ছানি অপারেশন করতে গিয়ে চোখ হারালেন বৃদ্ধা

9 hours ago 4

বয়সের কারণে চোখে ছানি পড়েছিল বৃদ্ধা সুফিয়া খাতুনের (৭০)। অপারেশনের মাধ্যমে ছানি দূর করতে সিরাজগঞ্জ শহরের সুলতানা ফ্যাকো সেন্টার নামে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে যান তিনি। যথারীতি ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. শফিউল আজম তার ছানি অপারেশনও করেন।

কিন্তু অপারেশনের পর ভুল চিকিৎসায় তার চোখ সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে ওই চোখটি তাকে ফেলে দিতে হয়েছে। 

এ ঘটনায় ভুল চিকিৎসায় চোখ নষ্ট হয়েছে দাবি করে ভুক্তভোগীর পক্ষে তার ছেলে এনামুল হক বকুল, জেলা প্রশাসক, সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। 

ভুক্তভোগী সুফিয়া খাতুন সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার একডালা গ্রামের বাসিন্দা। 

লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ ডিসেম্বর শহরের আই আই কলেজ রোডস্থ সুলতানা ফ্যাকো সেন্টারে ডা. শফিউল আজম সুফিয়া খাতুনের ডান চোখের ছানি অপারেশন করে। অপারেশনের পরদিন ১৪ ডিসেম্বর ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়ার পর থেকেই আর চোখে দেখতে পারেন না সুফিয়া। দু-দিন পর ১৬ ডিসেম্বর সুফিয়া ডা. শফিউল আজমের কাছে গেলে তিনি ওষুধ পরিবর্তন করে দেন। পরিবর্তিত ওষুধ সেবনেও কোনো কাজ না হওয়ায় দ্বিতীয় দফায় আবারও ডা. শফিউল আজমের চেম্বারে গেলে তার নির্দেশে ডা. ওয়াসিফ আল ইমরান চোখ দেখে ব্যবস্থাপত্র দেন। কিন্তু তাতেও উন্নতি না হলে ২৫ ডিসেম্বর সুফিয়াকে ঢাকায় রেফার করেন শফিউল আজম। 

পরে সুফিয়া খাতুনকে ঢাকায় বাংলাদেশ আই হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউটে নিয়ে গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, ভুল ছানি অপারেশনে ইনফেকশন হয়ে তার ডান চোখটা পচে গেছে। সেখানকার চিকিৎসকরা দ্রুত ডান চোখটি তুলে ফেলার পরামর্শ দিয়ে বলেন, নষ্ট হওয়া চোখ না তুললে বাম চোখটাও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। পরে অপারেশনের মাধ্যমে সুফিয়ার নষ্ট ডান চোখটি তুলে ফেলে দেওয়া হয়। 

সুফিয়া খাতুনের ছেলে এনামুল হক বকুল জানান, তার মা বর্তমানে ঢাকায় বাংলাদেশ আই হসপিটাল অ্যান্ড ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ডান চোখটি নষ্ট হওয়ার কারণে বাম চোখ দিয়ে কিছুটা দেখলেও সেটাতেও সমস্যা হচ্ছে। ডা. শফিউল আজম আমার মায়ের চোখ অপারেশনের পর চোখে না দেখতে পেলেও তিনি কালক্ষেপণ করে একই ধরনের চিকিৎসা চালিয়ে গেছেন। তার ভুল চিকিৎসার জন্য আজ আমার মায়ের চোখ হারাতে হলো। 

এনামুল অভিযোগ করে বলেন, ওই চিকিৎসক একজন মাদকাসক্ত। বিষয়টি আমরা আগে জানতাম না। এর আগেও নবদ্বীপ পুলের কাছে একজনের দুটি চোখ ভুল অপারেশনের মাধ্যমে নষ্ট করে দিয়েছে বলে জেনেছি। তদন্ত করলে তার ভুল অপারেশনে আরও চোখ নষ্টের ঘটনা বেরিয়ে আসবে। 

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে ডা. শফিউল আজমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। চেম্বারেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

সুলতানা ফ্যাকো সেন্টারের ম্যানেজার সোহেল রানার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, শফিউল আজম স্যার অনেক ছানি অপারেশন করেছেন। কিন্তু কখনোই এরকমটা হয় নাই। এই প্রথম এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। 

সিরাজগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নূরুল আমিন কালবেলাকে বলেন, ডা. শফিউল আজমের বিরুদ্ধে ভুল অপারেশনে চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

Read Entire Article