ধান-চালে ভরপুর খ্যাত দিনাজপুরের বোচাগঞ্জে সফলভাবে চাষ হচ্ছে শীতপ্রধান দেশের ফুল টিউলিপ। জনপ্রতিনিধি হাছিনুর রহমান চৌধুরীর বাগানে ফুটেছে হলুদ রঙের টিউলিপ ফুল।
দিনাজপুরে প্রথমবারের মতো এই ফুল ফোটায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ভিড় জমাচ্ছে ওই বাগানে। এতে করে দিনাজপুরে ফুলের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে নিবিড় পরিচর্যার জন্য এখন পর্যন্ত কাউকে টিউলিপ বাগানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনাজপুরের বিরলে কয়েকজন চাষি আছেন যারা গাঁদা ও গোলাপ ফুল চাষ করেন। এর পাশাপাশি নশিপুর এলাকায় চাষ হয় রজনীগন্ধা ফুলের। কিন্তু কোথাও টিউলিপ চাষ হয় না। চলতি বছরে বোচাগঞ্জ উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার হাছিনুর রহমান চৌধুরী তার বন্ধুগাঁও এলাকায় দুই শতাংশ জমিতে পাঁচটি রঙের টিউলিপ ফুলের চারা রোপণ করেন। এই মধ্যে হলুদ রঙের টিউলিপ ফুটেছে। এবার জেলায় বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসে ফুলপ্রেমীদের জন্য নতুন উপহার টিউলিপ পাওয়া যাবে।
জনপ্রতিনিধি হাছিনুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আমার এক ভাতিজা তাসিকুল আলম তপু পঞ্চগড়ে ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করে। সে পঞ্চগড়ে টিউলিপ চাষ করতে দেখে আমাকে উৎসাহিত করে। তার মাধ্যমে যোগাযোগ করে সেখান থেকে প্রতিটি চারা ১০০ টাকা দরে ৫০০ চারা কিনি। সেগুলো পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করি। শীত মৌসুম দীর্ঘায়িত না হওয়ায় টিউলিপ ফোটাতে তেমন একটা কষ্ট হয়নি। চারা রোপণের ১৩ দিন পরেই হলুদ রঙের টিউলিপ ফুল ফুটেছে।’
তিনি বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাকি সব গাছে টিউলিপ ফুটবে। আসছে বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসে টিউলিপ বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।
৫০০ চারা কিনতে হাছিনুর রহমানের খরচ হয়েছে ৫০ হাজার। এর পাশাপাশি বাঁশ, বেড়া, পলিথিন ও আনুষঙ্গিক খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। দুজন শ্রমিক কাজ করছেন।
হাছিনুর রহমান বলেন, ‘এবার পুরোপুরি সফল হতে পারলে আগামীতে এখানে পাঁচ একর জমিতে টিউলিপ চাষ করবো। এরইমধ্যে আমার টিউলিপ বাগান দেখতে মানুষ ভিড় করছেন। তবে পরিচর্যা ও নিরাপত্তার জন্য এখনো কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।’
বাগানে গিয়ে দেখা যায়, হাছিনুর রহমানের দুই শতক জমির বাগানে সারি সারি টিউলিপ গাছ। টিউলিপ ফুটতে শুরু করেছে। ওপরে পলিথিন ও ছোট ছিদ্রযুক্ত নেট দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে সূর্যের আলো। নিচে মাটিতে সানরাইজ, অ্যান্টার্কটিকা হোয়াইট (সাদা), লা বেলা রেড (লাল), স্ট্রং গোল্ডসহ (ইয়েলো) অ্যাড রেম (অরেঞ্জ) এবং মিল্কশেক (লাইট পিংক) প্রজাতির টিউলিপ ফুটবে।
উপসহকারী কৃষি অফিসার মাহাবুব রহমান বলেন, ‘টিউলিপ চাষের বিষয়ে জানতে পেরে আমরা পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। উনাকে কিছু পরামর্শ দিয়েছি। তিনি দক্ষতার সঙ্গেই টিউলিপ চাষ করছেন।’
বোচাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নয়ন কুমার শাহা বলেন, একজন জনপ্রতিনিধি টিউলিপ চাষ করছেন জেনে আমরা আনন্দিত। এরইমধ্যে টিউলিপ ফুল ফুটতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, টিউলিপের প্রায় ১৫০টি জাত রয়েছে। যার মধ্যে বর্তমানে পাঁচ প্রজাতির চাষ হচ্ছে এখানে। আমরা সার্বিকভাবে এটি তদারকি করবো। ভবিষ্যতে টিউলিপের চাষ আরও বাড়ানো হবে।
এমদাদুল হক মিলন/এসআর/জিকেএস