এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারার ‘সাহস’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির সাবেক নেত্রী নীলা ইসরাফিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, তাসনিম জারা, আজ যাকে ঘিরে করতালি, আলোচনার ঝড়। তার নিঃস্বার্থ উচ্চারণের জন্য প্রশংসা হচ্ছে, তিনি সাহসী, এ কথা শুনে মানুষের মুখ ভরে যাচ্ছে। আমিও বলি, হ্যাঁ, আপনি সাহসী। তবে সেই সাহস কি নিছক ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বুলি আওড়ানো পর্যন্ত সীমাবদ্ধ?
পোস্টে তিনি লেখেন, কারণ আমি জানি আপনার আরেকটা চেহারা। একদিন নাগরিক কোয়ালিশনের প্রোগ্রামে, ডেইলি স্টার্টার অফিসে আমি ভীষণ অসহায় অবস্থায় তুষারের ভয়ংকর ঘটনার কথা খুলে বলেছিলাম। কান্নাভেজা কণ্ঠে আপনার কাছে সাহায্য চেয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম একজন নারী হিসেবে আপনি অন্তত আমার পাশে দাঁড়ান। কিন্তু কী করলেন আপনি? ঠান্ডা নীরবতা। ফাঁপা প্রতিশ্রুতি। চোখ ফেরানো। যেন আমার বেদনা আপনার কানে পৌঁছায়নি, যেন আমার ক্ষত আপনাকে স্পর্শই করেনি।
তিনি আরও বলেন, আজ মানুষ আমাকে প্রশ্ন করে, ‘কেন আপনি তার পাশে দাঁড়ালেন, অথচ তিনি আপনার পাশে দাঁড়ালেন না?’ এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া আমার জন্য যন্ত্রণাদায়ক, কারণ সত্যিই আমি আপনার পাশে দাঁড়িয়েছি, তবুও আপনি আমার জন্য একটিবারও এগিয়ে আসেননি। আমার এই অবস্থান আজ আমাকে মানুষের বকা খাওয়াচ্ছে, সমালোচনার ঝড় বইছে আমার দিকে।
নীলা ইসরাফিল লেখেন, তাসনিম জারা, আপনি সাহসী, কিন্তু সেই সাহস আসলেই সাহস? নাকি কেবল প্রদর্শনী সাহস? মঞ্চে দাঁড়িয়ে হাততালি কুড়ানোর সাহস? জনতার সামনে ইমেজ তৈরির সাহস? অন্যায়ের সময় চুপ থাকার সাহস?এটাই কি আপনার রাজনৈতিক চরিত্র? যেখানে সত্য চাপা পড়ে সুবিধার নিচে? যেখানে অন্যের কান্না চাপা পড়ে আপনার নির্লিপ্ত নীরবতায়? যেখানে একজন নারী হয়েও নারীর পাশে না দাঁড়ানোই হয় মূল দর্শন?
সাবেক নেত্রী লেখেন, তাসনিম জারা, আপনি মুখে শক্ত, কিন্তু কাজে দুর্বল। আপনি কণ্ঠে সাহসী, কিন্তু হৃদয়ে কাপুরুষ। ইতিহাস এ চেহারাকে চিহ্নিত করবেই,কারণ ইতিহাস ভণ্ডামিকে কখনো ক্ষমা করে না।
তিনি লেখেন, আপনার কথিত সাহস যদি সত্যিই সাহস হতো, তবে আপনি আমার পাশে দাঁড়াতেন, নীরবতা নয়, একটি অবস্থান নিতেন। কিন্তু আপনি চুপ ছিলেন। এ চুপ থাকা শুধু আপনার নয়, সমগ্র রাজনৈতিক চরিত্রের দেউলিয়া হয়ে যাওয়া।
তিনি আরও লেখেন, আজ মানুষ আপনাকে সাধুবাদ দিচ্ছে, প্রশংসা করছে। কিন্তু একদিন এই প্রশংসাই রূপ নেবে ব্যঙ্গচিত্রে। একদিন মানুষ বলবে,তাসনিম জারা সাহসী ছিলেন, তবে সেই সাহস ছিল কেবল আলো-ঝলমলে মঞ্চের জন্য অন্যের কান্না, অন্যের বেদনা, অন্যের রক্তক্ষরণ তার কাছে মূল্যহীন ছিল।
পরিশেষে তিনি লেখেন, তাসনিম জারা, আপনার এই নীরবতা আপনারই শিকল। আপনি যতই আধুনিকতার মুখোশ পরুন, যতই শক্তিশালী ভঙ্গিতে দাঁড়ান, ইতিহাস আপনাকে মনে রাখবে নীরব, সুবিধাবাদী, মুখোশধারী নারী হিসেবে। শুধুমাত্র উচ্চ শিক্ষিত হলেই হয় না সঙ্গে মানবিক হতে হয়। আর আপনি একজন মানবিক নারী নন।