ডাকসু নির্বাচনে প্রশাসন নির্বিকার-নির্লিপ্ত ভূমিকা রেখেছে

1 day ago 3

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের বাকি মাত্র দুদিন। শেষ দিনের প্রচার-প্রচারণায় তুমুল ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। ভোটারদের দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতি, জানাচ্ছেন ইশতেহার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাকিব প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কেন্দ্রীয় সংসদের আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে। তার প্যানেল বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ। তিনি জাগো নিউজকে জানিয়েছেন তার পরিকল্পনার কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাসান আলী

জাগো নিউজ: নির্বাচনী পরিবেশ কেমন দেখছেন? কতটুকু আশাবাদী?

সাকিব: আলহামদুলিল্লাহ খুবই ভালো। কয়েকদিন আগে যখন নির্বাচন নিয়ে রিট হয়েছিল তখন একটা শঙ্কায় ছিলাম। এখন আশা করা যায়, ঠিকমতো নির্বাচন হবে। সব কার্যক্রম স্বাভাবিক চলছে। আমরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে খুবই ভালো সাড়া পাচ্ছি। একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের যে প্রত্যাশা ছিল, আমার মনে হয় শিক্ষার্থী এবং প্রার্থী হিসেবে বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে।

নারীদের যাতে নিরুৎসাহিত করা যায়, সে ধরনের আয়োজন আমরা দেখেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা তৈরি করার জন্য অনেক গ্রুপ চেষ্টা করছে। সেই জায়গা থেকে আমরা মনে করি, আমাদের অবশ্যই আশঙ্কা রয়েছে

জাগো নিউজ: নির্বাচিত হলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে কী কী কাজ করার পরিকল্পনা আছে?

সাকিব: আমি নির্বাচিত হলে প্রশাসনিক জটিলতা দূর করবো। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয় সেল থাকবে, সেখানে কয়েকজন ডেডিকেটেড প্রফেসর ও কর্মকর্তা থাকবেন। তারা বিভিন্ন এলিজিবল ইন্টার্নশিপ, ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিশন, সভা-সেমিনারগুলোতে যোগদানের সুযোগ এবং বিভিন্ন ইউনিভার্সিটির সঙ্গে চুক্তি করার মাধ্যমে সেই সুযোগের তথ্যটি আমরা সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে চাই। সেজন্য আমরা একটা ওয়ান স্টপ অ্যাপ কিংবা ওয়েবসাইট তৈরি কিংবা চালু করবো। যেটার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের নিত্যদিনের সব সুযোগ-সুবিধা জানতে পারবে।

জাগো নিউজ: আন্তর্জাতিক অঙ্গন নিয়ে আপনার ব্যতিক্রমী কোনো পরিকল্পনা আছে কি?

সাকিব: ডাকসুর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের যে কাজ, নতজানু পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে কিংবা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সোচ্চার থাকা। একই সঙ্গে বিভিন্ন ইনস্টিটিউশনগুলোর সঙ্গে কিংবা ইন্টারন্যাশনাল ফরেন স্টুডেন্ট কাউন্সিলগুলো রয়েছে, যে কোনো গ্লোবাল ইস্যুতে যাতে আমরা একটা সলিডারিটি দেখাতে পারি সেজন্য তাদের সঙ্গে কানেক্টেড থাকবো। গ্লোবাল অন্য যেসব অংশীজন রয়েছে তাদের সঙ্গে নিয়মিত সভা-সেমিনারের আয়োজন করা হবে, যাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো একটা পলিটিক্যাল পার্টির এজেন্ডা হয়ে অংশ নেবে না, একক ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর পারপাস সার্ভ করবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর প্রত্যাশা পূরণ করবে। যারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে, তাদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন

জাগো নিউজ: ডাকসু নির্বাচনের অতীত ইতিহাস বিশ্লেষণ করে এবারের নির্বাচনে কোনো কারসাজির আশঙ্কা করছেন?

সাকিব: বিগত এক বছর ধরে দেখেছি ভোট ও গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে অনেকেরই অনাগ্রহ ছিল। যদিও এক বছর পরে আমরা সবাই একটা সামষ্টিক জায়গায় এসেছি। ডাকসু আয়োজন হতে যাচ্ছে, বাস্তবায়িত রূপ দেখতে যাচ্ছি। তবে আমরা দেখেছি, বিভিন্ন কৌশলের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্রগুলো সাজানো হয়েছে। নারীদের যাতে নিরুৎসাহিত করা যায়, সে ধরনের আয়োজন আমরা দেখেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতা তৈরি করার জন্য অনেক গ্রুপ চেষ্টা করছে। সেই জায়গা থেকে আমরা মনে করি, আমাদের অবশ্যই আশঙ্কা রয়েছে।

জাগো নিউজ: এখন পর্যন্ত প্রশাসনের ভূমিকা কেমন দেখছেন?

সাকিব: ভোটের বিভিন্ন মেকানিজমগুলো আমরা দেখছি, আমাদের কাছে মনে হচ্ছে পিছনে কেউ অস্পষ্টভাবে এগুলো কন্ট্রোল করছে। যারা শিক্ষার্থী প্রার্থী আছে তারা না, আমি মনে করি কোনো একটা পলিটিক্যাল পার্টি কিংবা পলিটিক্যাল গোষ্ঠী তাদের কেউ একজন নিয়ন্ত্রণ করছে। সেই জায়গা থেকে প্রশাসন নির্বিকার, নির্লিপ্ত ভূমিকা রেখেছে। আচরণবিধি লঙ্ঘন হওয়ার পরে বিভিন্নজনের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, সেটা নিয়ে আমরা একটু সন্দিহান।

সে জায়গা থেকে আমরা প্রশাসনকে এখনো আহ্বান জানাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো একটা পলিটিক্যাল পার্টির এজেন্ডা হয়ে অংশ নেবে না, একক ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠীর পারপাস সার্ভ করবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর প্রত্যাশা পূরণ করবে। যারা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে, তাদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।

জাগো নিউজ: ভোটারদের উদ্দেশ্যে কিছু বলার আছে?

সাকিব: ভোটারদের উদ্দেশ্যে প্রথম দিন থেকে আমরা বলে আসছি ভোট শুধু একটা সংখ্যা নয়, এটা অধিকার ও গণতান্ত্রিক চর্চা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের পুরো জাতীয় রাজনীতিতে ইকুয়েশন সৃষ্টি হবে। আমরা দেখেছি, গত ১৬ বছর ধরে ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। আমরা শিক্ষাজীবন থেকে যদি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চার প্র্যাকটিসটা করতে পারি, তাহলে এটা হবে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হওয়া। একই সঙ্গে নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়া। আমার জীবনে ভোট দেওয়ার সুযোগ এসেছে, আমাদের যাদের বয়স ২৪ বা ২৫ আমরা কখনো ভোট দিতে পারিনি। সেই জায়গা থেকে এটা আমাদের প্রথম ভোট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভোট দিয়ে নিজের অধিকার চর্চা করবে। সবাই ভোট কেন্দ্রে আসবেন এবং ভোট দেবেন- এটাই প্রত্যাশা।

এমএইচএ/এএসএ/জেআইএম

Read Entire Article