মার্কিন তরুণরা মানসিক অসুস্থতা মহামারির মাঝামাঝি অবস্থায় রয়েছে। ড্যানিয়েল আইজেনবার্গের চেয়ে খুব কম লোকই এই বিষয়ে ভালো জানেন। কারণ ২০০৭ সালে মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউসিএলএ স্বাস্থ্য-নীতির এই অধ্যাপক পাঁচ হাজার ৫৯১ জন কলেজ শিক্ষার্থীর ওপর একটি মানসিক-স্বাস্থ্যবিষয়ক জরিপ চালান। এতে ২২ শতাংশের মধ্যে হতাশার লক্ষণ পাওয়া যায়।
পরবর্তী ১৫ বছরে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালে যখন ৩৭৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর ওপর জরিপ করা হয়েছিল, তখন ৪৪ শতাংশের মধ্যে বিষণ্নতার লক্ষণ পাওয়া যায়। ২০২৩ সালে ৪১ শতাংশ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিষণ্নতা পাওয়া যায়। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা আরও কমে ৩৮ শতাংশে নেমে আসে।ফলে আইজেনবার্গ এ বিষয়ে সতর্কতার সঙ্গে আশাবাদী এবং এটিকে তিনি ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই বেশি উচ্ছ্বসিত নন। দ্য ইকোনমিস্টের বেশ কয়েকটি জাতীয় জরিপের বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, কলেজ ক্যাম্পেসগুলোতে যে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা মার্কিন তরুণদের মধ্যে একটি বৃহত্তর প্রবণতার অংশ। এই প্রবণতা বাবা-মা ও নীতিনির্ধারকদের জন্যও একটি আশাব্যঞ্জক লক্ষণ।
দেশটিতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির চিত্র দেখা যায়। ২০২২ সালে ২৫ বছরের কম বয়সী ছয়জন প্রাপ্তবয়স্ক আমেরিকানের মধ্যে একজন সপ্তাহে অন্তত একবার বিষণ্ন বোধ করার কথা জানিয়েছেন, যা দশ বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। তাছাড়া প্রায় দশজন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে একজন বলেছেন যে তাদের বিষণ্নতা ধরা পড়েছে। ২০২১ সালে পাঁচজন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে একজনেরও বেশি বড় বিষণ্নতায় ভোগার কথা জানিয়েছেন।
তরুণরা কেন এত অসুখী হয়ে উঠছে তা ব্যাখ্যা করার জন্য গবেষকরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে একটি জনপ্রিয় তত্ত্ব হলো যে সোশ্যাল মিডিয়াই এর জন্য দায়ী। ২০১০-এর দশকের গোড়ার দিকে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি স্মার্টফোন ও ইনস্টাগ্রাম-ফেসবুকের মতো সোশ্যালমিডিয়া অ্যাপের উত্থানের সঙ্গে মিলে যায়। অনেকেই এই তত্ত্বটিকে আকর্ষণীয় বলে মনে করেন। তবে দীর্ঘ সময় ধরে কিশোর-কিশোরীদের মেজাজ এবং সোশ্যাল-মিডিয়া ব্যবহার ট্র্যাক করে এমন গবেষণাগুলোতে এই ধরনের অ্যাপের ব্যবহার ও মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে কোনো শক্তিশালী সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় না।
মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থার বৃদ্ধির একটি কারণ হতে পারে মানসিক স্বাস্থ্যের সংজ্ঞায়নের পরিবর্তন। তরুণ মার্কিনিরা তাদের সংগ্রাম শেয়ার করে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি খোলামেলা। দুর্বল মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কি কোয়ালিফাই করে সে সম্পর্কেও তাদের ভিন্ন ধারণা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০২১ সালে ১৭ বছরের কম বয়সীদের আত্মহত্যার হার প্রতি এক লাখের মধ্যে ৫ দশমিক ১ জন ছিল, যা ২০০১ সালে ৩ দশমিক ৫ জনে চেয়ে বেশি ছিল।
মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতা ও আত্মহত্যার ওপর সাতটি ভিন্ন জরিপের দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে কিশোর ও তরুণ প্রাপ্তবয়স্করা প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভালো করছে।
রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র কর্তৃক পরিচালিত জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে সপ্তাহে অন্তত একবার হতাশাগ্রস্ত বোধ করেন এমন তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের হার ২০২২ সালে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল। যা ২০২৩ সালে কমে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশে নামে। ২০২৩ সালে জীবন উপভোগ করছেন না এমন ১৫ এবং ১৬ বছর বয়সীর হার ছিল ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ। যা ২০২১ সালের ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কম। একইভাবে দেশটিতে আত্মহত্যার হারও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
এমএসএম