জন্মভিটা হরিশপুরে আজও ছড়িয়ে রয়েছে লালন সাঁইয়ের স্মৃতি

1 day ago 9

মরমি সাধক লালন সাঁইয়ের শৈশবের স্মৃতিময় গ্রাম হরিশপুর। ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার সেই হরিশপুর গ্রামে আজও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে লালনের স্মৃতি। গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে লালনের গুরু ও শিষ্যদের মাজার। পুরো গ্রামে আজও লালনের দর্শন ও আদর্শের চিহ্ন টিকে রয়েছে মানুষের আচারে আহ্বানে।

সরেজমিন দেখা গেছে, হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হরিশপুর এক নিভৃত সবুজ ছায়াঘেরা নিবীড় পল্লী। গ্রামের মানুষগুলোর আচার আচরণেও যেন লালনের দর্শনের প্রতিচ্ছবি। গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে লালন সাঁইজির গুরু ও শিষ্যদের মাজার। এসব মাজার ঘিরে বছরের নির্দিষ্ট সময়ে চলে উৎসব। লালন সংগীত ও স্মরণোৎসবের আয়োজনে মেতে ওঠেন গ্রামের মানুষ। দূর-দূরান্ত থেকে লালন ভক্তরা ছুটে আসেন হরিশপুরে।

বাংলা পঞ্জিকার হিসেবে কার্তিক মাসের ২ তারিখ লালনের তীরোধান দিবস। দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় লালনের আখড়ায় চলে নানান আয়োজন। সেই আয়োজন ও উৎসবের রেশ ছড়িয়ে পড়ে হরিণাকুণ্ডুর হরিশপুরেও। ২ কার্তিক হরিশপুর গ্রামে লালনের স্মরণোৎসব সহ সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় প্রতি বছর।

জন্মভিটা হরিশপুরে আজও ছড়িয়ে রয়েছে লালন সাঁইয়ের স্মৃতি

এ বছরও লালনের তীরোধান দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেওয়া হয়েছে উদ্যোগ। জেলা প্রশাসন, লালন একাডেমি ও জেলা শিল্প কলা একাডেমির কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে কমিটি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হরিশপুর গ্রামে রয়েছে লালন একাডেমি। একাডেমির পাশেই রয়েছে লালনের আধ্যাত্মিক গুরু সিরাজ সাঁই ও তার স্ত্রীর মাজার। তবে মাজার প্রাঙ্গণে অবহেলা ও অযত্নের চিত্র দেখা গেছে। একই গ্রামে রয়েছে মরমি সাধক লালনের আধ্যাত্মিক শিষ্য পাঞ্জু সাঁইয়ের মাজার। দৃষ্টিনন্দন মাজার কমপ্লেক্সে রয়েছে তিনটি কবর। যে কবরের মাঝখানে পাঞ্জু সাঁই ও দুই পাশে পাঞ্জু সাঁইয়ের দুই স্ত্রীর কবর।

হরিশপুরের পার্শ্ববর্তী গ্রাম বেলতলা। এই গ্রামে রয়েছে লালনের আধ্যাত্মিক শিষ্য দুদ্দু শাহের মাজার। তার প্রকৃত নাম দবিরউদ্দিন মন্ডল। তবে লালন সাঁইয়ের কাছে দীক্ষা গ্রহণের পর তার নাম দেওয়া হয় দুদ্দু শাহ।

হরিশপুর গ্রামের স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা গোলাপ খোন্দকার জাগো নিউজকে জানান, লোকমুখে শুনেছি লালন ছোট বেলায় বসন্ত রোগে আক্রান্ত হন। পরে তাকে কুমার নদে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে আধ্যাত্মিক গুরু সিরাজ সাঁইজি লালনকে সেবা দিয়ে সুস্থ করেন। লালন যখন তরুণ বয়সে, তখন সিরাজ সাঁই তাকে বর দিয়ে বলেন, হরিশপুর ছেড়ে চলে যেতে এবং যেখানে সন্ধ্যা নামবে সেখানেই হবে লালনের আখড়া। লালন তার গুরুর কথামতো কুমার নদ বেয়ে চলতে থাকেন, পরে কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়া পৌঁছালে সন্ধ্যা নামে। পরে সেখানেই তিনি আখড়া প্রতিষ্ঠা করেন।

জন্মভিটা হরিশপুরে আজও ছড়িয়ে রয়েছে লালন সাঁইয়ের স্মৃতি

পাঞ্জু শাহ’র নাতি হরিশপুর লালন একাডেমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খোন্দকার ইসমত আরা বলেন, আমার বাবার দাদা ছিলেন লালনের আধ্যাত্মিক শিষ্য পাঞ্জু শাহ। আমাদের গ্রামের বাড়িতে এখনো পাঞ্জু শাহের মাজার রয়েছে। প্রতি বছর সিরাজ সাঁই, পাঞ্জু শাহ ও লালনের জন্ম ভিটাকে কেন্দ্র করে উৎসব চলে। প্রতি বছরের কার্তিক মাসের ২ তারিখে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।

লালন সাঁইয়ের তিরোধান দিবস বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, লালন সাঁইয়ের সাম্যবাদী চেতনা ও দর্শন মানবতার এক অনন্য পথনির্দেশক। ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হরিশপুর গ্রামে লালনের জন্মস্থান। তার শৈশব কেটেছে ওই গ্রামে। লালন সাঁই, তার গুরু সিরাজ সাঁই, শিষ্য পাঞ্জু শাহ ও দুদ্দু শাহের মাজার রয়েছে হরিশপুর গ্রামে। সেখানে একটি একাডেমি আছে। প্রতিবছর লালনের তিরোধান দিবসে হরিশপুর গ্রামে নানা আয়োজন হাতে নেওয়া হয়।

শাহজাহান নবীন/এফএ/এমএস

Read Entire Article