‘তুমি দোয়া কইরো আমি যেন শহীদ হই’
স্ত্রীর নিষেধ সত্ত্বেও ছাত্রদের সঙ্গে ২০ জুলাই সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেন মঞ্জুরুল ইসলাম। বেলা ১১টার দিকে বাসায় ফিরে খাবার খেতে বসেন তিনি। এ সময় হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও বোমা বর্ষণ হতে থাকলে খাবার শেষ না করেই ফের যেতে চান মঞ্জুরুল। স্ত্রী আবারও বাধা দেন। সেসময় মঞ্জুরুল তার স্ত্রীকে বলেন, ‘তুমি দোয়া কইরো আমি যেন শহীদ হই’।
একথা বলে স্ত্রীর বাঁধা উপেক্ষা করে বাসা থেকে বের হয়ে যান তিনি। এর ১০ মিনিট পর স্ত্রীর কাছে খবর আসে তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। পরে উন্নত চিকিৎসার অভাবে ওই দিনই মারা যান তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রংপুরের পীরগাছায় জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের স্মরণে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত স্মরণসভায় স্বামীকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কথাগুলো জানান শহীদ মঞ্জুরুলের স্ত্রী রাহিমা বেগম।
মঞ্জুরুল ইসলাম রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের জুয়ান গ্রামের এনছের আলীর ছেলে। জীবিকার তাগিদে ঢাকায় কখনও রিকশা, কখনও রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন তিনি। গাজীপুরের বড়বাড়ি জয়বাংলা রোডে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। ২০ জুলাই সকালে সেখানেই পুলিশের গুলিতে মারা যান তিনি।
স্মরণসভায় মঞ্জুরুলের স্ত্রী তার ছোট ২ সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা ও তাকে একটি চাকরি প্রদানের জন্য সরকারের কাছে দাবি করেন।
এ অনুষ্ঠানে পীরগাছার ছাওলা ইউনিয়নের অপর শহীদ মামুন মিয়ার মা তাসলিমা বেগম স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানান, তার ছেলে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় দীর্ঘদিন গার্মেন্টসে চাকরি করেছেন। কয়েক বছর আগে ছোট একটা গার্মেন্টস ব্যবসা ধরেছিলেন। গত ৫ আগস্ট ঢাকার মিরপুরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যোগ দিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা যান তিনি।
অনুষ্ঠানে শহীদ মামুন মিয়ার মা তার শিক্ষিত মেয়েকে একটা চাকরি প্রদানের দাবি করেন।
স্মরণসভায় পীরগাছার কল্যাণী ইউনিয়নের শহীদ সাইফুল ইসলাম স্ত্রী রাণি বেগম স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, তার স্বামী ঢাকার সদরঘাটে একটি মার্কেটে লন্ড্রির কাজ করতেন। ৫ আগস্ট বংশাল থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। এসময় তিনি আরও বলেন, তিনি এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি। তিনি তার স্বামীর হত্যার বিচার চান। সেইসঙ্গে তার দুই ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যৎ জীবনের সুরক্ষা চান।
বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে উপজেলা হলরুমে অনুষ্ঠিত ওই স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক সুমন। এতে বক্তব্য রাখেন পীরগাছা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. তাজুল ইসলাম, সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান রেজা, তাম্বুলপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বজলুর রশিদ মুকুল, শিক্ষার্থী প্রতিনিধি শামীম মিয়া, ফারদিন এহসান মাহিম প্রমুখ।
এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমন তার বক্তব্যে বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পীরগাছা উপজেলায় ৩ জন শহীদ হয়েছেন এবং ১০ জন আহত হয়েছেন। শহীদ সাইফুল ইসলামের বিষয়ে ইতোমধ্যে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
তিনি বলেন, সরকার শহীদ পরিবারের পাশে আছে। শহীদদের নামে বিভিন্ন অডিটোরিয়াম, রাস্তাঘাট, মিনি স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন স্থাপনায় তাদের নামকরণ করা হবে বলে জানান তিনি।
স্মরণসভা শেষে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া পরিচালনা করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ফিল্ড সুপারভাইজার মাহমুদুল হাসান।