দীর্ঘদিন পর ফেরা তারকারা

14 hours ago 6

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকার বিদায়ের পর বিনোদন অঙ্গনের শিল্পীরাও মুখ খুলতে শুরু করেন। বিগত দিনগুলো কীভাবে পার করতে হয়েছে সে কথা জানাতে গিয়ে কেউ ফেলছেন দীর্ঘশ্বাস, আবেগ তাড়িত হয়ে অশ্রুসিক্ত হয়েছেন কেউ কেউ। বিদায়ী বছরে এটি অন্যতম আলোচিত ঘটনা।

আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসন আমলে সংগীত অঙ্গনের অনেক ভিন্ন রাজনৈতিক মতের তারকা শিল্পী রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারে কোনো অনুষ্ঠান করার সুযোগ পাননি। শুধু তাই নয়, সরকারি কোনো অনুষ্ঠানেও তাদের ঢাকা হয়নি।

বঞ্চিত তারকাদের সেই দলে আছেন নন্দিত কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা। যার গান ছাড়া ঢালিউডে সিনেমা হতো না, সেই শিল্পীকেও অর্ধযুগের বেশি সময় ধরে গান গাওয়া থেকে বিরত রাখা হয়েছিল।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পতনের পর মুখ খোলেন কনকচাঁপা। এতকাল গান ছেড়ে রান্নায় মনোযোগ দিয়েছিলেন তিনি। রীতিমতো রন্ধনশিল্পী হিসেবে নিজেকে পরিচিত করিয়ে ফেলেছিলেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এই শিল্পী। এ কারণে বিগত সরকারের আমলে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাকে।

এ প্রসঙ্গে কনকচাঁপা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি বিগত সাতটি বছর বিভিন্নভাবে নিগৃহীত হয়েছি, তাতে মোটেই ভেঙে পরিনি। আমি সবসময় হাসিখুশি থেকেছি। কখনো কাঁদিনি। কখনো হতাশ হইনি। যত সমস্যা এসেছে, কারো কাছে অভিযোগ করিনি।’

আমেরিকার নিউইয়র্কে দীর্ঘ প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরেছেন ব্লাক ডায়মন্ড খ্যাত সংগীত তারকা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বেবী নাজনীন। ১০ নভেম্বর তিনি ঢাকায় পা রখেন। বিগত ১৬ বছরের আওয়ামী শাসনামলে নিজের পেশাগত কাজকর্মে বারবার বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হয় বেবী নাজনীনের সংগীত জীবন।

বাংলাদেশ বেতার-টিভি-মঞ্চ কোনো মাধ্যমেই বেবী নাজনীন স্বাচ্ছন্দে কাজ করতে পারেননি। এক পর্যায়ে দেশ ছাড়তেই বাধ্য হন বেবী নাজনীন।

এক সময়ের তুমুল জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আসিফ আকবর বিএনপির একনিষ্ঠ সমর্থক। তিনি বিটিভি ও বেতারে ১৬ বছর তার গান গাওয়া হয়নি। ২৪ বছরের ক্যারিয়ারে দেড় দশকের বেশি সময় আওয়ামী সরকারের রোষানলে ছিলেন তিনি। তবে সরকার পতনের পর রাষ্ট্রীয় টিভি-রেডিও থেকে গাওয়ার প্রস্তাব পেলেও তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন।

নব্বই পরবর্তী দশকে দেশের অডিও ইন্ডাস্ট্রির অন্যতম সাড়া জাগানো কণ্ঠশিল্পী মনির খান। চলচ্চিত্রেও ছিল তার পদচারণা। অন্যদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনেও তিনি ছিলেন পরিচিত মুখ। বাংলাদেশ জাতীয়বাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় কমিটিতে ছিলেন তিনি। ভিন্ন রাজনৈতিক মতের হওয়ায় তিনি ছিলেন সরকারি গণমাধ্যমের কালো তালিকাভুক্ত।

এ প্রসঙ্গে মনির খান বলেন, সর্বশেষ আমাকে ২০০৮ সালের পর আর বেতার থেকে ডাকা হয়নি। সে বছরই আমি কাউন্সিলে বিএনপির পদপদবী নিয়ে রাজনীতি শুরু করেছিলাম। সক্রিয়ভাবে রাজনীতি শুরু করার পর শুধু বাংলাদেশ বেতারই নয়, শিল্পকলা একাডেমি, বিটিভিসহ কোনো সরকারি অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকা হয়নি। এখন পর্যন্ত আমাকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে।

রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন সংগীতশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যানসি। ১০ বছরের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন ধরনের নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, নেত্রকোনায় তার বাড়িতে হামলা পর্যন্ত হয়েছে। অনেক আয়োজন থেকে ব্ল্যাকলিস্টেড করে রাখা হয়েছিল তাকে। এমনকি অনেক চূড়ান্ত হওয়া শো বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। একপর্যায়ে দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে সফরে গিয়ে কথাবার্তাও পাকা করে ফেলেছিলেন।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানালেন এই সংগীতশিল্পী। ন্যানসি বলেন, ‘আমি বিএনপির কোনো পদে নেই। এমনকি কোনো পদের প্রত্যাশাপ্রার্থীও নই। আমার আম্মা নেত্রকোনা জেলার জাসাসের সহসভানেত্রী ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে বিএনপির কোনো পদে না থাকলেও একই মতাদর্শের কারণে ব্ল্যাকলিস্টেড ছিলাম। কোনো বিষয়ে আলোচনা করলেই বলা হতো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। নেত্রকোনায় আমার বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে। আমার ভাইকেও হুমকি দেওয়া হয়েছিল।

রাষ্ট্রীয় বেতার ও টিভি চ্যানেলে কোন কোন শিল্পী পরিবেশন করতে পারবেন, আর কে কে পারবেন না, এর রয়েছে একটি অঘোষিত তালিকা। এমনকি রয়েছে একটি ‘কালো তালিকা’ও। সেই কালো তালিকায় নাম ছিল জনপ্রিয় নজরুলসংগীত শিল্পী ফেরদৌস আরার, ধারণা এই শিল্পীর। বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) ও বাংলাদেশ বেতারে গত ১৫ বছর গান গাইতে পারেননি তিনি। অংশ নিতে পারেননি কোনো অনুষ্ঠানে। ভিন্নমতের হওয়ায় বিগত সরকারের আমলে অনেক শিল্পীই সেই কালো তালিকাভুক্ত ছিলেন।

গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আবারও ফেরদৌস আরা বিটিভি ও বেতারের অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। কদিন আগে তার গাওয়া একটি আধুনিক গান প্রচার করা হয়েছে বিটিভিতে। মারজুক রাসেলের লেখা ‘আমি আমার মতোই আছি/ তুমি তোমার মতো থেকো’ ।

এমএমএফ/জেআইএম

Read Entire Article