প্রতিদিন বিকেল হলেই লেকপাড়ে দেখা মেলে ক্যামেরা হাতে এক যুবকের। লেকপাড়ে ঘুরতে আসা মানুষজনের ছবি তুলে টাকা আয় করেন তিনি। সেই টাকা চলে তার সংসারের খরচ ও ছোট ভাইয়ের পড়াশোনা।
মাদারীপুর সদর উপজেলার সাধুর ব্রীজ এলাকার রকিবুল ইসলামের ছেলে ২৫ বছরের সেজান চৌধুরী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সেজান বড়। ছোটভাই পড়াশোনা করেন। একসময় শখের বশেই ছবি তুলতেন তিনি। সেই শখকেই পেশা হিসেবে নেন। প্রায় এক বছর ঢাকাতে কাজ করেছেন। এরপর গত তিন মাস ধরে মাদারীপুরের নিজ বাড়িতে চলে আসেন। আসার পর শহরের শকুনি লেকপাড়ে ঘুরতে আসা মানুষজনের ছবি তুলে আয় শুরু করেন।
প্রতিদিন বিকেল হলেই সেজান একটি ক্যামেরা নিয়ে লেকপাড়ে আসেন। লেকপাড়ে ঘুরতে আসা বিভিন্ন মানুষের ছবি তোলেন। প্রতিদিন তিনি গড়ে এক হাজার টাকার মতো আয় করেন। তবে প্রতি শুক্র ও শনিবার লেকপাড়ে মানুষজন বেশি হওয়ায়, তার আয়ও বেশি হয়। এছাড়াও অনেকেই বিয়ে, জন্মদিন, গায়ে হলুদসহ নানা অনুষ্ঠানে ছবি তোলার জন্য সেজানকে নিয়ে যান। এভাবেই তিনি মাদারীপুর শহরে খানিকটা ভিন্ন উপায়েই আয় করছেন।
আর্থিক সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে এইচএসসি পাসের পর আর পড়াশোনা চালানো সম্ভব হয়নি সেজানের। প্রথমে শখের বশেই প্রকৃতির এবং মানুষের ছবি তুলতেন। কিন্তু একসময় এই শখই হয়ে উঠলো আয়ের পথ। শুরুতে যখন তিনি লেকপাড়ে আসতেন তেমন একটা সাড়া পাননি। ধীরে ধীরে মানুষের নজরে পড়েন। শুরুতে দু’একজন ছবি তোলেন। তাদের দেখে অনেকেই এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখান। এখন এখানে ঘুরতে আসা অনেকেই তার মাধ্যমে ছবি তোলেন।
মাদারীপুর শহরের ডিসি ব্রীজ এলাকার ফারহানা ইমু বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমার ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানের আগে একদিন দেখলাম একজন ব্যক্তি ক্যামেরা হাতে লেকপাড়ের বিভিন্ন মানুষজনদের ছবি তুলে দিচ্ছেন। পরে আমি আমার ভাইয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানের ছবি তোলার জন্য ৩ হাজার টাকায় তাকে ঠিক করি। সে অনেক সুন্দরভাবে ছবিগুলো তুলে দিয়েছেন। তাছাড়া মাদারীপুরের শকুনি লেকপাড়, সার্কিট হাউজ, নদীর পাড়ে ভাই ও ভাবীকে নিয়ে ছবি তুলিয়েছি। অনেক ভালো হয়েছে।’
লেকপাড়ে ঘুরতে আসা সায়মা রহমান বলেন, ‘আমি বন্ধুদের নিয়ে লেকপাড়ে ঘুরতে এসেছি। এসে দেখলাম একজন ডিএসএলআর ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরে তাকে নিয়ে আমি ও আমার বন্ধুরা ছবি তুলেছি। মোবাইল দিয়ে ছবি তুললে বেশি ভালো হয় না। তাই যারা এই কাজে পারদর্শী ও বিশেষ করে ডিএসএলআর ক্যামেরায় ভালো ছবি তুলতে পারেন, তাদের কাছ থেকেই তুলি। পরে সেই ছবিগুলো যে যার মোবাইলে নিয়েছে।’
মাদারীপুরের স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা তারুণ্য পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা সোহাগ হাসান বলেন, ‘কুয়াকাটা, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন পর্যটন এলাকাগুলোতে ছবি তোলার জন্য ক্যামেরাম্যানদের দেখা যায়। কিন্তু আমাদের এই ছোট্ট শহর মাদারীপুরে এর আগে এমনটি দেখা যায়নি। এই প্রথম কেউ শকুনি লেকপাড়ে ক্যামেরা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং ছবি তুলে দেন। আসলে এটা একটা আয়ের ভালো মাধ্যম। তাকে দেখে এই কাজে অনেকেই এগিয়ে আসবেন।’
আরও পড়ুন
ডিম ছুড়ে প্রতিবাদ-ক্ষোভ প্রকাশ শুরু হয় কবে?
রোগ প্রতিরোধ ও সার্বিক চিকিৎসায় আয়ুর্বেদ
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/কেএসকে/এমএস