জৌলুশ হারিয়েছে নিতাইগঞ্জ, ভালো নেই শ্রমিকরা

2 hours ago 3

দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসাকেন্দ্র ছিল ‌‘প্রাচ্যের ডান্ডি’ খ্যাত নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি বাজারের পরই ছিল নিতাইগঞ্জের অবস্থান। লবণ, চিনি, চাল, ডাল, তেল, গম, আটা, ময়দা ও ভুসির জন্য প্রসিদ্ধ ছিল নিতাইগঞ্জে। সেইসঙ্গে এমন কোনো ব্যবসা ছিল না যেটা এখানে হতো না।

কিন্তু বর্তমানে আগের মতো জমজমাট ব্যবসা আর এখানে হয় না। প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো এই বাজারের ব্যবসায়ীরা দৈন্যদশায় আছেন। আগের মতো লোড আনলোড শ্রমিকদের ব্যস্ততাও আর নেই। তাদের আয় কমে প্রায় তিনগুণে নেমে এসেছে।

নিতাইগঞ্জের জয় ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক কৃষ্ণ বাবু জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ৩৫ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করে আসছি। আগে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকে মাল লোড-আনলোড হতো, এখন তার অর্ধেকও হয় না। আগে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বেচাকেনা হতো। এখন ব্যবসার কর্মব্যস্ততায় ভাটা পড়েছে। ক্রেতাও অনেক কমে গেছে।’

ভাই ভাই ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক পরিতোষ সাহা বলেন, ‘নব্বইয়ের দশক থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ছিল সোনালি সময়। তখন দিনে শতাধিক ট্রাক মাল আসতো, এখন ৩০-৪০টি ট্রাকও আসে না। বড় বড় করপোরেট কোম্পানি সরাসরি বাজারে আসায় আমাদের মতো মাঝারি ব্যবসায়ীদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

লোড আনলোড শ্রমিক হারুনুর রশিদ বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা দুর্যোগের মধ্যে আছে। সেই প্রভাব শ্রমিকদের মধ্যে পড়েছে। শ্রমিকরা খুব কষ্টের মধ্যে আছে। আগে যে পরিমাণ আয় হতো, তার দুই ভাগই কমে গেছে। যে আয় হয় সেই আয় সংসার চালানোর মতো পরিবেশ নেই। ব্যবসায়ীদের ব্যবসাও দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে।’

জৌলুশ হারিয়েছে নিতাইগঞ্জ, ভালো নেই শ্রমিকরা

একইভাবে শ্রমিক সারোয়ার খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে হাজার টাকা আয় করলেও চলা যায় না। আগে ৫০০ টাকা আয় করলেও ভালোভাবে চলতে পারতাম। একজন শ্রমিকের চলার জন্য ন্যূনতম আয় হয় না। এজন্য অনেক শ্রমিক কাজ ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে।’

আরও পড়ুন:
শাহজালালে আগুনে ক্ষতির পরিমাণ এখনই বলা যাচ্ছে না
‘আমার ৭ কোটি টাকার মালামাল পুড়ে শেষ’
কাঁচাপাটের সংকট, রপ্তানি বন্ধ চান ব্যবসায়ীরা

ডাইলপট্টি লোড আনলোড শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর খান। তিনি বলেন, ‘একসময় নিতাইগঞ্জের লবণ, ডাল ও ময়দা ব্যবসায়ীরা খুব ভালো অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু এখন নারায়ণগঞ্জে লবণ ব্যবসায়ী নেই বললেই চলে। ডাল ও ময়দা ব্যবসায়ীরা কোনোরকম টিকে আছেন।’

ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নে শ্রমিকের সংখ্যা ৮৫৭ জন। কিন্তু বর্তমানে এ সংখ্যা চারশোর নিচে নেমে গেছে। ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ যাচ্ছে।’

‘যদি ব্যবসা-বাণিজ্য না থাকে, তাহলে শ্রমিকরা কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করবেন’ প্রশ্ন রেখে এই শ্রমিক নেতা বলেন, ‘অনেক শ্রমিক আমাদের কাছে এসে তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা বলেন। আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে থাকেন। এটা চলতে থাকলে শ্রমিক টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হয়ে যাবে।’

বর্তমানে গমের ব্যবসাটা ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করলেন বাংলাদেশ ইয়ার্ন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক মাজহারুল ইসলাম জোসেফ।

তিনি বলেন, ‘মানুষের আয়ের সঙ্গে সঙ্গে বাজারজাতের জায়গা সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। শ্রমিকের ব্যস্ততা ও আয়ও কমে গেছে। নতুন সরকার এলে হয়তো ব্যবসা-বাণিজ্য ত্বরান্বিত হবে।’

নিতাইগঞ্জ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি শংকর সাহা বলেন, ‘নিতাইগঞ্জে আগে যে জৌলুশ ছিল সেটা না থাকার পেছনের কারণ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। বর্তমানে দেশে একটা স্থিতিশীল (নির্বাচিত) সরকার প্রয়োজন। স্থিতিশীল সরকার এলে মানুষের মাঝে আস্থা আসবে। নিতাইগঞ্জও আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।’

এসআর/জেআইএম

Read Entire Article