জগন্নাথ হলে ২২০০ ভোট, কার বাক্সে যাবে কতটি?

6 hours ago 4

আসন্ন ডাকসু নির্বাচনে আবাসিক হলভিত্তিক ভোটের হিসাবে ছাত্রদের হলগুলোর মধ্যে সবার ওপরে জগন্নাথ হল। হলটিতে মোট ভোটার দুই হাজার ২২৫ জন। এর চেয়ে বেশি ভোটার আর কোনো ছাত্রদের আবাসিক হলে নেই। ফলে ডাকসু নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে জগন্নাথ হলের ভোট।

প্রচার-প্রচারণার শেষদিনে চলছে ভোটের হিসাব-নিকাশ। তবে জগন্নাথ হলের ভোটের সমীকরণ করতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে অধিকাংশ প্রার্থী। বিশেষ করে প্রচারণায় এগিয়ে থাকা ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের ভিপি-জিএস-এজিএস প্রার্থীরা জগন্নাথ হল নিয়ে স্পষ্ট বার্তা পাচ্ছেন না।

ক্যাম্পাস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জগন্নাথ হলে সনাতনী শিক্ষার্থীরা থাকেন। তাদের ভোট ছাত্রশিবিরের প্যানেলে যাওয়ার সুযোগই নেই। ছাত্রদল ‘কিছু ভোট’ পেলেও খুব বেশি ভোট টানতে পারবে না। ভিপি পদে জগন্নাথ হলের দুজন প্রার্থী থাকলেও তারা তেমন আলোচনায় নেই। তাদের ভোট দেওয়াটা ‘গুরুত্বপূর্ণ’ নয় বলেও মতামত দিচ্ছেন অনেকে। এমন বাস্তবতায় জটিল হয়ে উঠেছে জগন্নাথ হলের ভোটের সমীকরণ।

যা বলছেন জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা
কার বাক্সে বেশি যেতে পারে জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট? হলটির বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেও ‘স্পষ্ট’ কোনো বার্তা পাওয়া যায়নি। তারা ‘যোগ্য প্রার্থীকে’ ভোট দেবেন বলে জানান। তবে জগন্নাথ হলের ‘ঐতিহ্য বজায়’ রেখে হলটির ভোটাররা ভোট দেবেন বলেও মন্তব্য করেন অনেক শিক্ষার্থী।

জগন্নাথ হল থেকে যেসব শিক্ষার্থীর মতামত নেওয়া হয়েছে, তাতে হলটিতে ছাত্রশিবিরের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম একটি ভোটও পাননি। জিএস পদে ফরহাদও সেখানে একটি ভোটও পাননি।- জরিপের তথ্য

জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী চিরনজিৎ মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভোট কাকে দেওয়া হবে, এটা তো বলা ঠিক না। ব্যক্তিগতভাবে আমি যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেবো।’

jagonews24

আশিক কুমার দাস নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘নারী প্রার্থীদের মধ্যে কেউ আসুক সেটা চাই আমি। সেক্ষেত্রে উমামা ফাতেমা ও শেখ তাসনিম আফরোজ ইমিকে বিবেচনায় রেখেছি। ভোট দিতে গেলে তাদের মধ্যেই কেউ আমার ভোটটা পাবেন।’

তবে জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীদের ‘সর্বজনীন প্রার্থী’ রয়েছে বলে জানান এক শিক্ষার্থী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘জগন্নাথ হল কমিনিউটির সঙ্গে ভালো যোগাযোগ এমন প্রার্থীকে আমরা ভোট দেবো। আমাদের সুযোগ-সুবিধা দেখবেন, বিপদে-আপদে পাশে থাকবেন; তেমন প্রার্থী আছে। তিনিই আমাদের সর্বজনীন প্রার্থী।’

জগন্নাথ হলের বেশি ভোট পেতে পারেন শামীম-উমামা-ইমি
স্বতন্ত্র প্রার্থী শামীম হোসেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের (বিসিএল) ঢাবি শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি দলীয় পরিচয়ে নিজেকে ‘ছাত্রলীগ’ বলতে নারাজ। এখন তিনি সব শিক্ষার্থীর।

জগন্নাথ হল থেকে সবচেয়ে বেশি ভোট পাবেন উমামা ফাতেমা। তারপরই রয়েছেন শামীম হোসেন ও ইমির নাম।- জরিপের তথ্য

সম্প্রতি একাধিক জরিপে দেখা যায়, জগন্নাথ হল থেকে যেসব শিক্ষার্থীর মতামত নেওয়া হয়েছে, তাতে হলটিতে ছাত্রশিবিরের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম একটি ভোটও পাননি। জিএস পদে ফরহাদও সেখানে একটি ভোটও পাননি।

ন্যারেটিভ ও সোচ্চার নামে দুটি সংগঠনের ওই জরিপ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও তার কিছুটা বাস্তবতা রয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষার্থীরা। ওই দুটি জরিপের একটিতে দেখা যায়, জগন্নাথ হল থেকে সবচেয়ে বেশি ভোট পাবেন উমামা ফাতেমা। তারপরই রয়েছেন শামীম হোসেন ও ইমির নাম।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে উমামা ফাতেমা বলেন, ‘শুধু জগন্নাথ নয়, হলগুলোতে থাকা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব শিক্ষার্থী প্রার্থী নির্ধারণে আমাকে বিবেচনা করবেন বলে আশা করছি। আমরা যেভাবে কাজ করেছি, তাতে অন্য ছাত্র হলগুলো এবং ছাত্রীদের পক্ষ থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি।’ বিষয়টি নিয়ে শামীম ও ইমির কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

জগন্নাথেও ভোটার আছে দাবি ছাত্রদল-শিবিরের!
জগন্নাথ হলে শিবিরের ভোট নেই—এমন জরিপ মানতে নারাজ ঢাবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি ও দলটির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের এজিএস প্রার্থী মহিউদ্দিন খান।

jagonews24

ঢাবি ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি সনাতন ধর্মের। জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলের বাংলাদেশপন্থি মনোভাবে সন্তুষ্ট। জরিপে যা-ই আসুক, আমাদের প্রত্যাশা—৯ তারিখের ভোটে জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা আবিদ-হামিম-মায়েদ পরিষদকে সমর্থন দেবে।- তানভীর আল হাদী মায়েদ

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘জগন্নাথ হলে আমরা প্রচারণা চালিয়েছি। তারা তাদের মনের কথা আমাদের কাছে খুলে বলেছেন। আমরা সেগুলো ইতিবাচকভাবে নিয়েছি। সেখানে আমাদের অনেক ভাই-বন্ধু আছে। তারা ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের প্যানেলের প্রার্থীদের ভোট দেবেন।’

জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা ছাত্রদল পছন্দ করে বলে দাবি করেন ছাত্রদল সমর্থিত এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ। বলেন, ‘ঢাবি ছাত্রদলের বর্তমান সভাপতি সনাতন ধর্মের। জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থীরা ছাত্রদলের বাংলাদেশপন্থি মনোভাবে সন্তুষ্ট। জরিপে যা-ই আসুক, আমাদের প্রত্যাশা—৯ তারিখের ভোটে জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা আবিদ-হামিম-মায়েদ পরিষদকে সমর্থন দেবে এবং তাদের মূল্যবান ভোট দেবে।’

এএএইচ/এমকেআর

Read Entire Article