হুজুগে ভারত। বাংলাদেশের নানা ইস্যুকে অতিরঞ্জিত করে ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমগুলোতে ব্যাপক হারে ভুয়া খবর প্রচার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন ফ্যাক্ট চেকার সংগঠন। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই না করেই তা নিয়ে বিশ্লেষণ, আলোচনা, সমালোচনা করছে দেশটির মূলধারার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। আর সেই জোয়ারেই গা ভাসাচ্ছে ভারতের রাজনীতিবিদসহ সাধারণ জনগণ।
এমনকি মিথ্যা তথ্যে ভর করেই বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের ওপর চড়াও হয় সেখানকার কিছু দাঙ্গাবাজ উগ্রপন্থি। বাংলাদেশ ইস্যুতে এখনো সোচ্চার বিজেপি, আরএসএসসহ বিভিন্ন সংগঠন। এ অবস্থায় ভারতীয়রা নিজেদের আচরণে কতটুকু সভ্যতা ও রুচিশীলতার পরিচয় দিচ্ছে, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। চলছে নানামুখী বিশ্লেষণ।
জানা গেছে, খোলা আকাশের নিচে মলত্যাগ করার কারণে টাইফয়েড, কলেরা, ডায়ারিয়া ও হেপাটাইটিসের মতো প্রাণঘাতি রোগ-ব্যাধির বিস্তার ঘটে। জাতিসংঘের হিসেবে, বিশ্বে একশ কোটি মানুষ এখনো খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে। এর মধ্যে ভারতীয়দের এ অভ্যাস সবচেয়ে বেশি। ভারতের জনসংখ্যা প্রায় ১৫০ কোটি। তবে ষাট কোটিরও বেশি মানুষ উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করে।
স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা তৈরির জন্য শত শত কোটি ডলার ব্যয় করেও পরিস্থিতি খুব বেশি বদলাতে পারেনি ভারত সরকার। ভারতীয়রাই বিশ্বে একমাত্র জাতি, যাদের টয়লেটে মলত্যাগ শেখানোর জন্য বিপুল অঙ্কের রুপি খরচ করে সিনেমা বানাতে হয়েছে। সেই সিনেমার নামও টয়লেট এক প্রেম কাথা।
স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট তৈরি করে খোলা জায়গায় মলত্যাগের অভ্যাস বদলাতে শত শত কোটি ডলার খরচ করা হলেও এই অর্থ কার্যত নর্দমায় গেছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে জাতিসংঘের রিপোর্টে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে ভারতের।
শৌচাগার নয়, ভারতীয়রা ভালোবাসেন খোলা জায়গায় মলমূত্র ত্যাগ করতে। রেললাইন থেকে শুরু করে খোলা মাঠ আর নদীর পাড়, কোনো কিছুই বাকি রাখে না তারা। বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশ ভারতে তিন ভাগের এক ভাগই জন্মের পর থেকে টয়লেট ব্যবহার করে না। এমনকি, শৌচাগার থাকার পরও তারা বেছে নেয় ধানক্ষেত, পাটক্ষেত, রেললাইনের মতো জায়গা। ভারত জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে গেলেও আলোর অপর পাশে রয়েছে ঘুটঘুটে অন্ধকার। মাঠে-ঘাটে বনে-বাদাড়ে মলত্যাগের অভ্যাস তাদের এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্ম পর্যন্ত চলে আসছে।
শুধু পুরুষ আর শিশুই নয়, ভারতীয় নারীরাও উন্মুক্ত স্থানে টয়লেট করতে পছন্দ করেন। সে দেশের ৬০ কোটিরও বেশি মানুষ অভ্যস্ত খোলা স্থানে মলত্যাগ করতে। ঘরের পাশে টয়লেট ব্যবহার করাকে ভারতীয়রা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অশুভ মনে করেন। তাই উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ করতেই তাদের বেশি স্বাচ্ছন্দ্য।
এই সমস্যা সমাধানে বছর বছর ঋণসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রকল্পে বরাদ্দ আসে কোটি কোটি ডলার। নানা প্রচারণা সত্ত্বেও লজ্জার এই রেকর্ড কোনোভাবেই দূর করতে পারেনি মোদি সরকার।
ভারতে টয়লেট সুবিধা নেই ১৯.৪ শতাংশ পরিবারে। শহরাঞ্চলের মোট পরিবারের ৬.১ শতাংশ এবং গ্রামাঞ্চলের মোট পরিবারের ২৫.৯ শতাংশের টয়লেট নেই। ভারতে যে রাজ্যে টয়লেট সুবিধা সবচেয়ে কম রয়েছে সেগুলো হলো- বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তর প্রদেশ । গ্রাম এবং শহরগুলোর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও নেই ঠিকঠাক মতো টয়লেট। দেশটির ২২ শতাংশ স্কুলে পর্যাপ্ত টয়লেট নেই। এমনকি ৫৮ ভাগ প্রি-প্রাইমারি স্কুলে কোনো ধরনেরই টয়লেটের ব্যবস্থা নেই।
মোদি সরকারের আমলে এ বছর ভারত শুরু করেছে ‘আমাদের শৌচালয়, আমাদের সম্মান’ নামের প্রকল্প। দেশবাসীকে খোলা জায়গার পরিবর্তে টয়লেট ব্যবহারে উৎসাহি করতে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামেই চলছে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৯ সালে মহাত্মা গান্ধীর ১৫০তম জন্মবার্ষিকীতে গ্রামীণ ভারতকে উন্মুক্ত মলত্যাগ মুক্ত ঘোষণা করেছিলেন।