রাজধানী ঢাকার উত্তরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মো. আলী হুসেন (৪৪) নামের এক ব্যক্তি গুলিতে নিহতের ঘটনায় রোববার (৮ ডিসেম্বর) সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ ১৮৯ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এ মামলায় বগুড়া জেলার ৫৫ জনের নাম রয়েছে। তাদের মধ্যে ৯ জন সাংবাদিককেও আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে চারজন টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক রয়েছেন।
নিহতের আত্মীয় খুলনার পাইকগাছা উপজেলার উত্তর ওয়াবদা বাতিখালি গ্রামের মমিন সানার ছেলে মফিজুল ইসলাম সানা বাদী হয়ে ঢাকার চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট (উত্তরা পূর্ব) আমলী আদালতে এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় আওয়ামী লীগের, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্চাসেবক লীগের আরও ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে অজ্ঞাত হিসেবে আসামি করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে ৯ সাংবাদিক হলেন- এখন টিভির বগুড়ার ব্যুরো প্রধান মাজেদ রহমান (আসামি নং-১৬ ও ২০), মাই টিভির বগুড়া প্রতিনিধি লতিফুল করিম (আসামি নং ৩১), ডিবিসি নিউজের বগুড়া প্রতিনিধি রাকিব জুয়েল (আসামি নং ৩৩), মোহনা টিভির বগুড়া প্রতিনিধি আতিক রহমান (আসামি নং ৩৫) দৈনিক আজকের প্রত্যাশা পত্রিকার বগুড়া প্রতিনিধি আজাদুর রহমান (আসামি নং ৩৭), দৈনিক আজকের বসুন্ধরা পত্রিকা ও মুভি বাংলা টিভির বগুড়া প্রতিনিধি ফয়সাল হোসাইন সনি (আসামি নং ৪৩), সাপ্তাহিক তাজাখবর পত্রিকার প্রতিনিধি ওয়াফিক শিপলু (আসামি নং ৪১), অনলাইন নিউজ পোর্টাল এনসিএন-এর স্টাফ রিপোর্টার ববিন রহমান (আসামি নং ৫১) এবং সময় টিভির বগুড়া প্রতিনিধি আব্দুল আওয়াল (আসামি নং- ১১৪)।
মামলা প্রসঙ্গে এখন টিভির বগুড়ার ব্যুরো প্রধান মাজেদ রহমান বলেন, ঘটনার দিন আমি বগুড়ায় ছিলাম। সাংবাদিকদের হয়রানি এবং বর্তমান সরকারকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতেই এসব ভুয়া গায়েবি মামলা করা হয়েছে। ভাড়াটিয়া বাদী দিয়ে কল্পকাহিনী সাজিয়ে মামলায় করে বগুড়ার ৯ সাংবাদিককে আসামি করা দুঃখজনক। সঠিক তদন্ত হলেই আসল রহস্য বের হবে।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল এনসিএন-এর স্টাফ রিপোর্টার ববিন রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে অজনপ্রিয় করতেই পরিকল্পিতভাবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঢালাও মামলা করা হচ্ছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরই অংশ হিসেবে রাজধানী উত্তরার পূর্ব থানাধীন ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পূর্ব পাশে আজমপুরে অবস্থান নেয় ছাত্র-জনতা। ওই দিন শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, তথ্য ও প্রযুক্তিমন্ত্রী এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের নির্দেশনায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদ্যসরাও সেখানে অবস্থান নেয়।
একপর্যায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্র-জনতা সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। নেতাকর্মীরা এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদ্যসরা ছাত্র জনতার ওপর অর্তকিত গুলি চালাতে থাকে। এতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কাতারে থাকা আলী হুসেনকে লক্ষ্য করে গুলি করলে তাহার পেট, বুক ও মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মহাসড়কের ওপরে পড়ে থাকে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্র-জনতার মধ্য থেকে কয়েকজন গিয়ে আলী হুসেনের হাত-পা ধরে তুলে নিয়ে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ডাক্তার আলী হুসেনকে মৃত ঘোষণা করে।