দিনভর উত্তাল চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালসহ (এনসিটি) বিভিন্ন স্থাপনা বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ বন্ধের দাবিতে উত্তাল ছিল চট্টগ্রাম নগরী। বন্দরের তিনটি প্রবেশপথে অবরোধ কর্মসূচি করেছে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। বন্দরমুখী টোল সড়কে এক ঘণ্টা বন্ধ রেখে অবরোধ করায় বন্ধ ছিল যান চলাচল। এতে সাধারণ মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।  মূল সড়ক বন্ধ থাকায় নগরের ভেতর দিয়েই কনটেইনারবাহী যানবাহন চলাচল করছে। পরে পুলিশের আশ্বাসে এক ঘণ্টা পর সোয়া ১১টার দিকে সড়ক ছেড়ে দেন আন্দোলনকারীরা।  অন্যদিকে বুধবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বন্দরের সিসিটি ও এনসিটি বিদেশিদের হাতে দেওয়ার ষড়যন্ত্র ও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শ্রমিক, কর্মচারীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বন্দর রক্ষা পরিষদ।  শ্রমিক নেতারা বলছেন, বন্দরের এনসিটি একটি লাভজনক টার্মিনাল। এটি বিদেশিদের ইজারা দিতে তড়িঘড়ি করছে সরকার। অন্যদিকে লালদিয়া চুক্তির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হয়েছে। বন্দর জনগণের সম্পদ। জনগণের আড়াল করে চুক্তির বিষয়টি রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী। এদিন সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের এছহাক ডিপো–সংলগ্ন টোল প্লাজার

দিনভর উত্তাল চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালসহ (এনসিটি) বিভিন্ন স্থাপনা বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ বন্ধের দাবিতে উত্তাল ছিল চট্টগ্রাম নগরী। বন্দরের তিনটি প্রবেশপথে অবরোধ কর্মসূচি করেছে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। বন্দরমুখী টোল সড়কে এক ঘণ্টা বন্ধ রেখে অবরোধ করায় বন্ধ ছিল যান চলাচল। এতে সাধারণ মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। 

মূল সড়ক বন্ধ থাকায় নগরের ভেতর দিয়েই কনটেইনারবাহী যানবাহন চলাচল করছে। পরে পুলিশের আশ্বাসে এক ঘণ্টা পর সোয়া ১১টার দিকে সড়ক ছেড়ে দেন আন্দোলনকারীরা। 

অন্যদিকে বুধবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বন্দরের সিসিটি ও এনসিটি বিদেশিদের হাতে দেওয়ার ষড়যন্ত্র ও কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শ্রমিক, কর্মচারীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বন্দর রক্ষা পরিষদ। 

শ্রমিক নেতারা বলছেন, বন্দরের এনসিটি একটি লাভজনক টার্মিনাল। এটি বিদেশিদের ইজারা দিতে তড়িঘড়ি করছে সরকার। অন্যদিকে লালদিয়া চুক্তির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হয়েছে। বন্দর জনগণের সম্পদ। জনগণের আড়াল করে চুক্তির বিষয়টি রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী।

এদিন সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের এছহাক ডিপো–সংলগ্ন টোল প্লাজার অদূরে শতাধিক শ্রমিক সড়কে অবস্থান করছেন। এ সময় টোল সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের আশ্বাসে এক ঘণ্টা পর সোয়া ১১টার দিকে সড়ক ছেড়ে দেন আন্দোলনকারীরা।

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার চুক্তির প্রতিবাদে এবং লালদিয়ার চর ও পানগাঁও টার্মিনালে বিদেশি অপারেটরদের ইজারার চুক্তি বাতিলের দাবিতে বন্দরমুখী সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে স্কপ। গত শনিবার স্কপের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার সকাল ১০টা থেকে নগরের হালিশহরের বড়পুল এলাকায়ও প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করে স্কপ। এতে সমর্থন জানায় পরিবহনশ্রমিকদের কয়েকটি সংগঠন ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীরা। কর্মসূচির শুরুতে সমাবেশ করেন তারা। সেখানে কর্মসূচির সমর্থনে বক্তব্য দেন শ্রমিক নেতারা।

ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম সম্পাদক ইফতেখার কামাল বলেন, স্কপের পূর্বঘোষিত বন্দর অবরোধ কর্মসূচি বুধবার সকাল ১০টা থেকে তিনটি পয়েন্টে শুরু হয়। মাইলের মাথা (সী মেন্স হোস্টেল), টোল রোডের টোলপ্লাজা গেট ও বড়পুল এলাকায় এ অবরোধ করা হয়।

সমাবেশে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস কে খোদা তোতন বলেন, আমরা চাইলেই বন্দর অচল করে দিতে পারি। কিন্তু আমরা সময় দিচ্ছি। বিদেশিদের টার্মিনাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুন।

শ্রমিক নেতা খোরশেদ আলম বলেন, বন্দরের এনসিটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। কোনো রাষ্ট্র লাভজনক স্থাপনা ইজারা দেয় না। এনসিটি ইজারার উদ্যোগের তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের লড়াই করে প্রতিহত করতে হবে। দেশকে বিক্রি করতে দেব না। প্রয়োজনে জীবন দিতে প্রস্তুত আছি।

শ্রম অধিকারকর্মী ফজলুল কবির বলেন, বন্দর কোনোভাবেই বিদেশিদের হাতে দেওয়া যাবে না।

চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি ও এনসিটি বিদেশিদের হাতে হস্তান্তরের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করে বন্দর রক্ষা পরিষদ। বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় নগরের আগ্রাবাদ মোড় মিছিলটি বারিক বিল্ডিং মুখে অগ্রসর হয়। তবে পুলিশ সামনে ব্যারিকেট দিলে আইয়ুব ট্রেড সেন্টারের সামনে গিয়ে রাস্তার ডিভাইডারে তাৎক্ষণিক পথসভা করে তারা। বিক্ষোভ মিছিলে কয়েকশ মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এদের বেশিরভাগই চট্টগ্রাম বন্দরে কর্মরত বলে দাবি আয়োজকদের।

বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন— গণসংহতি আন্দোলন কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ও বন্দর রক্ষা পরিষদের আহ্বায়ক সৈয়দ মোহাম্মদ নাহাসান মারুফ (রুমী), নাগরিক ঐক্য চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি নুরুর আফসার স্বপন, বন্দর রক্ষা পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক চিরন্তন চিরু, বন্দর রক্ষা পরিষদের শফিকুল ইসলাম রিটন।

বন্দর রক্ষা পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, দেশের কৌশলগত সম্পদ রক্ষায় জনগণকে সচেতন করতে এবং সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ গণপ্রতিবাদ গড়ে তুলতেই এই কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে।

এদিকে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি-সম্পর্কিত প্রক্রিয়া নিয়ে করা রিট আবেদনের রায় আগামী ৪ ডিসেম্বর দেবেন হাইকোর্ট।

নিউমুরিং টার্মিনাল নির্মিত হয় ২০০৭ সালে, মোট ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বিনিয়োগে। চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের বেশির ভাগ এই টার্মিনাল দিয়ে পরিবহন করা হয়। এটি পরিচালনা করছিল সাইফ পাওয়ারটেক। তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় গত ৬ জুলাই। এরপর নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড এটি পরিচালনার দায়িত্ব পায়।

এই টার্মিনাল পরিচালনায় ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের সমঝোতা স্মারক হয়েছিল। এখন বিদেশি এই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ এগিয়ে নিতে চাইলে তার বৈধতার প্রশ্নে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।

অন্যদিকে লালদিয়া ও কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার জন্য দুই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে সম্প্রতি। লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ এবং ৩০ বছরের জন্য পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে ডেনমার্কের এপি মোলার মায়ের্সক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস। এ ছাড়া ২২ বছরের জন্য পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মেডলগ এসএ।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow