জার্মানিতে বেড়েই চলেছে মানবপাচার

9 hours ago 7

ইউরোপের দেশ জার্মানিতে বেড়েই চলেছে মানবপাচারের ঘটনা। জার্মান পুলিশের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে দেশটিতে রেকর্ড সংখ্যক মানবপাচারের ঘটনা ঘটেছে।

পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর জার্মানিতে কমপক্ষে ৮৬৮টি মানবপাচারের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। এসব ঘটনায় অর্ধেকের মতো ভুক্তভোগী পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো থেকে এসেছেন।

পাচারের অনেক ঘটনায় ভুক্তভোগী পক্ষের কেউ পুলিশের কাছে রিপোর্ট করেন না। তাই সমস্যার প্রকৃত মাত্রা নির্ণয় করাও কঠিন হয়ে পড়ে।

অনুমান করা হয়, রিপোর্ট না হওয়া পাচারের সংখ্যা নেহাত কম নয়। কারণ, পাচারের শিকার অনেক বিদেশি নাগরিকেরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন, শঙ্কায় থাকেন।

এসব তথ্য সামনে এনেছে জার্মানির মানবপাচারবিরোধী ফেডারেল কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (কেওকে)। মানবপাচার ও সংশ্লিষ্ট অপরাধে ভুক্তভোগীদের পরামর্শ দিয়ে থাকে এই সংস্থাটি। পাচারের তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রেও তাদের রয়েছে নিজস্ব পদ্ধতি।

জার্মানির ফেডারেল ক্রিমিনাল পুলিশ অফিসের মতে, সংখ্যাটি কিছুটা কম। তারা বলছে, ২০২৪ সালে ৬৫০টি মানবপাচার সংক্রান্ত মামলার বিচার কাজ চলছিল। এগুলোর মধ্যে ৫৭৬টি ওই বছরে নিষ্পত্তি হয়েছে।

কেওকে বলছে, জার্মানিতে মানবপাচার সংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ ঘটনাই যৌন শোষণের সঙ্গে সম্পর্কিত। এর মধ্যে জোরপূর্বক দেহব্যবসাও রয়েছে। ফলে, নারীরাই বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন।

জার্মানির অবস্থা সামগ্রিক ঘটনার তুলনায় নগণ্য

জার্মানিতে মানবপাচারের ঘটনায় মামলার সংখ্যাও বেড়ছে। ২০২৪ সালে নিষ্পত্তি হওয়া ৫৭৬টি মামলা একটি নতুন রেকর্ড। ২০২৩ সালেও এ সংক্রান্ত ৫০৯টি মামলা সফলভাবে নিষ্পত্তি হয়েছিল।

বিদেশি নাগরিকদের মধ্যে যৌন পাচারের সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছেন চীনের নাগরিকেরা। এ সংক্রান্ত ৫৫টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। এরপরেই আছে বুলগেরিয়া (৫৩টি) এবং রোমানিয়ার (৪৭টি) নাম।

অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য ও গবেষণা প্ল্যাটফর্ম মেডিয়েনডিনস্ট ইন্টেগ্রেশন জানিয়েছে, সব ধরনের পাচারের (যৌন, শ্রম ও জোরপূর্বক বিয়ে) প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিকার হয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশের নাগরিকেরা। এক-তৃতীয়াংশ ছিলেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা এবং এক-তৃতীয়াংশ জার্মান নাগরিক।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশন-এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বিশ্বের অন্তত পাঁচ কোটি মানুষ মানবপাচারের শিকার হয়েছেন।

পাচারকারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগে অনীহা

মেডিয়েনডিনস্ট ইন্টেগ্রেশন বলছে, পরিসংখ্যানে যে সংখ্যাই উঠে আসুক না কেন, প্রকৃত ভুক্তভোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে। এর পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে বলেও মনে করে সংস্থাটি।

এই কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে: পাচারের শিকার অনেকে বুঝতেই পারেন না যে তারা শোষণের শিকার; আইনি জটিলতা, অনিশ্চিত আবাসিক অবস্থানের কারণে অনেকে কর্তৃপক্ষের কাছে যেতেও ভয় পান এবং পাচারকারীরা সুযোগ পেলে প্রতিশোধ নিতে পারে বলেও আশঙ্কাও করেন অনেকে।

জার্মানির অন্যতম প্রধান নিউজ বুলেটিন টাগেসশাউ-এর একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক ভিয়েতনামী শিক্ষানবিশ জার্মানিতে আসার কিছুদিনের মধ্যে নিখোঁজ হয়ে যান। ধারণা করা হয়, তারা শুরু থেকেই প্রশিক্ষণের ছদ্মবেশে পাচারের শিকার হন।

সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস

এমআরএম/এএসএম

Read Entire Article