ছাত্রদের ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ বলেননি শেখ হাসিনা: স্টেট ডিফেন্স

2 hours ago 7

রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স কাউন্সেল) আমির হোসেন বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার বা রাজাকারের বাচ্চা’ বলেননি। বিষয়টি ভুল বোঝেছে শিক্ষার্থীরা।

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় গণহত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১-এ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আইনজীবী মো. আমির হোসেন।

আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, মামলায় শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। তারা কোনো ষড়যন্ত্র করেননি এবং তাদের শাস্তি দেওয়ার সুযোগ নেই।

শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ আখ্যায়িত করে হামলার উসকানি দেওয়ার বিষয়টি অভিযোগ সঠিক নয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার বা রাজাকারের বাচ্চা’ বলেননি। বিষয়টি ভুল বুঝেছেন শিক্ষার্থীরা।

তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী কখনো শিক্ষার্থীদের দাবির বিরোধিতা করেননি। প্রসিকিউশনের অভিযোগে বলা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্ররোচনায় পুলিশ গুলি করেছে, কিন্তু কোনো সাক্ষীর বর্ণনায় এমন কিছু দেখা যায়নি। ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনার অভিযোগও সঠিক নয়।

ড্রোন ও হেলিকপ্টার ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, চলমান আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের জন্য ড্রোন ব্যবহার অপরাধ নয়। ড্রোন ব্যবহারের মানে গুলি চালানো নয়; বরং যেখানে বেশি আন্দোলনকারী একত্রিত হয়ে ক্ষতি করতে পারে, সেই স্থান চিহ্নিত করে তাদের সরানো হয়েছে।

তিনি বলেন, হেলিকপ্টার থেকে গুলি হলে হাজার হাজার মানুষ হতাহত হতো—কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। কিছু স্থানে গুলির ভিডিও দেখা গেলেও তার নির্দেশ শেখ হাসিনা দেননি।

প্রসিকিউশনের দাখিল করা কল রেকর্ড সম্পর্কে আইনজীবী বলেন, শোনানো অডিওগুলোর বৈধতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। শুধু একটি সরকারি সংস্থার ফরেনসিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই এগুলোকে সঠিক বলা হচ্ছে। প্রতিটি অডিও রেকর্ডের প্রতিবেদন ভিন্ন একটি স্বতন্ত্র সংস্থা থেকে ক্রসম্যাচিং করা প্রয়োজন ছিল। এ মামলায় প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক ১৬ অক্টোবর শেষ হয়েছে।

প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম মামলার দুই আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। পাশাপাশি, তাদের অবৈধ সম্পত্তি ক্রোক করে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আবেদনও করেন তিনি। একই সঙ্গে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের শাস্তির বিষয়ে আদালতের ওপর ছেড়ে দেন তিনি।

গত ৮ অক্টোবর প্রসিকিউশনের পক্ষে সর্বশেষ ও ৫৪তম সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে আসামিপক্ষের জেরা শেষ হয়। আসামিরা পলাতক থাকায় আইন অনুযায়ী তাদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণের সুযোগ নেই।

ফলে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়েই এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এর পরের ধাপই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্কের পরেই মামলাটি রায়ের দিকে এগিয়ে যাবে।

গত ১২ অক্টোবর থেকে টানা পাঁচদিন প্রসিকিউশন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। এরপর ২০ অক্টোবর থেকে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন অসমাপ্ত থাকা অবস্থায় শুনানি বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।

এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন জন আসামি। তারা হলেন—সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তবে মামুন পরে রাজসাক্ষী হিসেবে হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তার সাক্ষ্য মামলায় অভিযোগ প্রমাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করে প্রসিকিউশন সূত্র।

এফএইচ/এমএএইচ/

Read Entire Article