টেলিযোগাযোগ খাতে স্থিতিশীলতা ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিতে সিগনিফিক্যান্ট মার্কেট পাওয়ার (এসএমপি) গাইডলাইনের কার্যকর বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এসএমপি গাইডলাইন সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে ছোট অপারেটরদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে অবকাঠামো শেয়ারে উৎসাহ বাড়বে এবং এ খাতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এমন মতামত দেন।
টিআরএনবির সভাপতি সমীর কুমার দের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টিআরএনবির সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন দেওয়ান। মূল প্রবন্ধে মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরদের মধ্যে একটি একক বৃহৎ অপারেটরের আধিপত্যের কারণে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে উল্লেখ করা হয়।
বৈঠকে উল্লেখ করা হয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ২০১৮ সালে এসএমপি গাইডলাইন চালু করলেও এর গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো কার্যকরভাবে পর্যালোচনা বা বাস্তবায়ন করেনি। এসএমপি নীতিমালার ধারা ৭(১১)-তে বার্ষিক পর্যালোচনার নির্দেশনা থাকলেও তা উপেক্ষিত হয়েছে। এমনকি, বর্তমানে এর বাস্তবায়ন এই খাতের ন্যায্য প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে খুব সামান্যই প্রভাব ফেলছে।
বৈঠকে বক্তারা অস্ট্রেলিয়া, ভারত, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো আন্তর্জাতিক উদাহরণ তুলে ধরে দেখান যে, এসএমপি নীতিমালার কঠোর বাস্তবায়ন বাজারের ন্যায্যতা ও গ্রাহকের সুবিধা নিশ্চিত করছে।
বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী এই খাতের অংশীজনদের মাঝে আরও বেশি সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, এসএমপি প্লেয়ারের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এখন, আপনাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। খাত সংশ্লিষ্টদের মাঝে সহযোগিতা বা অংশীদারিত্বের কোনো বিকল্প নেই। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে হবে।
প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক মো. খালেদ আবু নাসের প্রতিযোগিতা কমিশনকে আরও কার্যকর করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ১৫ অক্টোবর থেকে প্রতিযোগিতা কমিশন অকার্যকর। এদিকে, বিটিআরসির সঙ্গে কমিশনের তেমন কোনো লিয়াজোঁ নেই। ফলে একচেটিয়া বাজার তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় পুরো টেলিকম খাতের পরিবর্তন প্রয়োজন।
ফরেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাহী পরিচালক ও সিইও টিআইএম নুরুল কবির বলেন, এই খাতের উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে বিটিআরসির রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা উচিত। পাশাপাশি, আরও বেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য আইন ও নীতিমালার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এমটবের সেক্রেটারি জেনারেল লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. জুলফিকার বলেন, টেলিযোগাযোগ খাতে আরও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
বাংলালিংকের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স তাইমুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে যেসব নিয়মনীতি আছে সেগুলো বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। সামনে যেহেতু এআইর মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আসছে, আমাদের বাজারে প্রতিযোগিতা কীভাবে আরও বাড়ানো যাবে সে বিষয়ে মনোনিবেশ করতে হবে।
রবির হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স সাহেদুল আলম বলেন, টেলিকম খাতে সুস্থ প্রতিযোগিতার কোনো পরিবেশ নেই। একটি অপারেটর প্রতি বছর বিপুল মুনাফা অর্জন করছে। এর কারণ হলো টেলিকম বিধিমালা বৃহৎ অপারেটরদের সুবিধা দিচ্ছে, অন্যদিকে ছোট অপারেটরদের প্রবৃদ্ধি ব্যাহত করছে।
টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল মাবুদ চৌধুরী বলেন, অসুস্থ প্রতিযোগিতার মাঝে টেলিটক কষ্ট করে টিকে আছে।
সভায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, এসএমপি গাইডলাইনে ২০টি ধারা আছে, কিন্তু বাস্তবায়ন করা হয়েছে মাত্র তিনটি, যা বাজারে সুস্থ প্রতিযোগিতা প্রতিষ্ঠায় তেমন ভূমিকা রাখেনি। বিটিআরসিকে আইনে ক্ষমতা দেওয়া আছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সে ক্ষমতার কার্যকর ব্যবহার করা হচ্ছে না।