দুই দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ

20 hours ago 3

ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) ভর্তি হন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার নাচনাপাড়া ইউনিয়নের সুভাষ চন্দ্র বোস। ভিড়ে ঠাসা ওয়ার্ডে জায়গা না পেয়ে হাসপাতালের মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। পাশেই বসে আছেন ছেলে সুকান্ত।

সুকান্ত বলেন, ‘বাবাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন, কিন্তু পারব না, টাকাই নেই। এখানেই কেমো থেরাপি দিচ্ছি। যদি ক্যান্সার রোগীদের জন্য নির্মিত নতুন হাসপাতালটা চালু হতো, তাহলে এত কষ্ট পেতে হতো না।’

শেবাচিম হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে ক্যান্সার রোগীদের ইউনিটি রোগীতে ঠাসা। অনেকে জায়গা না পেয়ে বারান্দার মেঝেতে স্যালাইন হাতে শুয়ে আছে, পাশে কাঁদছে সন্তানসহ স্বজনরা। শেবাচিম হাসপাতালে স্বল্প পরিসরে একটি ক্যান্সার ইউনিট থাকলেও নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও জনবল। কেবল রেডিওথেরাপিনির্ভর হয়ে আছে ক্যান্সার ইউনিটটি। ফলে এ অঞ্চলের মানুষকে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ছুটতে হয় রাজধানী ঢাকায়। এতে ব্যয় যেমন বাড়ছে, তেমনি ভোগান্তিও পোহাতে হচ্ছে পদে পদে।

এদিকে বারান্দা থেকে বাহিরে তাকালে চোখে পড়ে আকাশ ঠেলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ১৭ তলা আধুনিক হাসপাতালের ভবন। তবে হাসপাতালটির চালুর নির্ধারিত সময়ের পরও চিকিৎসার আলো এখনো জ্বলেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২০ সালের নভেম্বরে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য বড় স্বপ্ন নিয়ে শুরু হয় বিশেষায়িত ক্যান্সার, কিডনি ও হৃদরোগ হাসপাতালের নির্মাণকাজ। শেবাচিম হাসপাতালের সামনে স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় ১৪ হাজার বর্গফুট জায়গার ওপর ১৭ তলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা ছিল ২০২৩ সালের জুনে ক্যান্সার হাসপাতালের দরজা খুলবে, কিন্তু কাজ এগোয়নি।

জানা গেছে, অর্থ বরাদ্দে জটিলতা আর যন্ত্রপাতি আমদানির সমস্যা থামিয়ে দেয় কাজের অগ্রগতি। প্রথমে মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত, পরে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত। তবু এখনো ২০ শতাংশ কাজ বাকি। প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৩৮ কোটি টাকা। দুই দফা বেড়ে তা দাঁড়িয়েছে ২৩৯ কোটি টাকা। অথচ হাসপাতাল এখনো চালু হয়নি।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপক রিপন তালুকদার বলেন, ‘আমরা কাজের বিল ঠিকমতো পাইনি। বরাদ্দ ছাড়া তো কাজ এগোনো যায় না। তবু সীমিত শ্রমিক দিয়ে কাজ চালাচ্ছি। তাই সঠিক সময়ে কাজ কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি।’

বরিশাল গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী কামাল হোসেন বলেন, ‘অর্থ বরাদ্দে দেরি হয়েছে, যন্ত্রপাতি আমদানিতেও জটিলতা ছিল। তবে আশা করছি, দ্রুত এর সমাধান হবে।’

হাসপাতালের তথ্য মতে, অনকোলজি বিভাগে আছে মাত্র ২৭ শয্যার একটি ক্যান্সার ওয়ার্ড। ২০০২ সালে ক্যান্সার রোগীদের থেরাপি দেওয়ার জন্য ১০ কোটি টাকা দামের একটি কোভাল্ট-৬০ মেশিন স্থাপন করা হয়। ২০১৫ সালে সেই মেশিন অচল হয়ে পড়ে। এটি সচল থাকা অবস্থায় প্রতিদিন গড়ে ৩০০ রোগীকে থেরাপি দেওয়া হতো।

এ ছাড়া জরায়ু ক্যান্সার চিকিৎসার যন্ত্রটিও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। রেডিওলজি মেশিন নেই, রেডিও টেলিথেরাপি মেশিন নষ্ট, তিন বছর আগে স্থাপন করা ব্রাকিথেরাপি যন্ত্রও ঠিকাদার সচল অবস্থায় কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে না দেওয়ায় সেটি ওই অবস্থায়ই পড়ে আছে।

রেডিওথেরাপি বিভাগের চিকিৎসক মো. মহসীন হাওলাদার বলেন, প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে ৩৮ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। গত এক বছরে এখানে চিকিৎসা নিয়েছে চার হাজার ৮০১ জন ক্যান্সার রোগী। আশপাশের জেলা থেকেও রোগী আসছে। জেলা পর্যায়ে চিকিৎসা থাকলে তাদের ভোগান্তি অনেকটা কম হতো।

হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘শুধু দালান দাঁড়ালেই হবে না। যন্ত্রপাতি, লিফট, সাবস্টেশন, সেন্ট্রাল অক্সিজেন, এসব ছাড়া হাসপাতাল চালু করা সম্ভব নয়। নির্মাণকাজ ৮০শতাংশ শেষ হয়েছে। কিন্তু সেই ভবনের সাজসজ্জা, যন্ত্রপাতি স্থাপনের জন্য অনেক সময় প্রয়োজন। কবে নাগাদ সেই কাজ শেষ করা সম্ভব হবে, তা আমরা নিজেরাই অবগত নই।’

শাওন খান/আরএইচ/জেআইএম

Read Entire Article