জাকসুতে শিবির ছাড়া অন্য দলের বিজয়ী হলেন যারা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে ২৫টি পদের মধ্য ২১টিতেই শিবিরের প্যানেলের প্রার্থীরা নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছেন। এছাড়া দুটি পদে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) প্রার্থীরা দুটি পদে ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তিনটি পদে জয় পেয়েছেন।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে সিনেট ভবনে এ ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে, ভিপি পদে নির্বাচিত হয়েছেন আব্দুর রশিদ জিতু। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। জিতু ৩ হাজার ৩৩৪ ভোট পেয়েছেন। আর ৩ হাজার ৯৩০ ভোট পেয়ে জিএস নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্র শিবির সমর্থিত প্যানেলের মো. মাজহারুল ইসলাম। তিনি ইংরেজি বিভাগের(৪৮তম ব্যাচ) মাস্টার্স শিক্ষার্থী।
এ ছাড়া সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের (৪৯ ব্যাচ) মাস্টার্স শিক্ষার্থী ফেরদৌস আল হাসান, এজিএস (ছাত্রী) পদে দর্শন বিভাগের (৪৮ ব্যাচ) মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা। পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে ফার্মেসি বিভাগের আবু উবায়দা উসামা, পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সম্পাদক পদে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সাফায়েত মীর, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ইংরেজি বিভাগের জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি।
জাকসু নির্বাচনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছে শেখ জিসান আহমেদ, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের রায়হান উদ্দিন, নাট্য সম্পাদক হিসেবে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের রুহুল ইসলাম, ক্রীড়া সম্পাদক পদে বাংলা বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের মাহমুদুল হাসান কিরণ, সহ-ক্রীড়া (ছাত্র) পদে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের মাহাদী হাসান, সহ-ক্রীড়া (ছাত্রী ) পদে গণিত বিভাগের ফারহানা লুবনা।
এ ছাড়া আইটি ও গ্রন্থাগার পদে ফার্মেসি বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের রাশেদুল ইমন লিখন, সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন পদে আহসান লাবিব, সহ-সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন পদে মাইক্রোবায়োলজি (ছাত্র) তৌহিদ ইসলাম, সহ-সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন (ছাত্রী) পদে ফার্মেসি বিভাগের নিগার সুলতানা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের হুসনী মোবারক, পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক পদে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের তানভীর রহমান মনোনীত হয়েছেন । এছাড়াও কার্যকরী সদস্য পদে রয়েছেন - ফাবলিহা জাহান, নাবিলা বিনতে হারুন, নুসরাত জাহান ইমা , হাফেজ তরিকুল ইসলাম, আবু তালহা, ও মোহাম্মদ আলী চিশতী।
নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে বাগছাসের প্রার্থীরা হলেন, কার্যকরী সদস্য পদে মোহাম্মদ আলী চিশতী েএবং সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন সম্পাদক পদের আহসান লাবিব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী।
এছাড়া তিন পদে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তারা হলেন, সহ-সভাপতি (ভিপি) আবদুর রশিদ জিতু, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শেখ জিসান আহমেদ এবং ক্রীড়া সম্পাদক বাংলা বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের মাহমুদুল হাসান কিরণ।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ওইদিন রাত সোয়া ১০টা থেকে ভোট গণনা শুরু হলেও তা এখনো চলমান। এবার মোট ভোট পড়েছে প্রায় ৬৭-৬৮ শতাংশ।
জাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৪৩ জন। ছাত্রদের হলের মধ্যে আল বেরুনী হলে ভোটার ২১০ জন, আ ফ ম কামালউদ্দিন হলে ৩৩৩ জন, মীর মশাররফ হোসেন হলে ৪৬৪ জন, শহীদ সালাম-বরকত হলে ২৯৮ জন, মওলানা ভাসানী হলে ৫১৪ জন, ১০ নম্বর ছাত্র হলে ৫২২ জন, শহীদ রফিক-জব্বার হলে ৬৫০ জন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ৩৫০ জন, ২১ নম্বর ছাত্র হলে ৭৩৫ জন, জাতীয় কবি নজরুল হলে ৯৯২ জন এবং তাজউদ্দীন আহমদ হলে ৯৪৭ জন ভোটার রয়েছেন।
ছাত্রীদের হলের মধ্যে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ২৭৯ জন, জাহানারা ইমাম হলে ৩৬৭ জন, প্রীতিলতা হলে ৩৯৬ জন, বেগম খালেদা জিয়া হলে ৪০৩ জন, সুফিয়া কামাল হলে ৪৫৬ জন, ১৩ নম্বর ছাত্রী হলে ৫১৯ জন, ১৫ নম্বর ছাত্রী হলে ৫৭১ জন, রোকেয়া হলে ৯৫৬ জন, ফজিলাতুন্নেছা হলে ৭৯৮ জন এবং তারামন বিবি হলে ৯৮৩ জন ভোটার রয়েছেন।
এবার প্রায় ৬৭-৬৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ২৫টি পদে লড়েছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। ভিপি পদে ৯ ও জিএস পদে ৮ জন প্রার্থী ছিলেন। ছাত্রীদের ১০টি আবাসিক হলে ১৫০টি পদের মধ্যে ৫৯টিতে কোনো প্রার্থী ছিলেন না। একজন করে প্রার্থী ছিলেন ৬৭টি পদে। সে হিসাবে মাত্র ২৪টি পদে ভোট নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলের মধ্য ২টি হলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন।