়ান কোম্পানি যত মুরগির ডিম উত্পন্ন করে, তা গোটা চীনে উত্পন্ন মোট ডিমের ২০ শতাংশ।

চীনের ওয়াইন-সংস্কৃতি এবং নিংসিয়ার দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার গল্প
১৯৯৭ সালে সি চিন পিং নিংসিয়া পরিদর্শন করেন

তো, মিননিং হচ্ছে ফুচিয়ানের সাহায্য-সহযোগিতায় বাস্তবায়িত অসংখ্য প্রজেক্টের একটি। প্রজেক্টের আওতায় প্রথম মিননিং গ্রাম ও পরে ৮টি গ্রামের সমন্বয়ে মিননিং জেলা বা টাউন গড়ে ওঠে। এই কাজের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিক ছিল মরুভূমিকে সবুজ গ্রামে পরিণত করা। হ্যাঁ, আজকের সবুজে-শ্যামলে ঘেরা মিননিং আগে পুরোটাই ছিল গোবি মরুভূমির অংশ! রূপান্তরিত এই গ্রামগুলোতে পুনর্বাসন করা হয় হ্যলান পর্বতাঞ্চলে বসবাসকারী তৎকালীন হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে। এভাবে তাঁরা দারিদ্র্যমুক্ত হন, এমনকি তাঁরা এখন ধনী হবারও স্বপ্ন দেখতে পারেন।

পার্বত্যাঞ্চলের দরিদ্র মানুষগুলোকে শুধু বাড়ি-ঘর বানিয়ে দিয়েই কাজ শেষ করা হয়নি। তাদের জীবন-জীবিকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ ‘মিননিং হ্যমেই ই-কমার্স পোভার্টি এলিভিয়েশান ওয়ার্কশপ’-এর কথা উল্লেখ করা যায়। মিননিং টাউনের ইউয়ানলুং গ্রামে অবস্থিত এই ওয়ার্কশপ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, অনলাইনে পণ্য বিক্রি, ও প্রশিক্ষণের একটি টোটাল প্যাকেজ। মূলত স্থানীয় নারীরা এ ওয়ার্কশপটি পরিচালনা করে। প্রতিবছর এই ওয়ার্কশপ ৪০ লাখ ইউয়ান মূল্যের পণ্য বিক্রি করে। অদূর ভবিষ্যতে এ অংক এক কোটি ইউয়ানে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

চীনের ওয়াইন-সংস্কৃতি এবং নিংসিয়ার দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার গল্প
মিননিং হ্যমেই ওয়ার্কশপে আমাদের দলের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলছেন একজন কর্মকর্তা

মিননিংয়ের মতো অসংখ্য সাফল্যের ফল হচ্ছে আজকের আধুনিক নিংসিয়া। একসময়ের দরিদ্র নিংসিয়াকে এখন ধনী প্রদেশ বলা যেতেই পারে। কিছু পরিসংখ্যান দিচ্ছি। চলতি বছর, মানে ২০২৫ সালের প্রথম ৬ মাসে নিংসিয়ার জিডিপি বেড়ে দাঁড়ায় ২৬৫০৯ কোটি ইউয়ানে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫.৮ শতাংশ বেশি; গোটা নিংসিয়ার জনগণের মাথাপিছু গড় বার্ষিক আয় দাঁড়ায় ১৫৪৬১ ইউয়ানে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫.৭ শতাংশ বেশি; শহরাঞ্চলের বাসিন্দাদের বার্ষিক গড় আয় বেড়ে দাঁড়ায় ২১৬৫৬ ইউয়ানে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪.৯ শতাংশ বেশি; আর গ্রামীণ অঞ্চলের বাসিন্দাদের মাথাপিছু বার্ষিক আয় বেড়ে দাঁড়ায় ৭৪১১ ইউয়ানে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬.২ শতাংশ বেশি।

মোদ্দাকথা, নিংসিয়া ক্রমশ উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে; ধনী থেকে আরও ধনী হচ্ছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে চীনা সরকার ও ফুচিয়ানের সাহায্য ও সহযোগিতা এবং নিংসিয়ার বাসিন্দাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে। মুসলিম-অধ্যুষিত নিংসিয়া হুই স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের অগ্রগতির এ গল্প বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল ছোট দেশগুলোর জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে। (চলবে)

ইনছুয়ান, নিংসিয়া, চীন
লেখক : বার্তা সম্পাদক, চায়না মিডিয়া গ্রুপ (সিএমজি)
[email protected]

এইচআর/জেআইএম

Read Entire Article