ঝলসে যাচ্ছে বোরোর সবুজ পাতা
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে দীর্ঘদিন ধরে কোনো বৃষ্টিপাত হচ্ছে না এবং সেচ পানির তীব্র সংকটে বোরো ফসলি জমির মাটি শুকিয়ে চৌচির হয়ে পড়েছে। মাঠেই ঝলসে লাল হয়ে যাচ্ছে বোরো ধানের সবুজ পাতা। বৃষ্টিপাত না হলে বোরো ধান উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় হাওরপাড়ের কৃষকরা।
এ বিষয়ে স্থানীয় কৃষকরা জানান, দেশি জাতের ধান চাষাবাদে সেচ পানির তেমন কোনো প্রয়োজন হয় না। কিন্তু হাইব্রিড জাতীয় ও উচ্চফলনশীল ধান চাষাবাদে প্রচুর সেচ পানির প্রয়োজন পড়ে। ফলে একদিকে যেমন সেচ সুবিধা নেই, অন্যদিকে বৃষ্টি না হওয়ায় ফলন বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে শনি, মাটিয়ান, মহালিয়া, দরুন, আঙ্গারুলি হাওরসহ উপজেলার ২৩টি ছোট-বড় হাওরের ১৭ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির ইরি বোরো ফসল।
বিভিন্ন হাওর ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ হাওরগুলোতে সেচ পানি দেওয়ার কোনোরূপ ব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন হাওরে নদী তীরবর্তী স্থানে সামান্য জমি রয়েছে। সে জমিগুলোতে যত সামান্য পানি দেওয়া যায়। অপরদিকে সেচ মৌসুমের আগেই নদী নালা, খাল, বিল জলাশয় শুকিয়ে যায়। ফলে বৃষ্টির পানির অপেক্ষায় বসে থাকতে হয় কৃষকদের।
বর্তমানে হাওরে হাওরে কৃষকের রোপণ করা জমিতে পানির অভাবে ধান গাছের পাতা ঝলসে লাল হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা আরও কিছুদিন চলমান থাকলে বোরো উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন হাওড় পারের কৃষক।
উপজেলার বৃহৎ বোরো ফসল উৎপাদনে হাওর শনি মাটিয়ান, মহালিয়া, আঙ্গারুলি অন্যতম। কিন্তু কোনো একটি হাওরে বড় কোনো সেচ পাম্প নেই। না থাকার কারণ হিসেবে কৃষকরা জানান, মাটির নিচে পানির স্তর অনেক গভীরে হওয়ায় সেচ পাম্প বসাতে অনেক টাকা খরচ হয় তাদের। সে কারণে তারা সেচ পাম্প বসাতে পারছেন না।
শনি হাওর পাড়ের উজান তাহিরপুর গ্রামের কৃষক ইয়াছিন মিয়া জানান, শনি হাওরের মধ্যবর্তী স্থানে এবার ২৬ কেয়ার (৩০ শতকে ১ কেয়ার) জমিতে বিভিন্ন ধরনের উচ্চ ফলনশীল ধান রোপণ করেছেন। কিন্তু জমিতে সেচ দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় শুধু বৃষ্টির অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি। মধ্য তাহিরপুর গ্রামের মোতাহার হোসেন বলেন, তাদের গ্রামের পার্শ্ববর্তী খলায় দুটি সেচ পাম্প থাকলেও সেগুলো কাজে আসছে না।
একই অবস্থার কথা জানালেন মাটিয়ান হাওরপাড় রতনশ্রী গ্রামের কৃষক নজু মিয়া। তিনি জানান, বৌলাই নদীতে সামান্য পানি থাকলেও তার জমি মাটিয়ান হাওরের মধ্যবর্তী অনেক দূরে থাকায় তিনি সেচ পানি দিতে পারছেন না। তাই তিনিও বৃষ্টির অপেক্ষাই করছেন।
গোবিন্দশ্রী গ্রামের সেলিম আখঞ্জি বলেন, এ বছর ১২ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ধান রোপণ করেছেন। তার জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য ২০২২ সালে একটি পাম্প বসিয়েছিলেন। তিন বছর ধরে সেচ পাম্পটি কোনো কাজে আসছে না। বৃষ্টি না হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে, যার কারণে এই পাম্প ব্যবহার করে সেচ দেওয়া যাচ্ছে না।
এ সমস্যার বিষয়ে তাহিরপুর সদরের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহিমা আক্তার কালবেলাকে বলেন, বোর জমিতে প্রচুর পরিমাণ পানির প্রয়োজন। কিন্তু পানির কোনো ব্যবস্থা না থাকায় কৃষক জমিতে পানি দিতে পারছেন না। সময় মতো বৃষ্টি না হলে হাওর অধ্যুষিত এই অঞ্চলে চলতি মৌসুমে ধান উৎপাদনে ভাটা পড়বে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরিফুল ইসলাম কালবেলাকে জানান, সেচ সংকটের কারণে অনেক হাওরেই ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। অনেক স্থানে সেচ সুবিধা থাকলেও নদীতে পানি নেই। দ্রুত বৃষ্টি না হলে বিস্তীর্ণ হাওরের বুকজুড়ে ঝলসানো ধানি জমি দেখতে হবে। ব্যাহত হবে ধান উৎপাদন।