তরুণ প্রজন্মের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন ড. মোহাম্মদ আলী তারেক। অ্যাকাডেমিক উৎকর্ষতা, গবেষণায় নতুন দিগন্ত আর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করে তিনি এখন মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষা অঙ্গনের এক পরিচিত মুখ। বর্তমানে তিনি দেশটির শীর্ষস্থানীয় ইউনিভার্সিটি মালয়ার ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকসের ফাইন্যান্স বিভাগের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বরিশাল ক্যাডেট কলেজ থেকে শিক্ষাজীবন শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইন্যান্সে বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রিয়েল এস্টেট ফাইন্যান্সে এমফিল এবং জাপানের শিগা ইউনিভার্সিটি থেকে ফাইন্যান্সে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। উচ্চশিক্ষায় কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি জাপান সরকারের মর্যাদাপূর্ণ মনবুকাগাওশু বৃত্তি লাভ করেন।

ড. তারেক বর্তমানে মালয়েশিয়ার পাশাপাশি জাপানের ইয়ামাগুচি ইউনিভার্সিটিতেও ভিজিটিং রিসার্চার হিসেবে যুক্ত আছেন। এর আগে তিনি প্রায় এক দশক ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি মালয়েশিয়ার (ইউটিএম) ম্যানেজমেন্ট অব টেকনোলজি (এমওটি) বিভাগে সিনিয়র লেকচারার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি এমওটি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর (এমটিআইএম) এবং দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর (এমডিআরএম) প্রোগ্রাম তৈরি করেন।
তিনি ২০১৬ সালে জাপানের ইয়ামাগুচি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় ওয়াইইউ-এমজিআইআইটি আন্তর্জাতিক যৌথ মেধাস্বত্ব গবেষণাগার আইজিআইপিএল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ২০২২ সাল পর্যন্ত আইজিআইপিএলর প্রধান ছিলেন। তিনি এমজেআইআইটিতে দুর্যোগ প্রস্তুতি ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ডিপিপিসিতে থাকাকালীন তিনি ডিপিপিসি এবং বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে গবেষণা এবং একাডেমিক সহযোগিতা প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।
ফিনটেক, ব্লকচেইন, কর্পোরেট গভর্ন্যান্স, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা, পেটেন্ট বিশ্লেষণ এবং টেকসই অর্থায়ন (ইএসজি)- বিষয়ে তার গবেষণার বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। ড. তারেক ট্রান্সডিসিপ্লিনারি গবেষণায়ও জড়িত। তিনি বায়োমেডিক্যাল গবেষণার সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনার প্রতি তার আগ্রহের কারণে তিনি মালয়েশিয়ার বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন মন্ত্রণালয়ের (এমওএসটিআই) সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করেন। ন্যানো মালয়েশিয়ার কৌশলগত পরিকল্পনা অধিবেশনে তিনি মালয়েশিয়ার গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পেটেন্ট উন্নয়ন এবং প্রবণতা বিষয়ক একটি অধিবেশন পরিচালনা করেন।
তার গবেষণাপত্র আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জার্নাল ইন্টারন্যাশনাল রিভিউ অব ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্স, ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইকোনমিকস, সাস্টেইনেবল ফিউচারস, হিউম্যানমিকস। কোয়ালিটি রিসার্চ ইন ফাইন্যানশিয়াল মার্কেটস –এ প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি এলসেভিয়ার অ্যাডভাইজরি প্যানেলের সদস্য এবং ওয়েব অব সায়েন্সের রিভিউয়ার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ‘দ্য হেলাল ইন্ড্রাস্ট্রি ইন এশিয়া: পার্সপ্রেক্টিভ ফ্ররম ব্রুনায় দারুসসালাম, মালয়েশিয়া, জাপান, ইন্দোনেশিয়া অ্যান্ড চায়না’ বইটি অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্পাদকদের সঙ্গে যৌথভাবে সম্পাদনা করেছেন যা ২০২৫ সালে স্পিয়ারের অধীনে প্রকাশিত হয়। বইটি অনলাইনে বিনামূল্যে পাওয়া যায়।
টানা পাঁচ বছর (২০১৯–২০২৩) ইউনিভার্সিটি টেকনলজি মালয়েশিয়া এ ‘অনুগুরাহ পার্কিডিম্যাটন সিইএমলং পুরস্কার পেয়েছেন ড. তারেক। তিনি ২০২৪ সালে ইউনিভার্সিটি মালায়তে তার অবদানের জন্য ‘সিজিল পেরখিদমাতান চেমারলাং’ (বিশেষ সেবা পুরস্কার) পেয়েছেন। এছাড়াও পেয়েছেন ‘এমেরাল্ড লিটারাটি অ্যাওয়ার্ড ২০১৯’, শ্রেষ্ঠ শিক্ষকতা পুরস্কার (ইউটিএম) এবং জাপানের ইশি মেমোরিয়াল সিকিউরিটিজ রিসার্চ অ্যাওয়ার্ড।
গবেষণা ও উদ্ভাবনকে বাংলাদেশের উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে দেখতে চান তিনি। দক্ষ জনশক্তি গঠনে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যৌথ গবেষণা বাড়লে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের সুযোগ তৈরি করতে পারবে।

ড. তারেক শুধু একজন শিক্ষক নন, তিনি একজন এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) প্র্যাকটিশনার ও সমাজকর্মী। তিনি ইয়ুথ হাব ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশি এক্সপ্যাটস ইন মালয়েশিয়া-এর নির্বাহী সদস্য এবং অ্যাডভাইজরি প্যানেল মেম্বার, অস্ট্রেলিয়ান ইনস্টিটিউট ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট।
মালয়েশিয়ার শিক্ষা বিশ্লেষক ড. লিম চেং হাও বলেন, ড. তারেক এমন এক উদাহরণ, যিনি একাডেমিক গবেষণাকে সমাজ ও নীতিনির্ধারণের সঙ্গে যুক্ত করতে পেরেছেন। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য তার অভিজ্ঞতা মূল্যবান।
ইউনিভার্সিটি অব মালয়ার এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বলেন, ড. তারেক স্যার একজন মেন্টর। তার ক্লাসে আমরা শুধু বই নয়, বাস্তব অর্থনীতির প্রয়োগ শিখি।
আরেকজন মালয়েশিয়ান শিক্ষার্থী জানান, স্যারের গবেষণার ধরণ একেবারে বাস্তবধর্মী। তিনি আমাদের ফিনটেক ও ব্লকচেইন নিয়ে এমনভাবে বোঝান, যেন আমরা ভবিষ্যতের অর্থনীতিকে ছুঁয়ে দেখতে পারি।
বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষা বিশ্লেষক ড. তানভীর আহমেদ বলেন, ড. তারেকের ক্যারিয়ার বাংলাদেশের তরুণ গবেষকদের জন্য এক আলোকবর্তিকা। তার আন্তর্জাতিক যাত্রা প্রমাণ করে, গবেষণা ও দক্ষতার মাধ্যমে বিশ্ব একাডেমিক অঙ্গনে নেতৃত্ব সম্ভব।
ইউথ হাব ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশের সহ-প্রতিষ্ঠাতা পাভেল সারওয়ার বলেন, ড. আলী তারেক একজন অসাধারণ সংগঠনিক মানুষ। তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা উন্নয়ন ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নে তার অবদান সত্যিই প্রশংসনীয়।
মালয়েশিয়ায় তিনি স্ত্রী ও দুই কন্যাকে নিয়ে বসবাস করছেন। তার স্ত্রী মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালয়ার মেডিসিন অনুষদের সার্জারি বিভাগে মেডিকেল লেকচারার হিসেবে কর্মরত।
পাভেল সারওয়ার বলেন, ড. মোহাম্মদ আলী তারেকের সাফল্য প্রমাণ করে—মেধা, অধ্যবসায় ও নিষ্ঠা থাকলে বাংলাদেশের শিক্ষাবিদরাও বৈশ্বিক অঙ্গনে নেতৃত্ব দিতে পারেন। তিনি শুধু একজন একাডেমিক নয় বরং গবেষণা–নির্ভর জ্ঞানচর্চার প্রতীক হয়ে উঠেছেন—যা তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে উচ্চশিক্ষা ও উদ্ভাবনের নতুন দিগন্তে।
এমআরএম/জিকেএস

3 hours ago
3









English (US) ·