রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে কনসার্ট ‘ইকোস অব রেভল্যুশন’। আজ (২১ ডিসেম্বর) শনিবার বিকেল ৪টায় সিলসিলা ব্যান্ডের কাওয়ালি দিয়ে শুরু হয় কনসার্ট। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে ততটা দর্শক দেখা যায়নি। যদিও স্টেডিয়ামের বাইরে লক্ষ্য করা গেছে অস্বাভাবিক যানজট। সন্ধ্যা নামতেই অবশ্য বদলে যায় দৃশ্য। আসতে শুরু করেন দর্শনার্থীরা। যেন তরুণদের দখলে চলে যায় বনানীর আর্মি স্টেডিয়াম।
আজ বেলা ২টা থেকে দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় আর্মি স্টেডিয়ামের গেট। এর আগে থেকেই আর্মি স্টেডিয়ামের বাইরে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রোতাদের উপস্থিতি বাড়ছে। তবে স্টেডিয়ামের বাইরে রাস্তায় ভীষণ যানজটে নাকাল অবস্থায় দেখা গেছে মানুষকে।
কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ ও স্কাউটরা জানান, বনানীগামী রাস্তা সাময়িকভাবে বন্ধ, এই তথ্য অনেকে জানতেন না। এ কারণে তাদের যানজটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ওই রাস্তায় চলাচলরত গাড়িগুলো এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে তারা জানিয়েছেন, এক্সপ্রেসওয়েতে আজ টোল নেওয়া হচ্ছে না।
আলোচিত ‘আওয়াজ উডা’ গানের র্যাপার হান্নান গান পরিবেশন করেছেন মঞ্চে। এই গান গেয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় জেল খেটেছিলেন তিনি। হান্নানের পর মঞ্চে ওঠেন আরেক আলোচিত র্যাপার সেজান। তিনি তার ‘কথা ক’ গান শুরু করলে শ্রোতাদের মধ্যে সাড়া পড়ে যায়। আজকের কনসার্টের প্রধান আকর্ষণ জনপ্রিয় পাকিস্তানি সংগীতশিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান। তিনি ছাড়াও বাংলাদেশের ব্যান্ড আর্টসেল, চিরকুট, আফটারম্যাথ গাইবে বলে জানানো হয়েছিল।
কনসার্টে উপস্থিত দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। মিরপুর থেকে আসা দুই বান্ধবী রিমা ও পলাশ জানান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তারা। রিমা বলেন, ‘অনেক দিন পর কনসার্টে এসে ভীষণ ভালো লাগছে। সময় এখন তারুণ্যের। তাদের উদ্যোগের সঙ্গে থাকতেই এসেছি, খুব লাগছে।’ কথা বলতে গিয়ে হঠাৎ আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন পলাশ। ৫ আগস্টের সৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের বাসার সামনে রাস্তায় কিছু লোক ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মারছিল। আমরা গিয়ে বলেছিলাম ছেড়ে দিতে। সেজন্য আমাদের ওপর হামলা করেছিল। এত কিছুর পর দেশটা স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত করতে পেরেছে এটাই বড় কথা। দেশটা আমরা মিলেমিশে সাজাবো।’
- আরও পড়ুন:
- আর্মি স্টেডিয়ামে আজ গাইবেন রাহাত ফতেহ আলী খান
- ঢাকায় কনসার্ট নিয়ে যে বার্তা দিলেন রাহাত ফতেহ আলী
ধানমন্ডি থেকে পরিবার নিয়ে কনসার্ট দেখতে এসেছেন একটি ইংরেজিমাধ্যম স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাফি উদ্দিন। কথায় কথায় জাগো নিউজকে তিনি বলেন, ‘১০ বছর পর ওপেন কনসার্টে এসেছি। সুন্দর পরিবেশ, খুব ভালো লাগছে। তরুণ দেশটা পরিবর্তন করবে, সেই আশা করবো। তাদের সাহায্য করতে আমরা সবাই সবসময় পাশে থাকবো।’ নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায় আর্মি স্টেডিয়ামে। তাদের একজন লাবিব। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনে ছিলাম। যারা দেশটা এগিয়ে নেবে এখনও তাদের পাশে আছি।’ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারকে সহায়তা দিতে এই কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে। কনসার্টের টিকিট বিক্রির অর্থ গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবার নিয়ে কাজ করা কল্যাণমূলক সংস্থা ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এ দেওয়া হবে।
আর্মি স্টেডিয়ামে দেখা গেছে গণ অভ্যুত্থানের স্মৃতিবিজড়িত গ্রাফিতি, মঞ্চনাটক, মুগ্ধ ওয়াটার জোনসহ বিভিন্ন কর্নার। যৌথভাবে এ কনসার্টের আয়োজন করে ‘স্পিরিটস অব জুলাই’ প্ল্যাটফর্ম ও স্কাইট্র্যাকার লিমিটেড। কনসার্টে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত পরিবারের শতাধিক সদস্য উপস্থিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।