বিমানবন্দরে অবতরণের পর ভিক্ষুকদের কবলে হয়রানির শিকার হচ্ছেন আগত যাত্রীরা। বিদেশগামী যাত্রীরাও তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশ ছাড়েন। ভিক্ষুকদের বাংলাদেশি টাকা দিলে তারা নিতে চান না, দিতে হয় ডলার বা বিদেশি টাকা। ডলার বা টাকা না দিলে নেতিবাচক মন্তব্য শোনা যায় তাদের মুখে।
সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে হরহামেশা।
সরেজমিনে বুধ ও বৃহস্পতিবার (২২ ও ২৩ জানুয়ারি) দেখা যায়, বিমানবন্দরে ভিক্ষুকদের দৌরাত্ম্য চরমে। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে পৌনে দুইটা পর্যন্ত চারটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট থাকায় এই সময়টায় ভিক্ষুকরা আগত প্রবাসীদের লাগেজ ধরে টানাহেঁচড়া করছে। এ সময় টাকা, ডলার বা পাউন্ড দিতে অনেকটা বাধ্য হন কয়েকজন প্রবাসীরা।
প্রবাসীরা বলছেন, নিজের দেশে পা দিয়েই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে। এই দেশে কি কোনো আইন নেই? যদি থাকে তবে কেন আইনের প্রয়োগ হচ্ছে না।
ভিক্ষুকরা বিমানবন্দরে ভিক্ষাবৃত্তির জন্য আন্তর্জাতিক ফ্লাইটকে টার্গেট করেন। আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সঙ্গে ভিক্ষাবৃত্তির কী সম্পর্ক- এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিমানবন্দরে কর্মরত এক কর্মকর্তা বলেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের কাছে ডলার-পাউন্ড চাওয়ার জন্যই এমন অভিনব কায়দা বেছে নিয়েছেন বিক্ষুকরা। ফলে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সূচি অনুযায়ী তাদের আনাগোনা বাড়ে।
এদিকে, ঢাকা-সিলেট অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট এসে নামতেই কয়েকজন ভিক্ষুককে ভিক্ষা করতে দেখা গেছে বিমানবন্দরে। শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে ভিক্ষা করছেন এক নারী ভিক্ষুক। তিনি কালবেলাকে বলেন, আমি পেটের জ্বালায় ভিক্ষা করি। দশ টাকা দিলেও নিই, ৫ টাকা দিলেও নিই। তবে ডলার-পাউন্ড চাওয়ার বিষয়টা অস্বীকার করে তিনি বলেন, আমি এরকম করি না।
প্রবাসীদের স্বজন রফিক মিয়া বলেন, বিষয়টা একেবারে নতুন না। আমিও আগে প্রবাসে ছিলাম, যখন দেশে আসতাম এরকম প্রচুর হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। এখন রয়েছে ভিক্ষুকদের দৌরাত্ম্য।
স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, বিমানবন্দরে ভিক্ষুকরা টাকা নিতে চায় না। তারা প্রবাসীদের কাছে ডলার-পাউন্ড চেয়ে বসে। ফলে অনেক প্রবাসীরা হয়রানির শিকার হন। ভিক্ষুকরা আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সময়সীমা সম্পর্কে জ্ঞাত। ফলে তারা ভালো করেই জানে কোন সময় কাকে, কীভাবে হেনস্তা করতে হবে। এসব রুখতে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, ভিক্ষাবৃত্তির নামে প্রবাসীদের হয়রানি করা কোনভাবেই সঠিক কাজ নয়। এদের নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। প্রথমত, সিভিল এভিয়েশনের উচিত তার এলাকায় এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। তিনি না পারলে প্রশাসনকে অবহিত করা দরকার। প্রশাসন তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে কারা নেপথ্যে আছেন।
সিলেট বিমানবন্দর থানার ওসি সৈয়দ আনিসুর রহমান কালবেলাকে বলেন, প্রবাসীরা তাদের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার জন্য দেশে আসেন। এ সময় বিমানবন্দরে যদি হয়রানির শিকার হন সেটা অবশ্যই দুঃখজনক। আমরা আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যেন কোনো প্রবাসী হয়রানির শিক্ষার না হন। ভিক্ষুক হোক বা আর যেই হোক, আমরা এ ব্যাপারে শতভাগ সতর্ক থাকব।
সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান কালবেলাকে বলেন, প্রবাসী যাত্রীদের উত্যক্ত কিংবা বিরক্তির অভিযোগটি সঠিক। এদের নিয়ন্ত্রণে বিমানবন্দরের বহিরাঙ্গনে এপিবিএন, আনসার সদস্যদের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা কাজ করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনবরত তাদেরকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তারপরও অনেকে ফাঁক-ফোকর দিয়ে কীভাবে ঢুকে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ চাইলে তাদেরকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ করতে পারে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।