জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের আব্দুর রশিদ (জিতু)। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের মাজহারুল ইসলাম।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে এই ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান।
জাকসুর ২৫টি পদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক (জিএস), দুটি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ (এজিএস) ২০টি পদে জয় পেয়েছেন শিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের সদস্যরা।
- আরও পড়ুন
ডাকসুর পর জাকসুতেও শিবিরের চমক - জাকসু নির্বাচনে ভরাডুবি ছাত্রদলের
- একক প্রার্থী হিসেবে জাকসুতে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন কিরণ
এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদ এবং দুটি করে পদে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ (বাগছাস)–সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের প্যানেলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন।
ভিপি পদে জয়ী জিতু
ভিপি পদে জয়ী হয়েছেন গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ (জিতু)। তিনি পেয়েছেন তিন হাজার ৩৩৪টি ভোট। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক। আন্দোলনের আগে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের আরিফ উল্লাহ পেয়েছেন ২ হাজার ৩৯২ ভোট।
এ ছাড়া ভিপি পদে বাগছাসের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান (উজ্জ্বল) পেয়েছেন ১ হাজার ২১১ ভোট।
নির্বাচন বর্জন করা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের ও ছাত্রদলের মীর মশাররফ হোসেন হলের সভাপতি মো. শেখ সাদী হাসান পেয়েছেন ৬৪৮ ভোট।
- আরও পড়ুন
- জাকসুতে দুই পদে জয় পেলো বাগছাস
- শিবিরের প্যানেল থেকে অংশ নেওয়া সেই দম্পতি জয়ী
- আম্মুর পছন্দের মাজহারুল জাকসুর জিএস: জুলাইযোদ্ধা ফাইয়াজ
এছাড়া ভিপি পদে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের মুখপাত্র ও স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ প্যানেলের মো. মাহফুজুল ইসলাম (মেঘ) ১৩১ ভোট, সোহানুর রহমান ১১৫ ভোট, রাব্বি হোসেন (ফজলে রাব্বি) ৭০ ভোট, মো. আব্দুল মান্নান ৪২ ভোট ও মো. রাব্বি হোসেন ২৭ ভোট পেয়েছেন।
শিবির প্যানেলের বাইরে বিজয়ী অন্য যারা
ছাত্রশিবিরের প্যানেলের বাইরে ক্রীড়া সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মাহামুদুল হাসান কিরণ। তিনি সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার ৭৭৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় অনূর্ধ্ব ২৩ ফুটবল দলের খেলোয়াড়। বাংলাদেশের হয়ে এশিয়া কাপ ফুটসাল খেলতে এখন তিনি মালয়েশিয়ায়। এজন্য নিজের ভোটও দিতে পারেননি তিনি।
কিরণের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের মো. শফিউজ্জামান পেয়েছেন এক হাজার ২২১ ভোট ও ছাত্রদলের প্যানেলের উজ্জ্বল হাসান (রবিন) পেয়েছেন ৫৪৩ ভোট।
সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক পদে বাগছাসের জাবির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব আহসান লাবিব (১ হাজার ৬৯০ ভোট), সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী অভিনেতা মুহিবুল্লাহ শেখ (শেখ জিসান আহমেদ) (২ হাজার ১৮ ভোট) এবং কার্যকরী সদস্য (পুরুষ) পদে বাগছাসের মোহাম্মদ আলী চিশতী (২ হাজার ৪১৪ ভোট) জয়ী হয়েছেন।
জিএস পদে জয়ী মাজহারুল
জাবি শাখা ছাত্রশিবিরের অফিস ও প্রচার সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম তিন হাজার ৯৩০ ভোট পেয়ে জিএস পদে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাগছাসের জাবি শাখার সদস্যসচিব আবু তৌহিদ মো. সিয়াম পেয়েছেন ১ হাজার ২৩৮ ভোট। স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলনের মো. শাকিল আলী পেয়েছেন ৯৫৯ ভোট। নির্বাচন বর্জন করা ছাত্রদলের তানজিলা হোসাইন বৈশাখী পেয়েছেন ৯৪১ ভোট।
- আরও পড়ুন
জাকসুর ভিপি স্বতন্ত্রের জিতু, জিএস শিবিরের মাজহার - মালয়েশিয়া থেকে ফুটবলার কিরণ জানলেন ক্রীড়া সম্পাদক হওয়ার খবর
- জাকসুর নবনির্বাচিত ভিপি কে এই জিতু
এছাড়া জিএস পদে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের মো. শরণ এহসান ৩৯৭ ভোট, মো. তানবীর হোসেন ১৫৯ ভোট, সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া ১২৩ ভোট, জাবি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি (একাংশ) ও ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ প্যানেলের জাহিদুল ইসলাম (ঈমন) ১১০ ভোট ও আবু রায়হান কবির রাসেল ৬৪ ভোট পেয়েছেন।
এজিএস (নারী) পদে জয়ী আয়েশা
এজিএস (নারী) পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের আয়েশা সিদ্দিকা (মেঘলা) তিন হাজার ৪০২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাগছাস সমর্থিত প্যানেলের মালিহা নামলাহ পেয়েছেন এক হাজার ৮৩৬ ভোট। ১৩ নম্বর ছাত্রী হল শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আঞ্জুমান আরা ইকরা পেয়েছেন ৭৬৪ ভোট।
এছাড়া এজিএস (নারী) পদে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের ফারিয়া জামান (নিকি) ৭৩২ ভোট, ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ প্যানেলের সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সংগঠক সোহাগী সামিয়া জান্নাতুল ফেরদৌস ৬১০ ভোট ও লামিয়া রহমান তৈশী (পূর্ণতা) ৪৩৭ ভোট পেয়েছেন।
এজিএস (পুরুষ) পদে বিজয়ী ফেরদৌস
এজিএস (পুরুষ) পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ফেরদৌস আল হাসান দুই হাজার ৩৫৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাগছাসের প্যানেলের জিয়া উদ্দিন (আয়ান) পেয়েছেন দুই হাজার ১৪ ভোট। স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলনের তৌহিদুল ইসলাম ভূঁঞা (নিবির ভূঁঞা) পেয়েছেন ৭১৫ ভোট। ছাত্রদলের মো. সাজ্জাদ উল ইসলাম পেয়েছেন ৭০১ ভোট।
এজিএস (পুরুষ) পদে ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের নূর এ তামীম স্রোত ৫৭৪ ভোট, মো. আল ইমরান ৫৩৭ ভোট, মো. রাকিবুল হক ৩৮৬ ভোট, কাউসার আলম আরমান ৩৩৮ ভোট, মো. সজিব আহম্মদ (জেনিচ) ২০৫ ভোট ও মো. নাজমুল ইসলাম লিমন ১১৯ ভোট পেয়েছেন।
শিবিরের প্যানেল থেকে অন্য যারা জয়ী হলেন
শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে ছাত্রশিবিরের প্যানেল থেকে আবু উবায়দা (উসামা) দুই হাজার ৪২৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাসিবুল হাসান ইমন পেয়েছেন এক হাজার ৮৩৮ ভোট। শেখ লোকমান গালিব এক হাজার ৮২ ভোট, সুকান্ত বর্মণ ৭৩৮ ভোট, বাগছাসের প্যানেলের ফারহানা বিনতে জিগার ফারিনা ৫৯২ ভোট, ছাত্রদলের প্যানেলের ইয়ামিন হাওলাদার ৪৩৫ ভোট, কাজী মাশনুর হোসেন মৌশি ২৫৯ ভোট, সৈয়দ মেহের আফরোজ (শাঁওলি) ২৩৬ ভোট ও তানজিল আহাম্মদ ১২১ ভোট পেয়েছেন।
এ ছাড়া ছাত্রশিবিরের প্যানেল থেকে পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক পদে সাফায়েত মীর (২৮১১ ভোট), সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে জাহিদুল ইসলাম (১৯০৭ ভোট), সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মোহাম্মদ রায়হান উদ্দিন (১৯৮৬ ভোট), নাট্য সম্পাদক পদে রুহুল ইসলাম (১৯২৯ ভোট), সহ-ক্রীড়া সম্পাদক পদে মো. মাহাদী হাসান (২১০৫), সহ-ক্রীড়া (নারী) সম্পাদক পদে ফারহানা আক্তার (১৯৭৬ ভোট), তথ্যপ্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক পদে মো. রাশেদুল ইসলাম (২৪৩৬ ভোট), সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (পুরুষ) পদে তৌহিদ হাসান (২৪৪২ ভোট), সহ-সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (নারী) পদে নিগার সুলতানা (২৯৬৬ ভোট), স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা সম্পাদক পদে হুসনী মোবারক (২৬৫৩ ভোট), পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক পদে তানভীর রহমান (২৫৫৯ ভোট), কার্যকরী সদস্য (নারী) পদে নুসরাত জাহান ইমা (৩০১৪ ভোট), ফাবলিহা জাহান নাজিয়া (২৪৭৫ ভোট), নাবিলা বিনতে হারুন (২৭৫০ ভোট) এবং কার্যকরী সদস্য (পুরুষ) পদে হাফেজ তারিকুল ইসলাম (১৭৪৬ ভোট) ও মো. আবু তালহা (১৮৫৪ ভোট) জয়ী হয়েছেন।
এএমএ/এমএমএআর/জেআইএম