মিষ্টির নাম শুনলেই জিভে পানি আসে না এমন মানুষ মেলা ভার। এমনই এক মিষ্টির নাম রাজবাড়ীর ‘ক্ষীর চমচম’। যার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে জেলাসহ দেশ ও দেশের বাইরে।
এদিকে চমচমের পাশাপাশি রাজবাড়ীতে তৈরি মালাইকারী, প্যাড়া সন্দেশ, বর্ফি, কাটারিভোগ, লেডিকন, রসগোল্লা, রসমালাই, কালোজাম, স্পঞ্জ, চকলেট মিষ্টি, দইসহ বিভিন্ন পদের মিষ্টির সুনাম রয়েছে। সারা বছরই এসব মিষ্টির কদর থাকলেও ঈদ কিংবা উৎসব পার্বণে এর চাহিদা বেড়ে যায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ। এরমধ্যে ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে থাকে ক্ষীর চমচম। ক্ষীর চমচম একটু রসালো হয়। এর ওপর খাঁটি দুধের ছানার তৈরি মাওয়ার শুকনো গুঁড়ার প্রলেপ দিয়ে আরও সুস্বাদু করে তোলা হয়।
এবারের ঈদে ক্রেতাদের বাড়তি চাহিদা সামাল দিতে আগে ভাগেই প্রস্তুতি নিয়েছেন মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে রাজবাড়ীর কারখানাগুলোতে মিষ্টি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। যেন দম ফেলার সময় নেই।
রাজবাড়ী জেলা শহরে বহু মিষ্টির দোকান থাকলেও হাতেগোনা কয়েকটি দোকানের মিষ্টি উল্লেখযোগ্য। এরমধ্যে ভাদু সাহ, শংকর সাহ, মিষ্টি বাড়ী, হোসেন মিষ্টান্ন বেশি জনপ্রিয়। এসব দোকানে প্রতিদিনই বিক্রি হয় মনকে মন মিষ্টি।
খামার ও খামারিদের থেকে সংগ্রহ করা গরুর খাটি দুধ দীর্ঘ সময় জ্বালিয়ে ছানায় রূপান্তর করে চমচমসহ বিভিন্ন মিষ্টি তৈরি করা হয়। এছাড়া কোনো কোনো মিষ্টি রসে ভিজিয়ে তৈরি করা হয়।
ভোজনরশিক রুহুল উদ্দিন কাদরী, আব্দুল কাইয়ুমসহ কয়েকজন বলেন, রাজবাড়ীর মিষ্টির মধ্যে চমচম অত্যন্ত সুস্বাদু। নিজেদের খাওয়া বা আত্মীয়-স্বজনের বাড়ীতে নিলে পছন্দের প্রথমে থাকে ক্ষীর চমচম। এছাড়া অন্যান্য মিষ্টিও অনেক ভালো। রাজবাড়ীর মিষ্টির সুনাম শুধু এই জেলাতেই না, সারাদেশ এমনকি বিদেশেও রয়েছে। প্রতিনিয়তই ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান এবং অনেকে দেশের বাইরে যাওয়ার সময় রাজবাড়ীর মিষ্টি প্যাকেটজাত করে নিয়ে যায়।
মিষ্টি তৈরির কারিগর শাওন রায়, মনিরুল ইসলাম ও তপন রায় বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমাদের কাজের চাপ অনেক। আগের চেয়ে এসময় কয়েকগুণ বেশি মিষ্টি বানাতে হয়। কয়েক পদের মিষ্টির মধ্যে আমরা বেশি তৈরি করছি ক্ষীর চমচম। এই চমচম খুবই সুস্বাদু হয়। খামার থেকে খাটি দুধ সংগ্রহ করে ছানা ও মাওয়া বানিয়ে চমচমে প্রলেপ দিয়ে ক্ষীর চমচম তৈরি হয়। তবে চমচমের পাশাপাশি শুকনো মিষ্টি, কালোজাম, লেডিকনসহ অন্যান্য মিষ্টিও তৈরি করছি এবং এগুলোও সুস্বাদু।
মিষ্টিবাড়ীর স্বত্তাধীকারী যোগেশ ঘোষ গৌর বলেন, ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আমরা মিষ্টি তৈরি করছি। যে কারণে আমাদের ব্যস্ততা অনেক বেশি। রাজবাড়ীর মিষ্টির মধ্যে ক্ষীর চমচমের চাহিদা সবসময় বেশি থাকে। কেউ টেস্ট করার জন্য এটি খেয়ে বাড়ি বা অফিসের জন্য কয়েক কেজি করে নিয়ে যায়। যার কারণে এটার চাহিদা বেশি থাকে। এবার ঈদে সব মিলিয়ে আমার কারখানায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মণ মিষ্টি তৈরির প্রস্তুতি আছে। তবে দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী বিক্রি কেমন হবে বোঝা মুশকিল। কারণ মানুষের হাতে টাকা কম। তারপরও আশায় আছি ভালো কিছুর।
নির্মল মিষ্টান্ন ভান্ডারের (ভাদু সাহা) মালিক পরিমল সাহা ও শংকর মিষ্টান্ন ভান্ডারের মালিক পুলক সাহা বলেন, ঈদের সময় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মিষ্টির চাহিদা থাকে। ফলে অন্যান্য বারের মতো এবার ঈদেও আমাদের বাড়তি প্রস্তুতি আছে। আমাদের ক্ষীর চমচমসহ অন্যান্য সব মিষ্টি গরুর খাঁটি দুধ দিয়ে তৈরি করা হয়। যার কারণে সবার কাছে রাজবাড়ীর মিষ্টি জনপ্রিয়। এরমধ্যে ক্ষীর চমচম বেশি জনপ্রিয়। ঈদের সময় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেকে রাজবাড়ীতে ঘুরতে বা বেড়াতে আসে। সুস্বাদু হওয়ায় তারা মিষ্টি খায় এবং নিয়ে যায়। যার কারণে আমাদের বাড়তি প্রস্তুতিও রাখতে হয়।
এফএ/এএসএম