আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহ অথবা ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে ঐক্যমতে পৌঁছেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ ক্রিয়াশীল ৩০ টি ছাত্র সংগঠন।
গতকাল বুধবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে অন্যান্য ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর বৈঠক শেষে এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের আজকের যে মিটিংটি হয়েছে সেটি হচ্ছে গত সপ্তাহের মিটিংটির ফলোআপ। সেখানে আমরা কয়েকটি বিষয়ে একমত হয়েছি। মোটা দাগে প্রথমত যে বিষয়ে একমত হয়েছি সেটি হচ্ছে, জানুয়ারির লাস্ট উইক অথবা ফেব্রুয়ারি ফাস্ট উইকের মধ্যে আমরা চাই ডাকসুসহ সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুরু হয়ে যাক। কারণ মার্চে রোজা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘসময় ডাকসু নির্বাচন বন্ধ করে রাখা হয়েছিল, পরবর্তীতে ২০১৮ (প্রকৃতপক্ষে ২০১৯) সালে হয়েছিল সেটিও এক ধরনের কন্ট্রোল্ড ইলেকশন ছিল। সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বেই জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ বা ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে হয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের সকল ছাত্র সংগঠন একমত হয়েছে।
আলোচনার বিষয়ে হাসনাত আরও বলেন, '৪ আগস্ট আমাদের ৯ দফার মাধ্যমে ৫ আগস্ট যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল। সেই ৯ দফার মধ্যে ছিল ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।দীর্ঘ এক দশকের বেশির ভাগ সময় ধরে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ একধরনের কর্তৃত্ববাদী রাজনীতির সংস্কৃতি দ্বার পরিচালিত করেছিলো। যেটা একটা প্রজন্মের মধ্যে ছাত্র রাজনীতি নিয়ে এক ধরনের ভীতির সৃষ্টি করেছিলো। আমরা দেখেছি হল দখল করা, সিট বাণিজ্য, ক্যাম্পাসে শোডাউন পলিটিক্স, গেস্ট রুম গণরুম কালচার। শিক্ষকরা যতটুকু শিক্ষকতা করেছে তারচেয়ে বেশি ব্যস্ত থাকত দলীয় রাজনীতি নিয়ে। যার কারণে ছাত্রদের দাবিগুলো প্রাধান্য পায় নি। অতীতের রাজনীতির যে নেতিবাচক দিকগুলো সংস্কার করে কীভাবে লেজুড়বৃত্তিহীন ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদভিত্তিক রাজনীতি চালু করা যায়, যেখানে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যায় সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।'
ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সাহিত্য সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ সিবগা বলেন, ‘আমাদের আরো একাধিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে আমরা তো আসলে একটি নতুন রাজনীতি চাচ্ছি। বিশেষ করে ছাত্র সংগঠনগুলোর মাধ্যমে। আজকে যে ছাত্র সংগঠনগুলো উপস্থিত হয়েছে সেখানে আমরা ঐকমত্য হয়েছি যে, আমরা যে সংস্কার চাচ্ছি, সবাই দেশবাসী এবং ছাত্র সমাজ এই সংস্কারটা আসলে কী রকম হবে সেজন্য আগামী ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে সকল ছাত্রসংগঠন একটি করে প্রস্তাবনা দেবো।’
এদিকে বৈঠকসূত্রে জানা গেছে আলেচনাসভায় ৩০ টির মত ছাত্রসংগঠন উপস্থিত থাকলেও উপস্থিত ছিল না জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ক্রিয়াশীল বাম ছাত্রসংগঠনগুলো।
এবিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির গতকাল রাতে কালবেলাকে বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার প্রকল্প, শহীদদেরকে নিয়ে বিভিন্ন উদ্যোগসহ নানাবিধ কার্যক্রমে ছাত্রদের যুক্ত করার কথা বলেছে। কিন্তু আমরা সবক্ষেত্রে দেখেছি কেবল একটি সুনির্দিষ্ট পক্ষকেই সব কার্যক্রমে যুক্ত করা হচ্ছে। অন্য কোনো সংগঠনের সাথে কোনোপ্রকার আলোচনাও করা হয়নি। মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ছাত্রনেতাদের সাথে আলোচনার নামে কেবল কয়েকজন সমন্বয়কের সাথে আলোচনা করেছেন। এতে জুলাই আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে যে অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় ঐক্যের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তা এখন একটি পক্ষের সংকীর্ণ গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ছাত্রদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে।'
ব্রিফিংয়ে এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে গত মঙ্গলবার রাতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের বৈঠক নিয়ে গণমাধ্যমে যে সংবাদ এসেছে সেটি পুরোপুরি সঠিক নয় জানান হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, গতকাল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যে বৈঠকটি হয়েছে সেটি কিন্তু কোনো ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে ছিলনা। কিন্তু অনেকগুলো গণমাধ্যমে বলা হয়েছে 'ছাত্র সংগঠনগুলোর' সঙ্গে ড. ইউনূসের মিটিং। এতে যে সমস্যাটি হয়েছে- বাংলাদেশে ক্রিয়াশীল ফ্যাসিবাদবিরোধী অনেকগুলো ছাত্র সংগঠন রয়েছে। এই আন্দোলনে যাদের অবদান অনস্বীকার্য। সুতরাং আমরা তাদেরকে বাদ দিয়ে যদি আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মিটিং করতে যাই; এই জিনিসটি খুবই দৃষ্টিকটু। কারণ এই মিটিংয়ের এজেন্ডা কিন্তু ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে ড. ইউনূস বসেননি।
'যেহেতু উনি (ড. ইউনূস) বলেছেন যে বিভিন্ন অংশীদারদের সঙ্গে উনি বসা অব্যাহত রাখবেন, কিছুদিন পর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে বসবেন। ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে উনি আলাদা বসবেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে উনি আলাদা বসছেন। গতকাল (মঙ্গলবার) জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যাদেরকে ডিবি তুলে নিয়ে গিয়েছিল এবং বর্তমানে যারা নেতৃত্বে রয়েছে, আমরা রিসেন্ট কনসার্নগুলো জানাতে তার কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু মিডিয়াতে যেটি এসেছে সেটি হচ্ছে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে' বলেন হাসনাত।
এবিষয়ে ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, আজকে প্রায় ৩০টি ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা এসেছিলেন, যা গত মিটিংয়ের চেয়ে বেশি। আমাদের এখানে কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হতে পারেননি। তারা জানিয়েছেন যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল ছাত্র সংগঠন নিয়ে একটি আলাদা প্রোগ্রামে থাকার কারণে তারা সেখানে গিয়েছেন। তবে তারা এই ইস্যুতে আমাদের সঙ্গে বসবেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।