সিডনির গ্লেনফিল্ড কমিউনিটি হলে রোববার ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার ১১তম বার্ষিক সাধারণ সভা ও ২০২৫-২০২৬ কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
নার্গিস বানুর সঞ্চালনায় বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে বিপুল সংখ্যক সাধারণ সদস্যদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। সংগঠনের সভাপতি কামরুল মান্নান আকাশের সভাপতিত্বে শুরু হয় বার্ষিক সাধারণ সভা।
তিনি উপস্থিত সদস্যদের কাছে সংগঠনের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন। যার মধ্যে রয়েছে মেধাবী ও আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ছাত্রদের বৃত্তি দেওয়ার জন্য একটি ট্রাস্ট ফান্ড গঠন। সাধারণ সম্পাদক লিংকন শফিকউল্লাহ গত এক বছরের কর্মকাণ্ডের বার্ষিক প্রতিবেদন এবং গত বছরের বার্ষিক সাধারণ সভার মিনিটস পেশ করেন, যার ওপর আলোচনা হয় এবং সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
পরে সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ হালিমুসসান সংগঠনের বাৎসরিক আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন করেন, যা অনুমোদিত হয়। প্রশ্ন-উত্তর পর্বে সাধারণ সদস্যরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। তাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয় এবং কিছু পরামর্শ গ্রহণ করা হয়।
ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি কামরুল মান্নান আকাশ শুভেচ্ছা জানিয়ে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং সধারণ সভায় যোগদানের জন্য কার্যনির্বাহী পরিষদের পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, একমাত্র আপনাদের উপস্থিতি ও সক্রিয় অংশগ্রহণই পারে আমদের এই সংগঠনটিকে আরও গতিশীল ও অর্থবহ করে তুলতে। এখানে দলীয় রাজনীতি ও ধর্মীয় ভেদাভেদের কোনো স্থান নেই। আমাদের একটাই পরিচয় আমরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং একই মায়ের সন্তান।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সংগঠনের আসল শক্তি হচ্ছে আমাদের ঐক্য। যদি আমরা সবাই আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে একসাথে কাজ করি, তবে ভবিষ্যতে আরও বড় অর্জন সম্ভব। তিনি সব বিভেদ ভুলে সবাই মিলে এই সংগঠনটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। সভাপতি কার্যনির্বাহী পরিষদের সব সদস্যকে নিরলস পরিশ্রম ও তাদের অবদানের জন্য অভিনন্দন ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
সাধারণ সম্পাদক লিংকন শফিকউল্লাহ তার প্রতিবেদনে বিভিন্ন কার্যক্রমের উল্লেখ করেন যার মধ্যে ছিল– বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলো উদযাপন, যেমন- স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, অমর একুশে, বাংলা নববর্ষ এবং ক্রিকেট ম্যাচ ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন।
এছাড়া বড় আয়োজনে গ্র্যান্ড রিইউনিয়ন ২০২৫ ও প্রতিষ্ঠার ১৫ বছর উদযাপন ছিল এক বড় সাফল্য। নিজস্ব তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩০০ পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী, আর্থিক সহায়তা ও গবাদি পশু কিনে দেওয়া হয়।
তিনি জানান, গত দুই বছরে শতাধিক নতুন সদস্য যোগদান করেছে এবং বর্তমানে মোট সদস্য সংখ্যা প্রায় ছয় শত। তিনি সভায় উপস্থিত সাধারণ সদস্যদের ধন্যবাদ জানান। তাকে সহযোগিতা করার জন্য কার্যনির্বাহী পরিষদের সকল সদস্যকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এরপর সভাপতি, নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ব্যারিস্টার আবদুল লতিফ শিকদার, সহকারী নির্বাচন কমিশনার ড. তুষার দাশ ও কাউন্সিলর ইব্রাহিম খলিল মাসুদের কাছে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বভার অর্পণ করেন এবং এই দায়িত্ব পালনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সংবিধানের বিধান অনুযায়ী সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে এই নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। কার্যনির্বাহী কমিটিতে মোট একুশটি পদের জন্য মনোনয়নপত্র আহ্বান করা হয়েছিল এবং সেগুলো যাচাই বাছাই করে বৈধ ঘোষণা করা হয়। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী কোন পদেই একের অধিক প্রার্থী না থাকায় কোন ভোটের (Ballot) আর আবশ্যকতা নেই। তাই নির্বাচন কমিশন এই একুশ জন প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেন এবং ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান।
২০২৫-২০২৬ সালের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা হলেন:
সভাপতি – কামরুল মান্নান আকাশ
সহ-সভাপতি ১ – গোলাম মওলা
সহ-সভাপতি ২ – এম এ আহসানুল হাদি
সাধারণ সম্পাদক – লিংকন শফিকউল্লাহ
সহযোগী সাধারণ সম্পাদক – বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী
কোষাধ্যক্ষ – জাহিদ মাহমুদ
সাংস্কৃতিক সম্পাদক – সাকিনা আক্তার
প্রকাশনা সম্পাদক – নুসরাত হুদা কান্তা
শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক – সেলিম মমতাজ
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সম্পাদক – নার্গিস বানু
ক্রীড়া সম্পাদক – হায়াত মাহমুদ
কার্যনির্বাহী সদস্য – তানিয়া ফারজানা, খায়রুল হক চৌধুরী, মোহাম্মদ নাজমুল হক, জুবায়ের মিয়া, শুভ্র প্রকাশ চৌধুরী, দিবাকর সমাদ্দার, মো. শফিকুল আলম, নুসরাত জাহান স্মৃতি, নাফিস আহমেদ খন্দকার ও এ এস এম হালিম উল্লাহ।
এরপর সভাপতি কামরুল মান্নান আকাশ বর্তমান কমিটির বিলুপ্তি ঘোষণা করেন এবং নতুন কমিটির কাছে দায়িত্বভার হস্তান্তর করেন। নতুন কমিটির পুনঃনির্বাচিত সভাপতি হিসাবে পুনরায় দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং একে একে সকল সদস্যকে লাল-সবুজ উত্তরীয় পরিয়ে অভিনন্দিত করেন। তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন এবং বলেন নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে এই কমিটি। তিনি প্রত্যাশা ব্যাক্ত করেন যে প্রবীণদের অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা এবং নবীনদের সাহস ও উদ্যামতা এই সংগঠনটিকে নিয়ে যাবে এক অনন্য উচ্চতায়।
দুপুরের খাবারের পর সঙ্গীত পরিবেশন করেন সিডনির জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মাসুদ মিথুন ও রুমানা হক। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তারা সুরের মায়াজালে মুগ্ধ করে রাখেন শ্রোতাদের। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিকেল ৫টায় আনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন সভাপতি কামরুল মান্নান আকাশ।
এমআরএম/এএসএম