ডাকসু নির্বাচনে কোচিং ‘ফ্যাক্টর’: আবিদ-সাদিক-শামীমের ‘ভোটব্যাংক’

3 hours ago 3

ইউসিসির ‘শিক্ষক’ আবিদুল, ফোকাসের ‘নিয়ন্ত্রণে’ সাদিক
দুই কোচিং থেকে তিন বছরে ভর্তি আট হাজার শিক্ষার্থী
ইংরেজি পড়ানো শামীমেরও রয়েছে ‘কোচিংকেন্দ্রিক’ ভোট
কোচিং সুবিধায় ভোট বেচবে না শিক্ষার্থীরা: সাবেক জিএস

উত্তাপ ছড়ানো ডাকসু নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শেষ আজ রোববার (৭ সেপ্টেম্বর)। ভোটগ্রহণের বাকি মাত্র একদিন। শেষ মুহূর্তে সামনে আসছে নানা সমীকরণ। একের পর প্রকাশ পাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠনের প্রাক-নির্বাচনী জরিপ। তা নিয়েও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে ছাত্রীদের ভোট বেশি পাবেন কে; কোন হলের ভোট কার পক্ষে যাবে; কার দিকে ঝুঁকবেন জগন্নাথ হলের বিপুলসংখ্যক ভোটার, এমন নানা প্রশ্নের ফাঁকে আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ‘কোচিং ফ্যাক্টর’।

নির্বাচনে ‘কোচিং ফ্যাক্টর’ সামনে আসছে ভিপি প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ের সমীকরণ মেলাতে। ক্যাম্পাসজুড়ে এ নিয়ে রয়েছে আলোচনাও। কারণ ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং ইউসিসিতে ক্লাস নেন। তিনি এ কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত।

অন্যদিকে, ফোকাস বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে মূলত ছাত্রশিবির। সেখান থেকেও বহু শিক্ষার্থী ঢাবিতে চান্স পেয়ে ভর্তি হন। ফলে তাদের ভোটে পাল্লা ভারী হতে পারে সাদিক কায়েমের। এছাড়া স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী শামীম হোসেনও ইংরেজি পড়িয়ে ক্যাম্পাসে বেশ জনপ্রিয়। এক্ষেত্রে তারও রয়েছে ‘ভোটব্যাংক’।

আর পড়ুন:

পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায়, ফোকাস ও ইউসিসিতে কোচিং করে সবশেষ শিক্ষাবর্ষেও ফোকাস থেকে ১ হাজার ৭৫০ জন এবং ইউসিসি থেকে প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ঢাবিতে চান্স পেয়েছেন। আর গত তিন বছরে এ দুই কোচিং থেকে ঢাবিতে ভর্তি হয়েছেন অন্তত আট হাজার শিক্ষার্থী, তারা সবাই এ নির্বাচনে ভোটার।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, ইউসিসি থেকে কোচিং করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের বড় অংশই ছাত্রদলের আবিদুলকে ভোট দিতে পারেন। আর ফোকাসে কোচিং করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াদের ভোট বেশি পেতে পারেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম। ক্যাম্পাসে ইংরেজি পড়ানোর কারণে শামীমেরও এ কারণে ভোটব্যাংক রয়েছে।

‘শিক্ষক’ আবিদুলকে ভিপি পদে দেখতে চান ইউসিসির শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংগুলোর মধ্যে ইউসিসি বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অনেকে ইউসিসিতে ভর্তি হন। প্রতি বছর এ কোচিং থেকে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার শিক্ষার্থী ঢাবিতে চান্স পেয়ে ভর্তি হন। তাদের প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে আবিদুল ইসলাম খানের ক্লাস করে এসেছেন। ফলে ভিপি পদের লড়াইয়ে তারা আবিদুলকে বেছে নিতে পারেন।

ক্যাম্পাসে প্রচার-প্রচারণার সময়ও আবিদুলকে অনেক শিক্ষার্থী ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করতে শোনা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বেশ কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা আবিদুলকে বলছেন, তারা ইউসিসিতে তার শিক্ষার্থীরা ছিলেন। নির্বাচনে ভোটটা তাকেই দেবেন।

অন্যদিকে, ইউসিসি গ্রুপ তাদের ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে আবিদুলের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন। ভিপি পদে ডাকসুতে তার ‘জয়’ কামনা করেছেন, যা ইউসিসিতে কোচিং করে ঢাবিতে চান্স পাওয়া অনেক শিক্ষার্থীকে ‘প্রভাবিত’ করেছে বলে মনে করেন খোদ কোচিংটির কর্মকর্তারাও।

আর পড়ুন:

নাম প্রকাশ না করে ইউসিসি কোচিংয়ের দুজন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, তারা তাদের পরিচিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতে আবিদুলের জন্য ভোট চেয়েছেন। তাছাড়া ইউসিসি পরিবারের সদস্যরা আবিদুলকে পছন্দ করবে বলেও মনে করেন তারা।

ইউসিসির সাবেক শিক্ষার্থী আঞ্জুমান আরা ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আবিদুলকে আমরা স্যার হিসেবে চিনি। তিনি রাজনীতি করতো সেটা জানতাম না। যেহেতু উনার ক্লাস করে আমি উপকৃত হয়েছি, উনি অনেক ভালো ক্লাস নিতেন; সেদিক থেকে তাকে ভোট দিতে পারি। বিষয়টি বিবেচনায় আছে।’

ফোকাসের ‘নিয়ন্ত্রক’ শিবির, ভোট পেতে পারেন সাদিক

ফোকাস বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং থেকে প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকে। গত তিন বছরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, এ কোচিং থেকে প্রস্তুতি নিয়ে গড়ে দেড় থেকে দুই হাজার শিক্ষার্থী ঢাবিতে ভর্তি হয়েছেন। তাদের অনেকে ছাত্রশিবির ও ছাত্রীসংস্থার রাজনীতিতেও জড়িত।

অনেকে সরাসরি রাজনীতিতে না জড়ালেও তাদের দলীয় আদর্শ ‘ধারণ ও লালন’ করেন। ফলে ফোকাস থেকে ঢাবিতে চান্স পাওয়াদের শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশের ভোট পেতে পারেন ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম।

ডাকসু নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর গত ৩০ আগস্ট ফোকাস কোচিং ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে তাদের কোচিং থেকে প্রস্তুতি নিয়ে ঢাবিতে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে বক্তব্য দেন ছাত্রশিবির প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম, জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ ও এজিএস প্রার্থী মহিউদ্দিন খান।

সেই অনুষ্ঠানে সরাসরি ভোট না চাইলেও সাদিক-ফরহাদ-মহিউদ্দিনকে ‘বিশেষভাবে’ উপস্থাপন করা হয়। নবীন শিক্ষার্থীদের সামনে তারা বক্তৃতা ও গান গেয়ে অনুষ্ঠান মাতিয়ে তোলেন। এ নিয়ে অভিযোগ তোলেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল। যদিও তা ডাকসুর নির্বাচন কমিশনে কোনো পাত্তা পায়নি।

আর পড়ুন:

ফোকাস কোচিংয়ের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে জানান, ফোকাসের এবারের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রায় ১২০০-১২৫০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এটি প্রতিবছর করা হয়। ঢাবি ছাত্রশিবিরের নেতাদের অনেকে তাদের কোচিংয়ের পরিচালক। ফলে তাদের উপস্থিতি নতুন কিছু নয়।

ফোকাস কোচিং থেকে প্রস্তুতি নিয়ে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তি হওয়া একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগে থেকেই শিবিরের প্রতি আমার টান ছিল। আমি তাদের কোনো কর্মী নয়, তবে সমর্থক। সাদিক কায়েমকে ভিপি পদে পছন্দ আমার।

ইংরেজি পড়ানো শামীমও পাবেন ‘কোচিং’ ভোট

সরাসরি ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ইংরেজি পড়ান স্বতন্ত্র ভিপি প্রার্থী শামীম হোসেন। ফেসবুকে তার ফলোয়ারও অনেক। তারা চাকরির প্রস্তুতির ক্ষেত্রে ইংরেজি শিখতে শামীমের ভিডিও দেখেন নিয়মিত। তার ক্লাসে বোঝানোর ভঙ্গি অনেকের পছন্দ। বিভিন্ন ব্যাচে শামীমের অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন। আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে তাদের ভোট পেতে পারেন শামীম।

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শুধু কোচিং করে আসায় সেই প্রতিষ্ঠানের সমর্থিত বা আদর্শে উজ্জীবিত কোনো প্রার্থীকে ভোট দেবেন, তা মনে করেন না ডাকসুর সাবেক জিএস মুশতাক হোসেন।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা হতেও পারে, নাও হতে পারে। কোচিং অনেকে অনেক জায়গায় করতে পারেন, তাদের সঙ্গে সখ্যতাও থাকতে পারে। কিন্তু ভোটের হিসাবটা ভিন্ন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বাধীনচেতা হন। তারা বুঝে-শুনে ভোট দেবেন। সামান্য কোচিং সুবিধা নিয়ে তারা ভোট বিকিয়ে দেবে বলে মনে করি না। আমি মনে করি, রাজনৈতিক দর্শন ও যোগ্যতা দেখে ভোট দেওয়া উচিত হবে।’

এএএইচ/এসএনআর/এমএস

Read Entire Article