দুই চিকিৎসকে চলছে পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে নেই পর্যাপ্ত নার্স, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীও নেই। ডায়াগনস্টিক সুবিধার অভাবে রোগীরা দূর-দূরান্ত থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আনতে হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
স্থানীয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৩১ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০০৬ সালে। যদিও এখানে চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ রয়েছে ১০টি, বাস্তবে কর্মরত মাত্র দুজন। হাসপাতালটির ইনডোর ও আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। রোগীর চাপ বেশি থাকায় প্রায় রোগীদের থাকতে হয় হাসপাতালের ফ্লোরে। ওষুধ সংকট, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং শিশুদের জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে। আয়া ও বাবুর্চির দুটি করে পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র একজন। ওয়ার্ডবয়ের দুটি পদের মধ্যে একজন মাত্র কর্মরত। ফলে হাসপাতালের পরিবেশ যেমন অস্বাস্থ্যকর, তেমনি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলাবাসী।
শামীম শেখ নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। আমরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। আমার ছেলেকে পিরোজপুর হাসপাতালে রেফার করেছে। সেখানে যাওয়া আমাদের জন্য অনেক ভোগান্তির। এ হাসপাতালে কোনো শিশু ডাক্তার নেই।’
রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমরা ডা. দেখাতে এসেছি কিন্তু আমরা তেমন সেবা পাচ্ছি না। থাকায় রোগীদের ভিড় বেড়েই যাচ্ছে। হাসপাতালে যে পরিমাণ ডা. থাকার কথা সেই পরিমাণে নেই।’
ইন্দুরকানি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র নার্স বলেন, ‘আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করি রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য, যাতে রোগীরা ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা পায়।
শাহনাজ বেগম বলেন, ‘ইন্দুরকানি হাসপাতালে আমরা রোগী নিয়ে এসেছি। হাসপাতালে ভেতর অপরিষ্কার এবং এখানে ওখানে ময়লা পড়ে রয়েছে। এভাবে থাকলে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে যাবে।’
মেডিসিন বিভাগের ভর্তি রোগী হারুন শেখ বলেন, ‘এখানে নোংরা পরিবেশ এবং চিকিৎসক সংকট রয়েছে। চিকিৎসা সেবাও পরিবেশ বান্ধব না। মেঝেতে তাকালে মনে হয় কোন পরিচ্ছন্নতা কর্মী নেই এখানে। বাথরুমের অবস্থা সব থেকে বেশি খারাপ, সেখানে একজন রোগীর যাওয়ার মতো অবস্থা নেই।’
ইন্দুরকানি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ননিগোপাল রায় জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। ৪২ বিসিএস এ চিকিৎসক পেয়েছিলাম কিন্তু তারা সবাই বিভিন্ন কোর্সে চান্স পাওয়ার কারণে মন্ত্রণালয়ের আদেশে সবাই কোর্সে চলে যায়। বর্তমানে দুজন চিকিৎসক রয়েছেন এ হাসপাতালে। দুজন চিকিৎসক দিয়ে জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ এবং আন্তঃবিভাগ কাজ পরিচালনা করা হয়। যা অত্যন্ত কষ্টকর।’
এ বিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘ইন্দুরকানি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট রয়েছে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আশা করি দ্রুত চিকিৎসক সংকট কেটে যাবে।’
মো. তরিকুল ইসলাম/আরএইচ/জেআইএম