ওষুধের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ফলে বড় ধাক্কা খেয়েছে ভারতের ওষুধ খাত। এরই মধ্যে ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোর শেয়ারে পতন ঘটেছে। তবে জেনেরিক ওষুধগুলো এই শুল্কের আওতার বাইরে থাকায় খুব বেশি একটা প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করেছেন এই খাতের ভারতীয় সংগঠনগুলো।
ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর শুকব্রার (২৬ সেপ্টেম্বর) বড় পতন হয়েছে সামনের সারির ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোতে। তার মধ্যে ওকহার্ডের শেয়ার দর কমেছে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ, ইন্ডোকো রেমেডিজ ৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ, জাইডাস লাইফসায়েন্সেস ৪ দশমিক ২১ শতাংশ, গ্লেনমার্ক ফার্মা ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ ও সান ফার্মা ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ কমেছে। এছাড়া লুপিন ২ দশমিক ০৭ শতাংশ, ডক্টর রেড্ডি’স ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ ও অরবিন্দো ফার্মা শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশর শেয়ার দর হারিয়েছে।
তাছাড়া সেন্সেক্সের ০.৯ শতাংশ ও নিফটির ০.৯৫ শতাংশ শেয়ার দর কমেছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, আগামী ১ অক্টোবর ২০২৫ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো ব্র্যান্ডেড বা পেটেন্ট ওষুধ আমদানিতে ১০০ শতাংশ শুল্ক বসবে, যদি না কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কারখানা তৈরি করে। কারখানা নির্মাণ শুরু হলেও শুল্ক প্রযোজ্য হবে না।
এদিকে, এই ঘোষণায় বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত হলেও ভারতীয় ওষুধ শিল্প সংগঠনগুলো প্রভাবকে তেমন গুরুতর মনে করছে না। ভারতের ২৩টি শীর্ষ ওষুধ কোম্পানির সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যালায়েন্স’ (আইপিএ) জানিয়েছে, এই শুল্ক জেনেরিক ওষুধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
আইপিএ’র মহাসচিব সুধর্ষণ জৈন বলেন, এটি জেনেরিক ওষুধের জন্য প্রযোজ্য নয়। আইপিএ’র মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে, সান ফার্মা, ডক্টর রেড্ডি’স, লুপিন ও জাইডাস।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় থাকা রপ্তানি প্রচার পরিষদ ফার্মেক্সিল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে মোট ওষুধের প্রায় ৪৭ শতাংশ সরবরাহ করে ভারত, যার বড় অংশই কমদামী জেনেরিক। পরিষদের চেয়ারম্যান নমিত জোশি দাবি করেন, এই শুল্ক ভারতের রপ্তানিতে তাত্ক্ষণিক প্রভাব ফেলবে না। তিনি আরও জানান, বড় ভারতীয় কোম্পানিগুলোর অনেকেরই এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন বা প্যাকেজিং ইউনিট আছে।
তবে বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন, ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র যদি জেনেরিক আমদানিকে লক্ষ্যবস্তু করে, তবে ঝুঁকি তৈরি হবে। জিওজিত ইনভেস্টমেন্টসের ড. ভি.কে. বিজয়কুমার বলেন, এখন ভারত নিরাপদ, তবে হয়তো মার্কিন প্রেসিডেন্টের পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে জেনেরিক ওষুধ।
অন্যরা মনে করেন, ভারতের জায়গা সরিয়ে ফেলা সহজ হবে না। ওয়েলথমিলসের ক্রান্তি বাথিনি বলেন, এত বড় পদক্ষেপ রাতারাতি কার্যকর করা সম্ভব নয়। ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিগুলো আন্তর্জাতিক মানের কারখানা চালায় ও এরই মধ্যে মার্কিন এফডিএ অনুমোদিত। এই সাপ্লাই চেইনকে প্রতিস্থাপন করা হবে বড় চ্যালেঞ্জ।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতে তৈরি ওষুধের অন্যতম বড় বাজার। ২০২৪ সালে ৮৭০ কোটি ডলারের ওষুধ ট্রাম্পের দেশে সরবরাহ করেছিল ভারত। যা ভারতীয় মুদ্রায় ৭৭ হাজার ২৩১ কোটি রুপি। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ৩২ হাজার ৫০৫ কোটি রুপির ওষুধ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করেছে ভারত।
কিন্তু ট্রাম্পের এই শুল্কের জেরে যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধের দাম বাড়বে। সেজন্য একাধিক ভারতীয় সংস্থার বিক্রিতে ধাক্কা লাগতে পারে। ভারতের অনেক ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার রেভিনিউয়ের বড় অংশ আসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে। সেই বাজারে বিক্রি ধাক্কা খেলে তা সরাসরি প্রভাব ফেলবে কোম্পানির আর্থিক বৃদ্ধিতে। এই আশঙ্কাতেই ফার্মা সেক্টরের বিভিন্ন স্টকের দামে পতন বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন, রয়টার্স
এসএএইচ