ডেঙ্গুর টাইমবোমা রাজশাহী

1 month ago 15

রাজশাহীতে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এডিস মশার লার্ভা। সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিভাগের এক জরিপে দেখা গেছে, রাজশাহী শহরের ৫৭ ভাগ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০ ভাগ লার্ভা থাকলেই সেটি ঝুঁকিপূর্ণ। সেখানে রাজশাহীতে রয়েছে এর কয়েকগুণ বেশি।

সে হিসেবে ডেঙ্গুর টাইমবোমায় পরিণত হয়েছে রাজশাহী। এই লার্ভা থেকে মশা জন্ম নিলে তা ডেঙ্গুর ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটবে। 

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক অফিসের তথ্যমতে, চলতি বছরের মার্চ ও এপ্রিলে পরীক্ষা করে রাজশাহী নগরীতে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ লার্ভা পাওয়া যায়। তবে এর ৩ মাস পরে জুলাই মাসে পরীক্ষা করে নগরীতে ৫৭ দশমিক ৩৩ ভাগ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেছে। ২০২৪ সালে ভরা মৌসুমে লার্ভার উপস্থিতি ছিল ৪৫ দশমিক ৩৩ ভাগে। চলতি বছরে সেটি বেড়েছে ১২ শতাংশ। ফলে রাজশাহীর মানুষ ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে আছে।  

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের কীটতত্ত্ব টেকনিশিয়ান আব্দুল বারী বলেন, এটি আমাদের জরিপ কাজ। বছরে তিনবার করা হয়। সাধারণত এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মে স্বাস্থ্য বিভাগ প্রি মৌসুম, মৌসুম পোস্ট, মৌসুমে এটি করে থাকে। এখন মৌসুম সময়।

তিনি আরও বলেন, আমরা পাঁচটি ওয়ার্ডে ৭৫টি বাড়িতে পরীক্ষা করেছি। ফল হচ্ছে ৫৭ দশমিক ৩৩ ভাগ বাড়িতে লার্ভা পাওয়া গেছে। সে অবস্থায় বলতে পারি রাজশাহীতে আমরা ভয়াবহ অবস্থায় আছি।

রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন অফিসের জেলা কীটতত্ত্ববিদ উম্মে হাবিবা বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পাঁচটি ওয়ার্ডে আমরা কাজ করেছি। ৭৫টি বাড়িতে পরীক্ষা করে দেখতে পেয়েছি বাড়ির আশপাশে অনেক কনটেইনার, ফুলের টপ, ডাবের খোলা, ছাদ বাগানের বিভিন্ন সরঞ্জাম, দইয়ের খোলা, খেলনা হাঁড়িপাতিল, এগুলোতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে। আমরা এ পরীক্ষার ফল সিটি করপোরেশনকে পাঠিয়েছি। সেইসঙ্গে তাদের সুপারিশও করেছি।

এদিকে বর্ষা মৌসুম শুরুর পর থেকেই এ বছর রাজশাহীতে ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। গত দুই মাসে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩ শতাধিক রোগী। তাদের মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. শংকর কুমার বিশ্বাস কালবেলাকে বলেন, এ মৌসুমের ডেঙ্গুটা কিন্তু নীরবে শুরু হয়েছে। একটু সুনির্দিষ্টভাবে যদি বলি, গত দুমাসে এটি তার সর্বোচ্চ জায়গাতে পৌঁছে গেছে। বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১৫ জন। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত সেবা নিয়েছেন ৩০৫ জন। এর মধ্যে আমাদের মৃত্যুর সংখ্যা চারজন। তাদের মধ্যে একটি শিশু রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা লক্ষ করছি রোগীরা হলো রাজশাহীর আশপাশের। সব থেকে বেশি রোগী আসছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে। আগে রোগীদের ঢাকা বা অন্য কোথায় ট্রাভেলিং হিস্টরি পাওয়া যেত। এখন সেটি পাওয়া যাচ্ছে না। তারা লোকালেই আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আগে থেকে প্রস্তুত ছিল। আমরা ডেঙ্গু ওয়ার্ড চালু করেছিলাম। আমাদের ডেঙ্গু প্রতিরোধে একটি টিম রয়েছে। যাবতীয় ওষুধ-স্যালাইন সবকিছু মজুদ করা হয়েছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা শেখ মো. মামুন বলেন, প্রতি বছরই বর্ষার সময় ডেঙ্গু মশার একটা প্রকোপ হয়। বর্ষার পর বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকে। শুধু ৫৭ শতাংশ বাড়িতে এডিসের লার্ভা আছে এমনটি নয়, আমরা মনে করি গোটা রাজশাহী সিটিতে মশা আছে। সে অনুযায়ী, কার্যক্রম পরিচালনা করছি।

Read Entire Article