আমাদের দেশে অনেক রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন জাকাতদাতাতের কাছ থেকে জাকাত সংগ্রহ করে জাকাত তহবিল গঠন করে থাকে। জাকাত আদায় হওয়ার জন্য এ রকম জাকাত তহবিলের অর্থ জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিদের কাছে দান হিসেবে পৌঁছে দেওয়া অর্থাৎ জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিদের ওই অর্থের মালিক বানিয়ে দেওয়া জরুরি।
জাকাত তহবিল থেকে ঋণ দিলে জাকাত আদায় হয় না। ঋণগ্রহীতা জাকাত নেওয়ার উপযুক্ত হলেও জাকাত আদায় হয় না। আর যদি জাকাত আদায়ের উদ্দেশ্য ছাড়া ঋণ দেওয়া হয়, ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ করলে তা দান করে দেওয়া হবে এ রকম উদ্দেশ্য থাকে, তাহলেও ঋণ দেওয়া জায়েজ নয়।
কারণ এ রকম তহবিল যারা পরিচালনা করেন, তাদের কাছে জাকাতের টাকা জাকাতদাতাদের পক্ষ থেকে আমানত হিসেবে থাকে। তাদের কর্তব্য ওই অর্থের যথাযথ সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তা যতো দ্রুত সম্ভব জাকাত গ্রহণকারীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যেন জাকাতদাতাদের জাকাত আদায় হয়ে যায়। জাকাত তহবিল থেকে ঋণ দেওয়ার মানে হলো ওই অর্থগুলোর সংরক্ষণ নিশ্চিত না করা এবং সেগুলোকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া। জাকাত তহবিল পরিচালকরা এটা করতে পারেন না।
নাজায়েজ হওয়ার পরও জাকাত তহবিল থেকে যদি ঋণ দেওয়া হয়, পরে ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ করে, তাহলে ওই অর্থ জাকাত গ্রহণের উপযুক্ত ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে দিলে জাকাত আদায় হয়ে যাবে। আর ঋণগ্রহীতার অসামর্থ্য বা অবহেলা ও দায়িত্বহীনতার কারণে যদি ওই টাকা ফিরে না আসে, তাহলে জাকাত তহবিল পরিচালকদের নিজেদের পক্ষ থেকে ওই টাকা পরিশোধ করে তা জাকাত হিসেবে আদায় করতে হবে।
জাকাত ইসলামের ফরজ বিধান, ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের একটি। প্রত্যেক স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক ও সম্পদশালী মুসলমান পুরুষ ও নারীর প্রতি বছর নিজের সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ দরিদ্র-দুস্থদের মধ্যে বিতরণের নিয়মকে জাকাত বলা হয়। শরিয়ত নির্ধারিত সীমার বেশি সম্পদ হিজরি এক বছর ধরে কারও কাছে থাকলে তাকে সম্পদশালী গণ্য করা হয় এবং তার বর্ধনশীল সম্পদের ২.৫ শতাংশ বা ১/৪০ অংশ দান করতে হয়। কোরআনে জাকাত শব্দের উল্লেখ এসেছে ৩২ বার, নামাজের পর জাকাতের কথাই সবচেয়ে বেশি বলা হয়েছে।
মোট আট শ্রেণির মানুষকে জাকাত দেওয়া যায়:
১. ফকির; যার কিছুই নেই।
২. মিসকিন; যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই।
৩. জাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী।
৪. আর্থিক সংকটে থাকা নওমুসলিম।
৫. ক্রীতদাস। (মুক্ত হওয়ার জন্য)
৬. ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি।
৭. আল্লাহর পথে জিহাদে রত ব্যক্তি।
৮. মুসাফির; স্বদেশে ধনী হলেও যিনি ভ্রমণকালে অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
জাকাত ব্যয়ের খাতগুলো বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, নিশ্চয় সদকা হচ্ছে দরিদ্র ও অভাবীদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; তা বণ্টন করা যায় দাস আজাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। (সুরা তওবা: ৬০)
ওএফএফ/এএসএম