জামালপুর জেলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী খাবার মিল্লি। এই অঞ্চলের সবচেয়ে সুস্বাদু ও জনপ্রিয় খাবার এটি। আঞ্চলিক ভাষায় এই খাবারকে অনেকে ম্যান্দা বা মিলানি ও পিঠালি নামেও ডাকেন। মিল্লির নাম শুনলেই কেন জিভে পানি চলে আসে, যে একবার এই খাবারের স্বাদ নিয়েছে সেই বলতে পারবে।
মিল্লি প্রতিদিনের সাধারণ খাবার নয়। কেউ মারা গেলে ৪০ দিনের দিন যে দোয়ার আয়োজন করা হয়, তাকে আঞ্চলিক ভাষায় বেপার বলা হয়। এই উপলক্ষে সেদিন সব শ্রেণির মানুষ একসঙ্গে বসে কলাপাতায় গরম ভাতের সঙ্গে গরম গরম মিল্লি খান।
এছাড়া এই অঞ্চলের মুসলমানেরা বিয়ে, আকিকা, খতনাসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে মিল্লির আয়োজন করেন। মিল্লি ভাত ছাড়াও রুটি দিয়েও খাওয়া যায়। দেশজুড়ে মিল্লির স্বাদ ছড়িয়ে পড়ার কারণে বর্তমানে জেলার বিভিন্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্টেও এই খাবার পাওয়া যায়।
তবে আপনি এই অঞ্চলের বাসিন্দা না হয়েও ঘরে বসেই নিতে পারবেন মজাদার এই খাবারের স্বাদ। ঘরেই তৈরি করতে পারেন এটি। ঈদ বা বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে পরিবার বা আত্বীয়-স্বজনের মাঝে মিল্লি খাবার পরিবেশন করে চমকে দিতে পারেন।
মিল্লি তৈরিতে প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয় গরুর মাংস আর চালের গুঁড়া। তবে খাসি ও মহিষের মাংস দিয়েও রান্না করা যায়। এছাড়া ঘরে থাকা উপকরণেই রান্না করতে পারবেন এই ঐতিহ্যবাহী খাবারটি।
আজ তাহলে জেনে নেওয়া যাক কীভাবে বাসায় সুস্বাদু মিল্লি তৈরি করবেন-
উপকরণ
১. গরুর মাংস ১ কেজি
২. পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ
৩. রসুনবাটা ২ টেবিল চামচ
৪. আদাবাটা ২ টেবিল চামচ
৫. জিরাবাটা ২ টেবিল চামচ
৬. হলুদ ১ টেবিল চামচ
৭. ধনিয়াবাটা দেড় টেবিল চামচ
৮. মরিচবাটা ১ টেবিল চামচ
৯. কাঁচা মরিচ ১ টেবিল চামচ
১০. সয়াবিন তেল ১ কাপ
১১. তেজপাতা ৪ টি
১২. বড় এলাচি ৩ টি
১৩. ছোট সাদা এলাচি ৬ টি
১৪. দারুচিনি ৫ টি
১৫. লবণ পরিমাণ মতো
১৬. চালের গুঁড়া ২৫০ গ্রাম
১৭. আলু ২টি
মিল্লির প্রস্তুত প্রণালি
মিল্লি রান্নার জন্য মাংসের টুকরাগুলো একটু বড় করে কেটে ভালোভাবে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। এরপর একটি হাঁড়িতে মাংসের সঙ্গে হলুদ, মরিচ, জিরা ভাজা, লবণ, রসুনবাটা ও আদাবাটা নিতে হবে। এসব উপকরণ একসঙ্গে তেল দিয়ে ভালোভাবে মেখে নিতে হবে। আপনি চাইলে কয়েক টুকরো আলুও নিতে পারেন। মাখানোর সময় আলাদা একটা সুগন্ধি তৈরি হবে। মাখানোর পর সেই অবস্থায় কমপক্ষে ২৫-৩০ মিনিট রেখে দিতে হবে।
এরপর চুলায় হাঁড়ি চাপিয়ে মসলা মাখানো মাংস দিয়ে দিন। হাঁড়িতে পরিমাণমতো পানি দিয়ে জ্বাল দিতে থাকুন। এভাবে ৩০-৪০ মিনিট চুলায় রাখতে হবে। এরপর পানি কিছুটা শুকিয়ে আসলে গরম পানি দিয়ে আরও কিছু সময় জ্বাল করতে হবে।
মাংস ভালোভাবে সেদ্ধ করার জন্য ঢাকনা দিয়ে হাঁড়ি ঢেকে রাখতে হবে। এর মাঝেই হাঁড়িতে পেঁয়াজ কুচি, গরম মসলার গুঁড়া, এলাচি, ধনে, গোলমরিচ, জয়ত্রী ও এলাচি গুঁড়া দিয়ে মাংস ভালোভাবে কষিয়ে নিতে হবে। যা খাবারের স্বাদকে বাড়িয়ে তুলবে। এসব উপকরণ দেওয়ার কিছু সময় পর আরও একবার পরিমাণমতো গরম পানি দিতে হবে। এরপর হাঁড়ি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মতো অপেক্ষা করুন। এ সময়ে মাংস একদম পুরোপুরি রান্না হয়ে যাবে এবং চারদিকে সুস্বাদু ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়বে।
এরপর এর মধ্যেই চালের গুঁড়া দিয়ে কিছু সময় নাড়াচাড়া করলেই প্রস্তুত হয়ে যাবে মজাদার মিল্লি। তবে নাড়াচাড়া ঠিক মতো করতে হবে, না হলে চালের গুঁড়া গুটি গুটি হয়ে যাবে। এদিকে আলাদা হাঁড়িতে রসুন কুচি, পেঁয়াজ কুচি, আধা চা-চামচ জিরা ও আধা চা-চামচ মেথি দিয়ে বাগাড় দিতে হবে। এরপর বাগাড় মিল্লির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে, এতেই পূর্ণতা পায় মিল্লির আসল স্বাদ। সেই সু-ঘ্রাণই আপনাকে খাবারের দিকে টানবে।
গরম গরম ভাতের সঙ্গে মিল্লি পরিবেশন করলেই মিলবে আসল স্বাদ। এছাড়া রুটি দিয়েও খাওয়া যায়।
কেএসকে/এএসএম