ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধক হিসেবে বক্তব্য রাখার সময় নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো শক্তি নাই এ সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরাতে পারবে। আমি সেজন্য ওনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গণতন্ত্রের উত্তোরণের পথ বেছে নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোকেও তিনি ধন্যবাদ জানান।
তিনি আরও বলেন, আহ্বান জানাতে চাই ওই সমস্ত দলগুলোকে, যারা মনে করছেন নির্বাচন পেছালে তারা উপকৃত হবেন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ উপকৃত হবেন না বন্ধুগণ। আমি সেই জন্য বারবার বলছি, আবারও বলছি, আমাদের যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি। এজন্য সকলকে সচেতন ঐক্যবদ্ধ থেকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে জনগণের যে প্রত্যাশা, সেই প্রত্যাশা পূরণে এগিয়ে যেতে হবে।
সংস্কার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সংস্কারতো বিএনপি থেকে শুরু। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে ২০১৬ সালে বেগম খালেদা জিয়ায় ভিশন টুয়েন্টি থার্টি এবং তারেক রহমানের ৩১ দফা। এটাতো হলো সংস্কারের মূল ভিত্তি বিএনপির।
তিনি সতর্ক করে বলেন, ষড়যন্ত্র করে আবারও গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে, যেমনটা হয়েছিল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে। বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচিই দলের সংস্কারের ভিত। ইতোমধ্যে ১৯টি প্রস্তাবের মধ্যে ১২টিতে একমত হয়েছে দল, বাকিগুলো নিয়েও আলোচনা চলছে।
একই সঙ্গে তিনি মনে করিয়ে দেন, বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তন করেছে, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা দিয়েছে এবং ভিশন ২০৩০ এর মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের রূপরেখা ঘোষণা করেছে। এখন ৩১ দফা কর্মসূচির মাধ্যমে অর্থনীতি, রাজনৈতিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের ভেঙে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠনের লক্ষ্যে দল এগিয়ে যাচ্ছে।
শহীদ নেতাদের স্মরণ ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সম্মেলনে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, জিয়া একটি দল গড়ে দিয়েছিলেন, যে দল গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে, প্রাণ দিয়েছে।
তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংগ্রামের দিক তুলে ধরে বলেন, তিনি দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। আবার গত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছেন। একদিনের জন্যও মাথানত করেননি।
তারেক রহমানকে ভবিষ্যতের নেতৃত্বদাতা হিসেবে আখ্যায়িত করে মহাসচিব বলেন, দেশের মানুষ আজ তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার নেতৃত্বেই আগামী দিনে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা হবে।
ঠাকুরগাঁও বিএনপির দুর্গ ঠাকুরগাঁওবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, আপনারা এ জেলাকে বিএনপির দুর্গে পরিণত করেছেন। তরুণ নেতাদের উত্থানে দল আরও শক্তিশালী হয়েছে। আমরা ঠাকুরগাঁওয়ের ৩টি আসনেই বিজয়ী হবো।
দলকে শক্তিশালী করার আহ্বান শেষে বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট শাসনে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে গেছে, অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। ফ্যাসিস্ট শাসন ব্যবস্থায় যে প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়েছে, সেগুলো শক্তিশালী করবে বিএনপি। এ জন্য রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে শক্তিশালী করতে হবে।
এর আগে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু উপস্থিত ছিলেন। বিকেল সাড়ে ৩টায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।