ফরিদপুর জেলা শহরের চরকমলাপুরে আবরার জাওয়াদ দারুণ (১৫) নামে নবম শ্রেণির এক ছাত্র নিখোঁজ থাকার দুদিন পর পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, চোর সন্দেহে পিটিয়ে নির্যাতনের পর দারুণের লাশ পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে দারুণের চাচা মার্শাল টিটো এ অভিযোগ করেন। এর আগে বুধবার (১৩ নভেম্বর) ময়নাতদন্ত শেষে বিলমামুদপুর গোরস্তানে তাকে দাফন করা হয়। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকালে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে।
আবরার জাওয়াদ দারুণ শহরের চর কমলাপুরের বাসিন্দা ভিয়েতনাম প্রবাসী কামরুল ইসলামের একমাত্র সন্তান। অন্যদিকে, দারুণের মা তার বাবাকে ছেড়ে কিছুদিন আগে অন্যত্র বিয়ে করেন। এরপর থেকে দারুণ গ্রামে তার দাদির কাছেই থাকত। এ ঘটনায় গত একমাস ধরে দারুণ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল।
দারুণের চাচা মার্শাল টিটো বলেন, গত সপ্তাহে দারুণকে শাহীন আবাসিক স্কুলে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে দুদিন থাকার পর শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাতে তাকে ফরিদপুরের বাসায় নিয়ে আসা হয়। দুদিন পর রোববার (১০ নভেম্বর) রাতে সে হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়। পরদিন সোমবার (১১ নভেম্বর) বেলা ১১টার পরে ফেসবুকে দারুণকে জোয়াইরের মোড়ের একটি দোকানে চোর সন্দেহে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার একটি ভিডিও দেখতে পাই, যা রুহুল নামে এক সাংবাদিকের আইডি থেকে পাওয়া যায়। ভিডিও দেখার পর সেখানে গেলে জানানো হয় দারুণকে ছেড়ে দিয়েছেন তারা।
এদিকে দারুণ নিখোঁজ হওয়ার পর বিষয়টি পরিচিতজনরা ফেসবুকে পোস্ট দেন। এরপর সোমবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে মানিকগঞ্জ হাইওয়ে থানার পুলিশ পরিচয়ে অজ্ঞাতপরিচয় একজন মার্শাল টিটোর মোবাইল নম্বরে ফোন করে বলা হয় দারুণ মানিকগঞ্জের ঘিওরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে। তার দ্রুত রক্ত লাগবে আপনারা টাকা পাঠান। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে মার্শাল টিটো ওই ব্যক্তির দেওয়া নম্বরে ৭,৭০০ টাকা পাঠান। পরে মার্শাল টিটো মানিকগঞ্জে অবস্থানরত তার এক কলিগকে ফোন করে ভাতিজার খোঁজ নিতে বলেন। তখন জানতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, জোয়াইরের মোড়ে দারুণকে জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়াও তাকে মারধর করা হয় বলে জানতে পেরেছি। এ সময় দারুণ বার বার বলছিল তার বাড়ি চর কমলাপুরে; কিন্তু তারা তার কথার গুরুত্ব না দিয়ে নির্যাতন করে। এরপর সে কীভাবে সেখান থেকে বের হলো এবং কীভাবে তার লাশ ওই পুকুরে এলো এ বিষয়টি বুঝতে পারছি না।
স্থানীয়রা জানান, জোয়াইরের মোড়ে সোমবার রাতে অটোরিকশা চুরি হয়। এ ঘটনায় ওই অটোরিকশা চোরকে ধরা হয়। এর কিছুক্ষণ আগে সেখানে সন্দেহভাজন ঘোরাফেরা করতে দেখে তারা দারুণকে আটক করে। এরপর তারা পুলিশকে খবর দেয়। তবে দারুণের অসংলগ্ন কথাবার্তা শুনতে পেয়ে পুলিশের সন্দেহ না হওয়ায় তাকে আর আটক করেনি পুলিশ। পরে স্থানীয়রা তাকে একটি মুদি দোকানে রেখে নামাজ পড়তে গেলে এক ফাঁকে সেখান থেকে পালিয়ে যায় সে।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার এসআই ফাহিম ফয়সাল কালবেলাকে জানান, আবরার জাওয়াদ নিখোঁজের ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুরে গেরদা গ্রামের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি মো. সোহেলের থেকে খবর পেয়ে সাহেববাড়ি পুকুর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।