অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ নেওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ের পরিচালক খান মো. মীজানুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের সই করা এক প্রজ্ঞাপনে এ আদেশ জারি করা হয়।
এর আগে গত রোববার ওই পরিচালককে বদলি করে দুদকের এনআইএস এবং উন্নয়ন সহযোগী ও সমন্বয় (দেশীয়) বিভাগের পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেহেতু খান মো. মীজানুল ইসলামের বিরুদ্ধে কমিশনের অনুসন্ধান-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এভারকেয়ার হাসপাতালের পরিচালক মাহাবুবুল আনামের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণের একটি বিষয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিলক্ষিত হয়। এরপর কমিশনের নির্দেশে গোপন অনুসন্ধানে দেখা যায়, খান মো. মীজানুল ইসলাম ১৭ আগস্ট এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ২০ আগস্ট চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেন। কিন্তু চিকিৎসা বাবদ বকেয়া দুই লাখ ৪ হাজার ১৩২ টাকা তিনি নিজে পরিশোধ না করে, কমিশনের অনুসন্ধান-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মাহাবুবুল আনামের গ্যারান্টির ভিত্তিতে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেন।
- আরও পড়ুন
‘গায়েবি গ্যারান্টর’ বানিয়ে ব্যবসায়ীকে ফাঁসানোর অভিযোগ
দুর্বল পাঁচ ব্যাংক যেন গ্রাহকের দুঃস্বপ্ন
দুদক জানায়, অভিযোগের গুরুত্ব ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিবেচনায় গত ৪ সেপ্টেম্বর কমিশনের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমন কমিটির ০৩/২০২৫ নং সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। সভায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ অনুসারে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এ আদেশ জারির তারিখ থেকেই কার্যকর হবে। বরখাস্তকালীন তিনি প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী খোরাকি ভাতা পাবেন।
এর আগে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের গত ২ সেপ্টেম্বর খান মো. মীজানুল ইসলামের চিকিৎসা খরচ-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেন। সেই পোস্টে তিনি হাসপাতালের বিল পরিশোধের নথিপত্রও জুড়ে দিয়ে লেখেন, ‘প্রশ্ন হলো দুদকের মতো একটি সংস্থার পরিচালক, যার অধীন বিভাগ অনুসন্ধান করছে এমন এক ব্যক্তির কাছ থেকে এ ধরনের সুবিধা গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে কি তা কোনোভাবে নৈতিক হতে পারে? আর যদি তা না হয়, তাহলে দুর্নীতি দমনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারাই যদি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দোসর হয়ে যায়, তখন কেন এদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না?’
জুলকারনাইন সায়েরের ওই পোস্টের পর তাকে বদলি করা হয়। এর একদিন পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলো।
গত ২৭ জানুয়ারি তিন বিমানবন্দরের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ৮১২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে আলাদা চারটি মামলা করে দুদক। এর মধ্যে দুই মামলার আসামির তালিকায় ছিলেন মাহাবুবুল আনাম।
এসএম/কেএসআর