তপ্ত দুপুরে সিক্ত হলাম জাফলংয়ে

6 hours ago 3

বিলকিস নাহার মিতু

ভূগোলের শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন বর্ষে ওঠা মানে আবার ক্লাস, প্রাকটিক্যাল আর ফিল্ড ওয়ার্ক। আর ফিল্ড ওয়ার্ক মানেই হলো হাফ টাইম মাঠকর্ম আর ফুল টাইম ভ্রমণ। আমরা ফিল্ড ওয়ার্কের জন্য গন্তব্য ঠিক করলাম সিলেট। যাওয়ার জন্য বাস আমরা রিজার্ভ নিয়েছি। সবকিছু ঠিক হলে আমরা রওয়ানা দিলাম ৩ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৫টায়। সিলেট পৌঁছলাম ভোর ৭টায়। এরপর থাকার হোটেলে উঠে জিনিসপত্র রেখে সবাই ফ্রেশ হয়ে রেস্টুরেন্টে সকালের নাস্তা করলাম। সবাই জানি, খাবার পরেই আমাদের ফিল্ডের কাজ শুরু হবে। তাই সবাই কাজের সব জিনিসপত্র এবং ফিল্ড ওয়ার্কের টি-শার্ট পরে আসলাম।

আমাদের সঙ্গে গাইড হিসেবে গিয়েছিলেন লুৎফুন নাহার ম্যাম এবং সুজয় স্যার। ম্যাম নির্দেশ দিলেন সবাই বাসে উঠে পরো। আমরাও বাসে উঠলাম হাতুড়ি, শাবল, থার্মোমিটার ইত্যাদি নিয়ে। বাস তার গতিতে চলছে। যেতে যেতে দেখি উঁচু উঁচু পাহাড় দূরে। কাছেই ছোট করে চা বাগান দু’চারটা। সময় পার হয়ে যাচ্ছে। আমরা ভাবছি, ম্যাম আমাদের কতদূরে কাজ করাতে নিয়ে যাচ্ছেন। কারণ সবাই ফিল্ডের কাজের প্রস্তুতি নিয়ে আসছি। এরই মধ্যে ম্যাম ঘোষণা করলেন, তোমাদের এখন জাফলং নিয়ে আসছি। এটি তোমাদের জন্য সারপ্রাইজ।

তপ্ত দুপুরে সিক্ত হলাম জাফলংয়ে

সবাই অবাক হয়ে গেলাম। অবাক হওয়ার বিশেষ কারণও আছে। কারণ হলো ম্যাম বলেছেন, আমাদের জাফলং নেওয়া হবে না। উঁচু উঁচু পাহাড়ি পথ ধরে আমরা পৌঁছে গেলাম জাফলং। সিলেট শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে জাফলং। সেখানে গিয়েই চোখ পড়লো ভারতের মেঘালয়ে। আশেপাশে নানান পর্যটক, চশমার অস্থায়ী দোকান আর ক্যামেরা ম্যানের ভিড়। ম্যাম সবাইকে আশেপাশে ঘুরে আসতে বলছেন। আমরা হাঁটতে হাঁটতে জাফলং জিরো পয়েন্ট চলে এলাম। সেখানে ছবি তুলে নিচে নামলাম পাহাড়ি সিঁড়ি দিয়ে। চারিদিকে অসংখ্য দোকান আর তাতে মজুত আছে চা, চকলেট, আচার এবং কাপড়ের বাহারি দোকান।

প্রায় ১০ মিনিটের মতো হেঁটে পৌঁছলাম পিয়াইন নদীর তীরে। সেখানে নৌকা ভাড়া করলাম জনপ্রতি ৬০ টাকায়। ১২ জন মিলে নৌকায় উঠলাম। নৌকায় উঠে এক অন্য অনুভূতি জাগলো আমাদের। স্বচ্ছ পানির নিচে পাথর দেখা যাচ্ছে। পানির ওপর রোদের প্রতিচ্ছবি গিয়ে পড়ছে নিচের পাথরের গায়ে। নদীর দুই ধারে পাথর ঘেরা। খানিক দূরেই দেখা যাচ্ছে ডাউকি নদীর ওপর ঝুলন্ত সেতু। এমন স্বর্গীয় অনুভূতি এর আগে আমার কখনোই হয়নি। চারদিকে পাহাড়, ছোট্ট নদী, আকাশটাও নীল, ঠান্ডা শীতল হাওয়া জুড়িয়ে দিলো মন। নদীর জলে হাত ভিজিয়ে ছেটাচ্ছিলাম একে অপরের গায়ে।

এরপর নদীর ঘাটে পৌঁছে আমরা হাঁটা ধরলাম মায়াবি ঝরনার উদ্দেশ্যে। মিনিট দশেক হাঁটার পর দেখতে পেলাম ঝরনা। আমরা যে যার মতো ছবি তুলতে ব্যস্ত। এর মধ্যে আমাদের সহপাঠী বোরহান ও ফুয়াদ ঝরনার কাছে উঁচু পাথরের ওপরে উঠে পড়লো। নিচে আরেক সহপাঠী বাদশা সবাইকে ছবি তুলে দিচ্ছিলো। তার আর পাথরের ওপরে ওঠা হলো না। বোরহান বোতল ভরে ঝরনার পানি নিয়ে এলো। আমরা সবাই সেই পানি পান করে তৃষ্ণা নিবারণ করলাম।

তপ্ত দুপুরে সিক্ত হলাম জাফলংয়ে

সময় স্বল্পতার জন্য খাসিয়া পুঞ্জিতে আর যাওয়া হলো না। ঝরনাটা উপভোগ করলেও খারাপ লাগলো। সেখানে যত্রতত্র ময়লা, বাচ্চাদের ডায়পার, এমনকি স্যানিটারি ন্যাপকিনও ফেলে রাখা। সেখানে ময়লার জন্য সুরক্ষিত ব্যবস্থা থাকলে আরও ভালো হতো। নৌকা পার হয়ে আমরা এপারে চলে এলাম। এখন উদ্দেশ্য আমাদের বাসের কাছে যাওয়া। কিন্তু এ পর্যায়ে স্বপ্নে হাঁটার অনুভূতি প্রত্যেকে অনুভব করলাম।

নামার সময় সবাই একসাথে নেমেছিলাম কিন্তু ওঠার সময় যে যার মতো করে উঠেছেন। কারণ দ্রুত ওঠা যাচ্ছে না। পাশে কিছু গাছের ডাল কাটা দেখে একটি ডাল ধরে আমি পার হলাম সিঁড়ি। ধীরে ধীরে সবাই উঠলো কিন্তু এখনো দুই সুমাইয়াকে খুঁজে পাচ্ছি না। তাদের প্রায় ১৫ মিনিট পরে দেখলাম। শুনলাম, তারা নাকি পথ হারিয়েছিলেন। আমরা আসার পরে দুপুরের খাবার সেখানে খেয়ে আবারও রওয়ানা দিলাম সিলেটের উদ্দেশ্যে। আমাদের ভ্রমণের প্রথমদিনের অনুভূতি অত্যন্ত চমৎকার। যা আমি কখনোই ভুলতে পারবো না।

লেখক: অনার্স ৩য় বর্ষ, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা।

এসইউ/জিকেএস

Read Entire Article