অর্ধযুগ পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন হচ্ছে আজ। প্রায় ৪০ হাজার ভোটারের সরাসরি ভোটে ২৮ সদস্যের কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচিত হচ্ছে এবার। পাশাপাশি ১৮টি হলের জন্যও ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে প্রতিটি হলে ১৩ জন করে নেতা নির্বাচিত হবেন, মোট ২৩৪ জন। তবে ডাকসু সংসদ আসলে কী কাজ করে সেটি নিয়ে আগ্রহ অনেকেরই রয়েছে।
ডাকসুর কার্যাবলি তুলে ধরা হলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) গঠনতন্ত্রে নয়টি মূল দায়িত্ব ধারাবাহিকভাবে তালিকাভুক্ত রয়েছে। এগুলো হলো
>ছাত্র সংসদ সবসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার সংরক্ষণ এবং সুরক্ষার প্রচেষ্টা চালাবে;
>সংসদ সদস্যদের ব্যবহারের জন্য কমনরুম তত্ত্বাবধান করবে এবং ইনডোর গেমস, দৈনিক পত্রিকা ও সাময়িকী সরবরাহ করবে;
>বছরে অন্তত একটি জার্নাল প্রকাশ করবে এবং নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত ও সভাপতির অনুমোদন সাপেক্ষে অন্যান্য বুলেটিন, ম্যাগাজিন বা পত্রিকা প্রকাশ করবে;
>সময়ে সময়ে বিতর্ক ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সাধারণের আগ্রহের বিষয়গুলো নিয়ে লেকচার আয়োজন করবে এবং যথাসম্ভব মিলনমেলার আয়োজন করবে;
>বছরে অন্তত একবার সদস্যদের মধ্যে বক্তৃতা, বিতর্ক, আবৃত্তি, প্রবন্ধ ও ইনডোর গেমসের প্রতিযোগিতা আয়োজন করবে, যা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জন্যও উন্মুক্ত হতে পারে;
>সম্ভব হলে, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় বিতর্ক ও শিক্ষা সম্মেলনগুলোতে প্রতিনিধি প্রেরণ করবে;
>বিতর্ক প্রতিযোগিতা, সম্মেলন এবং এ ধরনের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি পাঠাতে বা আমন্ত্রণ জানাতে পারবে;
>সামাজিক সেবা কার্যক্রম উৎসাহিত এবং সমাজকল্যাণ বক্তৃতা, সভা ও প্রদর্শনীর আয়োজন এবং সম্ভব হলে বিদ্যালয়গুলোতে এগুলো পরিচালনা করা;
>সভাপতির অনুমোদন সাপেক্ষে নির্বাহী কমিটি সময়ে সময়ে এ ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবে।
ডাকসুর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ডাকসুর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ হলো
>স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ লালন ও সমুন্নত রাখা;
>বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে জুলাই ২০২৪ অভ্যুত্থান এবং বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্য সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেতনা প্রতিষ্ঠা;
>শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক ও সহ-শিক্ষা কার্যক্রমের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নয়ন;
>বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিভিত্তিক সহযোগিতা বৃদ্ধি;
>বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সত্যিকারের নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্ব তৈরি;
>বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিধিবদ্ধ ও অ্যাফিলিয়েটেড কলেজ বা ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ ও বিদেশের একই রকম বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিভিত্তিক সহযোগিতা উন্নয়ন।
ইতিহাস ও প্রভাব
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ডাকসু প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশ ও জাতির মুক্তির আন্দোলনে ডাকসু নেতৃত্ব দিয়েছে। ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং ৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ডাকসু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দেশের রাজনীতিতে অসংখ্য জাতীয় নেতা এই মঞ্চ থেকে উঠে আসেন।
তবে স্বাধীন দেশে ৫৩ বছরে ডাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র আটবার। ১৯৯০ সালের পর দীর্ঘ ২৮ বছর বিরতিতে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
জাতীয় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও সাবেক ডাকসু ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না জাগো নিউজকে বলেন, ডাকসু মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হলেও এর প্রভাব সারাদেশের ছাত্র রাজনীতিতে পড়ে। এটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ইউনিয়ন নয়, দেশের ছাত্রসমাজ একে গাইডলাইন হিসেবে দেখে। এই নির্বাচন ছাত্রদের রাজনৈতিক চর্চা এবং নেতৃত্ব গঠনের বড় প্ল্যাটফর্ম।
৩৮তম ডাকসু নির্বাচন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার চার বছর পর থেকেই কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের ভোট শুরু হয়। শতবর্ষী ইতিহাসে এটি ৩৭ বার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্রিটিশ আমলে ১৪ বার, পাকিস্তান আমলে ১৬ বার এবং স্বাধীন বাংলাদেশে সাত বার।
অর্থাৎ, অর্ধযুগ পর এই নির্বাচন শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতা নির্বাচিত করবে না; এটি দেশের ছাত্র রাজনীতি এবং ভবিষ্যতের জাতীয় রাজনীতির ওপরও প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হলে, এটি সরকারের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ‘এসিড টেস্ট’ হিসেবে বিবেচিত হবে।
জেপিআই/এসএনআর/জিকেএস